ছোলা, বেগুনি, হালিমে কি শুধুই ক্ষতি, পুষ্টিগুণ আছে কী কী

পবিত্র রমজানে ইফতারে একেক দেশে একেক ধরনের খাবার গ্রহণের চল রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ইফতারির তালিকায়ও কিছু খাবার সব এলাকাতেই কমবেশি দেখা যায়। এসব খাবারে নানা রকম গুণ আছে। অনেকে তাই এসব খাবার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। আবার বিভিন্ন কারণে অনেক অসুস্থ ব্যক্তি সব খাবার খেতে পারেন না। অনেক সময় চিকিৎসকও খেতে নিষেধ করেন। তাই জটিলতা এড়াতে প্রচলিত খাবারগুলোর উপকারিতার পাশাপাশি কোন কোন ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সেটা জানা থাকা ভালো।

দই চিড়া

দইচিড়া: দইচিড়া সহজে পরিপাক হয়। ক্লান্তিভাব কাটিয়ে রোজাদারকে চাঙা হতে সাহায্য করে। খাবারটি শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে। দইচিড়া পেট ঠান্ডা রাখে, যা একজন রোজাদার ব্যক্তির জন্য খুব উপকারী। চিড়ায় পটাশিয়াম ও সোডিয়াম কম থাকায় কিডনি রোগীদের জন্যও উপকারী। এ ছাড়া চিড়ায় আঁশের পরিমাণ কম থাকায় ডায়রিয়া, ক্রনস ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, অন্ত্রের প্রদাহ এবং রোগ প্রতিরোধে উপকারী। তবে চিড়ায় যথেষ্ট শর্করা আছে, তাই ডায়াবেটিস থাকলে বেশি খাওয়া যাবে না। অপর দিকে দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক, যা গাট হেলথ ও অস্টিওপরোসিস রোধে উপকারী।

ইফতারে খেজুর জনপ্রিয় ফল
ছবি: পেক্সেলস

খেজুর: রোজায় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে অনেকের পানি ও লবণের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। যার ফলে মাথাব্যথা, পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আর পটাশিয়াম ও সোডিয়াম থাকায় সহজেই এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারে খেজুর। আয়রন ও ক্যালসিয়াম ভালো থাকায় শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্যও খেজুর উপকারী। অনেকের মিষ্টির প্রতি আসক্তি থাকে। তারা খেজুর, বাদাম, দুধ ইত্যাদি ব্যবহার করে মিষ্টি খাবার কিংবা খেজুরের চিনি ব্যবহার করে খেতে পারেন। তবে খেজুরের পরিমাণ যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। ডায়াবেটিস রোগীর একটি বা দুটির বেশি খেজুর না খাওয়া ভালো।

ইফতারিতে ছোলা জনপ্রিয় সারাদেশে

ছোলা: ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। উচ্চমাত্রার প্রোটিন, পর্যাপ্ত ফাইবার ও পটাশিয়াম থাকে বলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ রক্তচাপ ও খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। অপর দিকে যাদের কিডনির সমস্যা ও ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আছে, তারা ছোলা কম খাবেন। তেল–মসলা কম দিয়ে ছোলা তৈরি করতে পারলে ভালো। কারা ছোলা খেতে পারবেন না, সেটা একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নিতে পারেন।

ইফতারি হিসেবে বেগুনি প্রতিদিন খাওয়া ভালো না

বেগুনি: এটি ডুবো তেলে ভাজা হয়। তাই অধিক তেল লাগে। তেল ভাজার পর ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট হয়ে যায়। তাই ইফতারে বেগুনি, বড়াজাতীয় খাবার খেতে চাইলে যেকোনো একটি পদের এক থেকে দুটি অল্প তেলে ভেজে খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন বেগুনি না খেয়ে অন্য সবজি দিয়ে বানানো পাকোড়া খেতে পারেন। যাঁরা আলসার ও গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা অবশ্যই ডুবো তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলবেন। তেলে ভাজা খাবার রোজ না রেখে সপ্তাহে এক–দুই দিন রাখুন।

চটপটিতে ডাল থাকায় পুষ্টি মিলবে
ছবি: প্রথম আলো

ডালজাতীয় খাবার: রোজায় ডাল ও ডালের তৈরি খাবার প্রতিদিন খাওয়া হয়। যেমন বেসন দিয়ে বড়া, ডালের বড়া, হালিম, চটপটি ইত্যাদি খাবারই ডালের তৈরি। এগুলো এক দিনে সব না খেয়ে একেক দিন একেক আইটেম রাখা ভালো। এতে খাবারে বৈচিত্র্য যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যাও দেখা দেবে না। এ ছাড়া বেসনের পরিবর্তে চালের গুঁড়া, ময়দা ব্যবহার করে খেতে পারেন। যদি কারও কিডনির রোগ, উচ্চমাত্রার ইউরিক অ্যাসিড, হজমজনিত সমস্যা থাকে তাঁরা ডালের তৈরি খাবার কম খাবেন।

হালিম সুষম খাবার হিসেবে পরিচিত
ছবি : সুমন ইউসুফ

হালিম: হালিমে চাল, ডাল ও গমের মিশ্রণ থাকায় এটি সুষম খাবার। মাংসের কারণে প্রোটিনের পরিমাণও বেড়ে যায়। এ ছাড়া ভিটামিন মিনারেলস ভালো পরিমাণ আছে। যাঁরা ডালজাতীয় খাবার খেতে চান না, তাঁদের জন্য হালিম একটি ভালো খাবার। স্বাদ বাড়াতে কৃত্রিম কোনো মসলা ব্যবহার না করাই ভালো। তবে কারও অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে হালিম না খাওয়াই ভালো।

অল্প সময়ে দুর্বলতা কাটিয়ে শক্তি বাড়ানোর এক আদর্শ খাবার খিচুড়ি।
ছবি : নকশা

নরম খিচুড়ি: নরম খিচুড়ি সহজেই হজমযোগ্য। সবজি যোগ করলে পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়। খিচুড়ি একটি সুষম খাবার। এতে শর্করা, প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। পরিবারে যারা বয়স্ক, শিশু আছেন তাদের জন্য নরম খিচুড়ি আদর্শ খাবার। নরম খিচুড়ি অবশ্যই কম তেল মসলা দিয়ে রান্না করবেন। গ্যাসের সমস্যা থাকলে মসুরের পরিবর্তে মুগডাল ব্যবহার করা ভালো।

তরমুজের শরবত
ছবি: প্রথম আলো

শরবত: পানি ও খনিজের ঘাটতি পূরণে শরবত একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। তবে রোজা রেখে অনেকেই বেশি চিনিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত ফলের জুস পান করেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। পরিবর্তে বাসায় কম চিনি লবণ দিয়ে শরবত বানালে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যেমন লেবুর শরবত, ডাবের পানি, ফলের সালাদ, ফলের জুস। ফলের মধ্যে ভিটামিন, মিনারেলস ভালো থাকায় শরীরের ক্লান্তিভাব, দুর্বলতা কাটাতে দ্রুত কার্যকরী। অ্যাসিডিটি সমস্যা থাকলে টক ফলের শরবত না খাওয়াই ভালো।