এই চা–কে কেন বোবা চা বলা হয়

বোবা চা গরম বা ঠান্ডা—দুইভাবেই পরিবেশন করা যায়
ছবি: পেক্সেলস

স্বচ্ছ গ্লাসভর্তি উজ্জ্বল রঙের পানীয়। নিচের দিকে ভেসে বেড়াচ্ছে গাঢ় রঙের ছোট ছোট বল। একটু ভিন্ন ধারার এই পানীয়টির নাম বোবা বা পার্ল টি। জেন-জি এবং আলফাদের কাছে প্রিয় এই পানীয় অনেকের কাছে বাবল টি নামেও পরিচিত।
বাবল বা বোবা টি কী
মূলত চা, দুধ আর বোবা বা পার্ল—এই তিন উপকরণের সমন্বয় হচ্ছে বাবল বা বোবা টি। দুধে ব্ল্যাক টি বা গ্রিন টি মিশিয়ে সঙ্গে সিরাপ বা ফলের রস দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। তৈরিতে ঠান্ডা চা ব্যবহৃত হলেও পানীয়টি গরম বা ঠান্ডা—দুইভাবেই পরিবেশন করা যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঠান্ডাই খাওয়া হয়। এই চায়ে বিশেষত্ব যোগ করে ছোট ছোট নরম ও মিষ্টি বল, যা বোবা বা পার্ল নামে পরিচিত। ট্যাপিওকা স্টার্চ দিয়ে পার্লগুলোর তৈরি করা হয়। ট্যাপিওকা বা শিমুল আলুর শুকনো গুঁড়াকে বলা হয় ট্যাপিওকা স্টার্চ।  

আরও পড়ুন

যেভাবে এল এই চা
১৯৮০-এর দশকে তাইওয়ানে বিশেষ এই চায়ের উৎপত্তি। গুগল সার্চ করে এর দুটি ইতিহাসের কথা জানা যায়। প্রথমটি বলছে, বোবা টির আবিষ্কারক তাইওয়ানীয় ব্যবসায়ী তু সোং-হো। ১৯৮৬ সালে তাইওয়ানের ইয়ামুলিয়াও বাজারে স্বচ্ছ সাদা ট্যাপিওকা বল বিক্রি হতে দেখেন তিনি। সেগুলো রান্না করে দুধ চায়ে যোগ করে দেখেন চায়ের সঙ্গে বলগুলো চিবিয়ে খেতে বেশ। তিনি এই চায়ের নাম দেন ‘পার্ল মিল্ক টি’। নতুন ধরনের এই চা বিক্রি করতে হ্যানলিন টি রুম নামে একটি দোকান দেন সোং হো। সুস্বাদু হওয়ায় দ্রুতই বিখ্যাত হয়ে ওঠে এই চা। তাইওয়ানজুড়ে এখন হ্যানলিনের ৪০টিরও বেশি শাখা রয়েছে।  
অন্য একটি বিবরণে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে জাপানের আইস কফি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ঠান্ডা দুধ চা বিক্রি করতে শুরু করেন আরেক তাইওয়ান ব্যবসায়ী লিউ হান-চিহ। তাঁর দোকানের নাম চুন শুই ট্যাং। ১৯৮৭ সালে একদিন দোকানের এক কর্মী লিন সিউ-হুই নিজের মিষ্টান্ন থেকে মজা করে কিছু ট্যাপিওকা বল চায়ের গ্লাসে দিয়ে দেন। খেতে ভালো লাগায় একই রকম চা গ্রাহকদেরও খাওয়ান। সবাই পছন্দ করায় ট্যাপিওকা বল দিয়ে চা তৈরি করতে শুরু করেন তাঁরা। ব্যাপার দেখে শুই ট্যাং এই চায়ের আনুষ্ঠানিক নাম দেন পার্ল টি, যাকে আমরা চিনি বাবল বা বোবা টি নামে।
ধীরে ধীরে তাইওয়ানের আশপাশের দেশ থাইল্যান্ড, জাপান, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই চা।

গত বছর বিশ্বব্যাপী বোবা টি শিল্পের মূল্য ছিল প্রায় ২ দশমিক ৪ থেকে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এ বছর বেড়ে হয়েছে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিশেষ এই চায়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, আগামী কয়েক দশকে তা কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গত কয়েক বছরে বোবা টির জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের কয়েকটি রেস্তোরাঁ। এদের মধ্যে একেবারে খাঁটি তাইওয়ান ঢঙে বোবা টি বিক্রি করছে চা মিচি, চা টাইম, কই তে এবং গট চা। আমাদের দেশেও এক গ্লাস বোবা টি সাধারণত ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। ইন্টারনেট থেকে রেসিপি নিয়ে নিজেরাও এই চা তৈরি করতে পারেন।  

বোবা টি অনেকের কাছে বাবল টি নামেও পরিচিত
ছবি: পেক্সেলস

জনপ্রিয়তার কারণ
সাধারণত ব্ল্যাক বা গ্রিন টি দিয়ে তৈরি করা হয় বোবা টি। এ দুই ধরনের চা-ই স্বাস্থ্যকর। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর গ্রিন টি মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, ক্যানসার এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে, বিপাকে সাহায্য ছাড়াও ওজন হ্রাস করে। ব্ল্যাক টি খেলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে, হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়, মুখের স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং রক্তচাপ কমে।
তবে ব্ল্যাক টিতে থাকা ক্যাফেইন স্নায়ু উজ্জীবিত করে। তাই ঘুমের সময় বা আগে ব্ল্যাক টি এড়িয়ে চলা ভালো।
শিমুল আলু থেকে তৈরি ট্যাপিওকা স্টার্চ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আঁশের একটি ভালো উৎস। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়, রক্ত সঞ্চালন সহজ করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে কম ক্যালরি ছাড়াও ভিটামিন সি, থায়ামিন, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাশিয়ামের মতো নানা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। তাই অনেকেই মনে করেন বোবা টি একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়।
তবে বোবা টিতে ব্যবহৃত চিনি বা সিরাপ ওজন বৃদ্ধি করে। অতএব এটি আপনার জন্য ভালো না খারাপ, সেটি আসলে নির্ভর করে এতে ব্যবহৃত উপকরণের ওপর। তাই স্বাস্থ্যকর বোবা টি খেতে চাইলে অতিরিক্ত চিনি বা সিরাপ এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে যেকোনো মিষ্টি ফল, স্টেভিয়া ইত্যাদি প্রাকৃতিক মিষ্টি উপকরণ দিয়ে বানানো বোবা টি পান করুন। যেকোনো পুষ্টিকর উপকরণ যোগ করলে বোবা চা একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর পানীয় হতে পারে।

সূত্র: ভাই গর ইট আউট, সিএনএন, ব্রিটানিকা

আরও পড়ুন