ঈদের ছুটিতে ফ্রিজ নষ্ট হলে...

ফ্রিজ নষ্ট হলে ভেতরে রাখা সবকিছুই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে
ছবি: প্রথম আলো

গেল ঈদে ভালো ঝামেলাতেই পড়েছিলেন জাহানারা ইয়াসমিন। পরিবার নিয়ে ঢাকার মিরপুরে থাকেন এই গৃহিণী। ঈদের আগে কোরবানির আয়োজন নিয়ে সবাই যখন ব্যস্ত, সেই সময় রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসর নষ্ট হয়ে যায়। ঈদের আগের দিন দুপুর বেলা প্রথম রেফ্রিজারেটর নষ্টের বিষয়টি বুঝতে পারেন। দ্রুত সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করেন। ঈদের পরে কারিগর পাঠিয়ে ঠিক করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেয় তারা! তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় মাংস রাখব কোথায়—এ নিয়ে মহা ভাবনায় পড়ে যাই। ফ্রিজ সারিয়ে দেবে, হাতের কাছে এমন কোনো কারিগরও ছিলেন না। আত্মীয়স্বজনের ফ্রিজে কোরবানির মাংস রেখে সে যাত্রা কোনোমতে বিপদ থেকে রেহাই পাই।’ জাহানারা ইয়াসমিনের মতো অনেকেই ঈদের সময় রেফ্রিজারেটরের সমস্যায় পড়েন।

হুট করে ফ্রিজ নষ্ট হলে যা করবেন

বলে কয়ে তো আর ফ্রিজ নষ্ট হয় না। রন্ধনশিল্পী আফরোজা নাজনীন বলেন, ‘ফ্রিজ নষ্ট হলে ভেতরে রাখা সবকিছুই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। রান্না করা খাবারের সঙ্গে কাঁচা মাছ-মাংস ও সবজি নষ্ট হয়ে যায়। যখন বুঝবেন ফ্রিজ কাজ করছে না, তখনই ডিপ ফ্রিজের সবকিছু বের করবেন না। ফ্রিজ বন্ধ বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও ডিপ ফ্রিজ অনেকক্ষণ ঠান্ডা থাকে। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছাড়া ডিপ ফ্রিজে তাপমাত্রা ঠিক থাকে। তাই দরজা না খুললে অনেকটা সময় ফ্রিজের মাছ-মাংস ঠিক থাকবে। কোরবানির ঈদে মাংস সংরক্ষণ একটা বড় বিষয়।

ফ্রিজ নষ্ট হলে, ডিপ ফ্রিজে রাখা মাংস নির্ধারিত সময়ের পরে বের করে আনুন
ছবি: প্রথম আলো

ফ্রিজ নষ্ট হলে মাংস সংরক্ষণ করা কঠিন হতে পারে। মাংস ভুনা করে রেঁধে সংরক্ষণ করতে পারেন। আবার মাংসে শর্ষের তেলে মেখে আচারি মাংসের মতো করে সংরক্ষণ করতে পারেন।’ হলুদ মেখেও মাংস সংরক্ষণ করা যায়। মাংস রোদে শুকিয়েও সংরক্ষণ করতে পারেন। ফ্রিজ নষ্ট হলে রান্না করা খাবার দ্রুত বের করে আনুন। একটু ঠান্ডা কমলে তখন খাবার গরম করে রাখবেন। একবার গরম করলে ৭–৮ ঘণ্টা পর্যন্ত খাবার ভালো থাকে। এর মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে গরম করা খাবার।

ফ্রিজে রাখা সবজি বের করে এমনভাবে মুছে নিতে হবে যেন পানি না থাকে। তারপরে পুরোনো সংবাদপত্রে মুড়িয়ে পলিব্যাগে রাখুন। হাঁস বা মুরগির ডিম থাকলে পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। ফ্রিজে রাখা ভাতে খাওয়ার পানি দিয়ে পান্তা বানিয়ে ফেলুন।

হলুদ, মরিচ, আদা ও রসুন দিয়ে মাংস জ্বাল দিয়ে রাখতে পারেন
ছবি: প্রথম আলো

কাচ্চি, পোলাও কিংবা বিরিয়ানি থাকলে অধিক তাপে গরম করে দ্রুত খেয়ে ফেলতে হবে। ডিপ ফ্রিজে রাখা মাছ ও মাংস নির্ধারিত সময়ের পরে বের করে আনুন। বরফ গলে গেলে ধুয়ে ফেলুন। তারপর হলুদ মেখে রাখুন। ইচ্ছা করলে ডুবো তেলে কড়া করে ভেজে রাখতে পারেন মাছ। পরে ভাজা মাছ বাতাস ঢুকবে না এমন বাক্সে সংরক্ষণ করুন। আগের মাংস থাকলে ভুনা করে রান্না করুন। দিনে দুবার ভালো করে জ্বাল দিলে মাংস বেশ কয়েক দিন ভালো থাকবে। হলুদ, মরিচ, আদা ও রসুন দিয়ে মাংস জ্বাল দিয়ে রাখতে পারেন।

অনলাইন সেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেবা এক্স ওয়াই জেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলমুল হক বলেন, ‘ঈদের সময় সাধারণত দোকানভিত্তিক সার্ভিস সেন্টার বন্ধ থাকে। কারিগরেরা ছুটিতে থাকেন। অনেকেই এ সময়ে ভোগান্তিতে পড়েন। ঈদের সময় ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেলে সারানোর ব্যবস্থা করে দেব আমরা। কয়েক বছর ধরেই ঈদের ছুটিতে আমরা কারিগর ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছি। ঈদের তিন-চার দিনের ছুটিতে কল সেন্টারে কল করে বা অ্যাপের মাধ্যমেও আমাদের সেবা নেওয়া যাবে।’