স্টারে দিনে কত প্লেট কাচ্চি বিক্রি হয়, জানেন কি

কাচ্চি যেভাবেই রান্না হোক, খেতে মন্দ লাগে না।
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ

কাচ্চিপ্রেমিকেরা মূলত তিনটি দলে বিভক্ত। প্রথম দলভুক্তদের কাচ্চিপ্রেমিক না বলে বলা যেতে পারে কাচ্চিপাগল। দিন-রাত তাঁরা কাচ্চির কথা ভাবেন। যেখানেই যান না কেন, হোক স্টার, সুলতান’স ডাইন, কাচ্চি ভাই-ভাবি কিংবা কোনো এলাকার দোকান, কাচ্চিই তাঁদের প্রথম এবং শেষ পছন্দ। বিনা মূল্যে দিলেও তাঁরা অন্য খাবার খাবেন না। দ্বিতীয় দলভুক্ত ব্যক্তিরা দোকানের কাচ্চির চেয়ে বিয়েবাড়ির কাচ্চির স্বপ্নই দেখেন বেশি। বিয়ের দাওয়াত না থাকলে বাধ্য হয়ে দোকানের কাচ্চি খান। তৃতীয় দলভুক্ত ব্যক্তিরা খোঁজেন নিরাপদ বিকল্প। তাঁদের ভাষ্যে, কাচ্চি যেভাবেই রান্না হোক, খেতে মন্দ লাগে না। তাঁদের এই নিরবচ্ছিন্ন কাচ্চিপ্রেম মুগ্ধ হওয়ার মতোই।

এই তিন দলের মানুষকেই একই প্রশ্ন করলাম, কোথাকার কাচ্চি সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়েছে? বেশির ভাগ কাচ্চিপ্রেমীরই উত্তর, স্টার হোটেল। কিন্তু কেন? কেউ বলেন, ‘দামে কম, মানে ভালো।’ আবার কেউ বলেন, ‘হঠাৎ কাচ্চি খেতে ইচ্ছা হলে স্টারে ছাড়া অন্য কিছু মাথায় আসে না।’

হঠাৎ কাচ্চি খেতে ইচ্ছা হলে স্টার কাবাব ছাড়া অন্য কিছু মাথায় আসে না।
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ

প্রতিদিন কত প্লেট কাচ্চি বিক্রি করে স্টার হোটেল? আর কেনই–বা কাচ্চিপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে এই রেস্তোরাঁ? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েছিলাম ঢাকার ধানমন্ডি ২-এর স্টারে। ঢাকার ১১টি শাখার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়, জানালেন ম্যানেজার আনারুল ইসলাম আনোয়ার। ২০০২ সাল থেকে স্টার হোটেলের সঙ্গে আছেন তিনি। স্টার হোটেলের শাখা আছে ঢাকার সাত মসজিদ রোড, জনসন রোড, এলিফ্যান্ট রোড, বনানী ১৭ নম্বর রোড, কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডি ৮, লালমাটিয়া, জয় কালী মন্দির রোড, ঠাঁটারীবাজার, ফার্মগেট ও গুলিস্তানে।

প্রতিদিন আনুমানিক কত প্লেট কাচ্চি বিক্রি হয়, জানতে চাইলে আনারুল ইসলাম আনোয়ার বলেন, ‘একেক শাখায় বিক্রি একেক রকম। তবে এখানে প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ প্লেট কাচ্চি পরিবেশন করা হয়।’ রান্নার ক্ষেত্রে চাল ও মাংসের হিসাবটাও বুঝিয়ে বললেন আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘১ কেজি চালে ৮ টুকরা মাংস দেওয়া হয়।’ কাচ্চি রান্নার জন্য প্রতিটি শাখায় একজন অভিজ্ঞ মূল বাবুর্চি থাকেন। ১১টি শাখায় এমন ১১জন বাবুর্চি একই রন্ধনপ্রণালি মেনে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের জন্য কাচ্চি রান্না করে যাচ্ছেন।

স্টারের নেই কোনো বাহ্যিক চাকচিক্য
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ

স্টার হোটেলের ওয়ারী শাখা ‘হোটেল সুপার’-এর ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম জানান, সেখানে প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় ৮০০ প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি। জনসন রোড শাখায় কাচ্চি বিক্রি হয় প্রায় এক হাজার প্লেট, জানান সেখানকার ম্যানেজার কমল চন্দ্র। তিনি বলছিলেন, ‘কোনোটাতেই আসলে শ খানেক প্লেটের কম কাচ্চি বিক্রি হয় না।’ কারওয়ান বাজার শাখার ম্যানেজার জয় জানান, সেখানে প্রতিদিন কাচ্চি বিক্রি হয় প্রায় এক হাজার প্লেট। এ ছাড়া প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৩০০ প্লেট কাচ্চি পরিবেশিত হয় বনানী শাখায়, বলেন সেখানকার ম্যানেজার সেলিম। অন্য নতুন উঠতি রেস্তোরাঁগুলোর মতো স্টারের নেই কোনো বাহ্যিক চাকচিক্য। আনারুল ইসলাম বলছিলেন, ‘সাজসজ্জার চেয়ে খাবারের মান ঠিক রাখাটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তবে খুব শিগগির হয়তো স্টার হোটেলকেও সাজিয়ে তোলা হবে।’