ওজন কমাবে আমিষ সালাদ

আমিষজাতীয় খাবার এবং শাকসবজি দিয়ে তৈরি সালাদ খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়

সালাদে প্রানিজ উপকরণের ব্যবহার স্বাদে নিয়ে আসবে ভিন্নতাছবি: নকশা

সালাদ মানেই কেবল কাঁচা, সেদ্ধ কিংবা আধা সেদ্ধ সবজির ‘ম্যাড়মেড়ে’ সমন্বয় নয়। রসনার তৃপ্তি বজায় রেখেও তৈরি করা যায় সালাদ। আমিষ উপকরণ মিলিয়েও হতে পারে সালাদ। এতে বাড়ে সালাদের স্বাদ ও পুষ্টির মান। তবে উদ্ভিজ্জ আমিষের চেয়ে প্রাণিজ আমিষ বেশি ভালো। কেবল মাছ বা মাংসই নয়; ডিম, টক দই, সাদা সস কিংবা মেয়নেজও প্রাণিজ আমিষের উৎস হিসেবে বিবেচ্য। রাজমা, মটরদানা, ছোলা বুট, ডাবলি, নানা ধরনের বাদাম, শিমের বীজের মতো উদ্ভিজ্জ আমিষও কিন্তু শরীরের নানা কাজে লাগে। এ ছাড়া এগুলো থেকে আমিষের পাশাপাশি ভিটামিন ও খনিজ লবণও পাওয়া যায়।

কেন খাবেন আমিষ সালাদ?

ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান বলেন, ‘আমিষ কিন্তু খাওয়া চাই রোজ। অনেক শিশু মাছ খেতে চায় না। বড়রাও অনেক সময় একই ধরনের পদ খেতে খেতে একঘেয়েমিতে ভোগেন। খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য আনতে মুখরোচক আমিষ সালাদ তৈরি করতে পারেন।’

অতিরিক্ত তেল-মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে পেটে অস্বস্তি হতে পারে, বুকে জ্বালাপোড়া বোধ করতে পারেন। আমিষ সালাদ পেটের জন্যও ভালো।

দারুণ একটা আমিষ সালাদ মূল খাবারকেও (মেইন কোর্স) আকর্ষণীয় করে তোলে।

কাজের বিরতিতে ডালপুরি-শিঙাড়ার দারুণ বিকল্প হতে পারে আমিষ সালাদ।

সালাদে থাকতে পারে উদ্ভিজ্জ আমিষ বা প্রানিজ আমিষের উপকরণ
ছবি: নকশা

ওজন কমাতে

ওজন কমাতে খাদ্যতালিকা মেনে চলেন অনেকেই। অনেকে আবার ওজন ঠিক থাকলেও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হিসেবে পুষ্টিমান বিবেচনা করে খাদ্যতালিকা ঠিক করে নেন। শর্করাজাতীয় খাবার কম খাওয়াটাই স্বাস্থ্যকর (তবে কোনো উপাদান একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না। আমিষ ও অন্যান্য উপকরণে তৈরি সালাদে মিটবে খিদে, পুষ্টিও পাওয়া যাবে ঠিকঠাক। কাঁচা শাকসবজিতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে প্রচুর। সালাদে এগুলোও যোগ করে নিতে পারেন। সালাদ কখনোই মূল খাবারের (মেইন কোর্স) বিকল্প নয়। আমিষযুক্ত সালাদ খেলে পেট ভরে যায়। কোনো বেলার খাবারে যদি শর্করাজাতীয় উপাদান কম রেখে আমিষ এবং সবজি দিয়ে তৈরি সালাদ যোগ করা হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে, তাহলে একদিকে যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, তেমনি বেশ খানিকটা সময়ের জন্যই আর ‘টুকিটাকি’ খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে ক্যালরি গ্রহণ সীমার মধ্যেই থাকে। আমিষজাতীয় খাবার এবং শাকসবজি দিয়ে তৈরি সালাদ তাই তাঁদের জন্যও ভালো, যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান।

আমিষ সালাদের রেসিপি

শম্পা শারমিন খানের কাছ থেকেই জেনে নেওয়া যাক আমিষ সালাদ তৈরির নানা উপায়।

ডিম সেদ্ধ করে কিউব বা বড় আকারে কেটে নিয়ে সঙ্গে লবণ, গোলমরিচ, লেটুস পাতা, সবুজ বা কালো জলপাই এবং জলপাই তেল যোগ করে হতে পারে সহজ একটি সালাদ।

বড় মাছের (রুই, কাতল প্রভৃতি) পিঠের অংশ (এ অংশে তেল কম থাকে) দিয়ে সালাদ বানাতে পারেন। সালাদের জন্য হালকাভাবে সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ করার সময় মাছের গোলাপি আভা যখন চাপা সাদা বা ক্রিম রঙের হয়, তখনই নামিয়ে নিন। সেদ্ধ করার সময়ই লবণ দিন। আদাও দিতে পারেন। কিংবা চাইলে অল্প তেলে হালকাভাবে ভেজে নিতে পারেন। টুনা বা কোরাল মাছেরও সালাদ হতে পারে। মাছের গন্ধ দূর করতে লেবুর রস যোগ করুন। সালাদে পুদিনাপাতা, লেটুসপাতা, কাজুবাদাম প্রভৃতি উপকরণ দিতে পারেন। কিংবা কেবল কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজকুচি দিয়ে আলতোভাবে মিশিয়ে নিলেও সালাদ হয়ে যাবে।

মুরগির সালাদ
ছবি: নকশা

লবণ, আদা-রসুন দিয়ে সেদ্ধ করা মুরগির মাংস (হাড় ছাড়া), ছোট কিউব করে কাটা সেদ্ধ আলু, সবুজ আপেল (কাঁচা, কিউব), মেয়নেজ ও গোলমরিচ দিয়ে সালাদ তৈরি করতে পারেন। টুকরা করা উপকরণগুলো একই আকারের হলে দেখতে ভালো দেখাবে।

কেবল উদ্ভিজ্জ আমিষ দিয়ে সালাদ করলে সঙ্গে প্রচুর টমেটো, গাজর, লেবুর রস, পুদিনাপাতা, লেটুসপাতা, ধনেপাতা যোগ করতে পারেন। স্বাদও বাড়বে, দেখাবেও রঙিন।

পানি ঝরিয়ে নেওয়া টক দই হতে পারে মেয়নেজের দারুণ বিকল্প। রায়তাও প্রাণিজ আমিষের উৎস।

টক দই আর নাশপাতি দিয়ে সালাদ করতে পারেন।

সমপরিমাণ টক দই আর মিষ্টি দই পানি ঝরিয়ে নিয়ে তাতে সেদ্ধ আলু আর আপেল, গোলমরিচ দিয়ে সালাদ করতে পারেন (চিনি ছাড়া)।

কেবল কাঁচা ছোলার সঙ্গে অল্প করে আদা কুচি, লবণ আর চিনি মিশিয়েও হতে পারে উদ্ভিজ্জ আমিষের সালাদ।