অঞ্চলে অঞ্চলে গরুর রান্না

কোরবানির ঈদে গরুর মাংসই খাওয়া হয় বেশি। একেক এলাকায় একেক ধরনের রেসিপি, স্বাদও ভিন্ন ভিন্ন। তেমনই কয়েকটি অঞ্চলের গরুর মাংসের রেসিপি দিয়েছেন সিতারা ফেরদৌস

রংপুর

বাটা মসলায় আলু গোস্ত

উপকরণ: গরুর মাংস দেড় কেজি, আদাবাটা দেড় টেবিল চামচ, রসুনবাটা দেড় টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচবাটা ১ টেবিল চামচ, জিরাবাটা ১ চা–চামচ, ধনেবাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১ কাপ, দারুচিনি ৪ টুকরা, ছোট এলাচি ৬টি, লবঙ্গ ৮-১০টি, তেজপাতা ৩টি ও আলু ৫০০ গ্রাম এবং পাঁচমিশালি মসলা (এই মসলা তৈরি করতে ১ চা–চামচ জিরা, ১ চা–চামচ মৌরি, ২ টুকরা দারুচিনি, ৪টি ছোট এলাচি, ৭টি লবঙ্গ, ১টি তেজপাতা, আধা চা–চামচ কালো গোলমরিচ নিন। সব উপকরণ শুকনা তাওয়ায় টেলে গ্রাইন্ডার বা শিল–নোড়ায় গুঁড়া করে নিন)।

প্রণালি: আলু ছিলে মাঝারি হলে দুই টুকরা আর বড় হলে চার টুকরা করে কেটে রাখুন। মাংস মাঝারি আকারে টুকরা করে নিন। মাংস ধুয়ে তাতে সব বাটা মসলা, গুঁড়া মসলা, পেঁয়াজ বেরেস্তা ও লবণ দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে আধঘণ্টা ঢেকে রাখুন। তেল গরম করে গরমমসলার ফোড়ন দিন। তাতে মাংস ঢেলে মাঝারি আঁচে রান্না করতে থাকুন। মাঝেমধ্যে নেড়ে দিন। মাংসের পানি শুকিয়ে গেলে অল্প করে গরম পানি মেশান। এবার আলু দিয়ে দু–একবার কষিয়ে নিন। শেষে পরিমাণমতো গরম পানি দিয়ে রান্না করতে থাকুন। মাংস সেদ্ধ হয়ে ঝোল কমে এলে পাঁচমিশালি মসলার গুঁড়া দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় রেখে নামাতে হবে।

কুষ্টিয়া

নারকেলের দুধ আর কাটা মসলায় গরু

উপকরণ: গরুর মাংস ২ কেজি, পেঁয়াজকুচি ২ কাপ, রসুনকুচি ৪ টেবিল চামচ, আদা মিহি কুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, আধভাঙা কালো গোলমরিচ ১ চা–চামচ, শুকনা মরিচ ৭টি, দারুচিনি ৪ টুকরা, বড় এলাচি ২টি, ছোট এলাচি ৬টি, লবঙ্গ ১২টি, কালো গোলমরিচ আধা চা–চামচ, তেজপাতা ২টি, শর্ষের তেল ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ৮টি, নারকেল দুধ ৪ কাপ ও পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ।

প্রণালি: চর্বি, হাড়সহ মাংস মাঝারি আকারে টুকরা করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন। বেরেস্তা ও কাঁচা মরিচ বাদে বাকি সব উপকরণ দিয়ে মাংস মাখিয়ে এক ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। মাংস চুলায় দিয়ে ঢেকে রান্না করুন, মাঝেমধ্যে নেড়ে দিন। খেয়াল রাখতে হবে যেন তলায় লেগে না যায়। মাংসের পানি শুকিয়ে এলে নারকেলের দুধ দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে ঝোল কমে এলে বেরেস্তা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে নামিয়ে নিন।

যশোর

আস্ত রসুনে গরুর মাংস

উপকরণ: গরুর মাংস দেড় কেজি, পেঁয়াজকুচি দেড় কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা–চামচ, ধনেগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা–চামচ, টালা জিরাগুঁড়া ১ চা–চামচ, দারুচিনি ৪ টুকরা, ছোট এলাচি ৬টি, লবঙ্গ ৭টি, আস্ত রসুন ৮টি, তেল ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো ও বাটা মসলার মিশ্রণ (তৈরি করতে লাগবে ৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজকুচি, ৩ টেবিল চামচ রসুনকুচি, ২ টুকরা দারুচিনি, ৪টি ছোট এলাচি, ৬টি লবঙ্গ, আধা চা–চামচ গোলমরিচ, ৫টি শুকনা মরিচ, আধা চা–চামচ রাঁধুনি, ৩ টেবিল চামচ শর্ষের তেল। সব উপকরণ তেলে ভেজে মাংসের ঝোল দিয়ে গ্রাইন্ডার বা পাটায় ভালো করে বেটে নিতে হবে।)

প্রণালি: রসুনের খোসা যেহেতু ছড়ানো হবে না, তাই পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন। হাড়, চর্বিসহ মাংস মাঝারি টুকরা করে কেটে ধুয়ে নিন। পেঁয়াজ ও লবণ দিয়ে মাংস মাখিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। পাত্রে তেল গরম করে গরমমসলার ফোড়ন দিন। তাতে সব বাটা মসলা কষিয়ে নিন। এবার যোগ করুন হলুদ, মরিচ, ধনে ও জিরাগুঁড়া। কিছুক্ষণ কষিয়ে তাতে মাংস দিন। মাংসের পানি শুকিয়ে গেলে গরম পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে থাকুন। এভাবে মাংস ৮০ শতাংশ সেদ্ধ হয়ে এলে আস্ত রসুনগুলো দিয়ে নেড়ে দিন। ঝোল কমে এলে বাটা মসলার মিশ্রণ ও টালা জিরার গুঁড়া দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় রেখে নামাতে হবে।

রাজশাহী

ভুনা মাংস

উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা–চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা–চামচ, মরিচগুঁড়া ২ চা–চামচ, গোলমরিচগুঁড়া আধা চা–চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা–চামচ, লবণ স্বাদমতো, টক দই ৩ টেবিল চামচ, তেল আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, দারুচিনি ২ টুকরা, ছোট এলাচি ৪টি, লবঙ্গ ৬টি, তেজপাতা ২টি ও কালো গোলমরিচগুঁড়া আধা চা–চামচ।

প্রণালি: চর্বি, হাড়সহ মাংস টুকরা করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। টক দই ও লবণ দিয়ে মাখিয়ে ২৫ মিনিট রেখে দিন। পাত্রে তেল গরম করে গরমমসলা ফোড়ন দিন। গরমমসলার গুঁড়া বাদে বাকি সব মসলা দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে মাংস ঢেলে দিন। রান্না করে মাংসের পানি শুকিয়ে গেলে অল্প অল্প করে গরম পানি দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন।

আরেকটি কড়াই চুলায় দিয়ে তাতে আলাদা করে ৪ টেবিল চামচ শর্ষের তেল গরম করুন। তাতে ৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজকুচি ও ৪টি শুকনা মরিচ লাল করে ভাজুন। ভাজা পেঁয়াজ ও মরিচ মাংসের ওপর ঢেলে দিন। শেষে গরমমসলার গুঁড়া মিশিয়ে নিলেই পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।