আমার রান্নাঘর

এই সেই ঘর, যেখানে আমি এক কাপ চা নিয়ে বসি। আমার রান্নার টেবিলের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, কী যেন নেই, কী যেন নেই। উঠে দাঁড়িয়ে আবার জায়গাটা মুছে ফিটফাট না করে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে পারব, ভাবি। চায়ের একটা চুমুকের বেশি নিজেকে ঠেকিয়ে রাখতে পারি না।
এটিই আমার কর্মময় অফিস টেবিল। আমি দস্তানা হাতে সিংকের সামনে দাঁড়াই, কবজি পর্যন্ত ফেনায় মাখামাখি হয়ে মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া মামুলি সব প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করি—যেমন ওরাংওটাংয়ের গায়ের রং কমলা কেন? আচ্ছা, যদি আমি ঘাস রান্না করি, খেতে কেমন লাগবে?
একটি টুলের ওপর দাঁড়িয়ে আমার রান্নার টেবিলের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করি। যেসব তাকের মধ্যে আমার জিনিসপত্র ঠেসে রাখা, সেখান থেকে আমার প্রতিদিনের অভিযান শুরু হয়। কিন্তু ওসব আমার নাগালের বাইরে। আমার স্বামী এসে তাক থেকে সেগুলো পেড়ে দেয়। আমি যে কী খাটো, বারবার সেটা প্রমাণিত হয়।
এটা সেই কেন্দ্রস্থল, স্কুল থেকে ফেরার পর আমার সন্তানেরা যেখানে সোজা ছুটে আসে। প্রতিটি পাত্রের ঢাকনা তুলে তুলে দেখে। ঘ্রাণ নিয়ে বোঝার চেষ্টা করে বিকেলের চায়ের সঙ্গে খাওয়ার জন্য আমি কী রেঁধেছি। তৃপ্তির সঙ্গে পেটে হাত বোলায়। পেছনে পড়ে থাকে লাঞ্চবক্স, গরম জামা, ব্যবহৃত টিস্যু, ময়লা মোজা।
জায়গাটা মায়াবীর মতো ভোল পাল্টায়। আলোঝলমলে, বিশৃঙ্খল, কর্মব্যস্ত, শিশুদের কাকলিমুখর, উচ্ছিষ্ট ছড়ানো জায়গাটা একসময় মোমের আলোয় উজ্জ্বল দুজনের জন্য পাতা সরল টেবিলের রূপ পায়।

এটাই যেন একমাত্র জায়গা, যেখানে আমি নাচের মুদ্রা তৈরির ভরসা পাই। পায়ে ঠকাস করে কোনো পাত্রের গুঁতো খাই, ঘড়ি উল্টে পড়ে যায় কিংবা কোথাও সুইচ বন্ধ হয়ে যায়। এখানে কেউ আমাকে দেখছে না। কিংবা কেউ হয়তো দেখছে সারাক্ষণই।
এটা এমন একটা কারখানা, যার প্রতিটি সকেট আমি ব্যবহার করতে পারি। চালু করতে পারি আমার মালিকানাধীন যন্ত্রপাতির প্রতিটি অংশ। ঠুংঠাং শব্দের অর্কেস্ট্রা বেজে ওঠে এখানে। তবে সে আওয়াজ কখনোই ওপরের পর্দায় চড়ে না।
এটা সেই স্বীকারোক্তির কুঠুরি, যেখানে আমার মা আর বোন দিনশেষে ফিরে আসে। আমরা ভাণ করি যেন চুলার চারপাশে রান্নাই করছি। এখানে খুনসুটিতে মেতে উঠি আমরা, বাইরের কারও গলার আওয়াজ পেলেই ত্রস্তে আবার নিরীহ বাবুটি হয়ে যাই।
এটা সেই গবেষণাগার, যেখানে আমার স্বামী লবণের দানা থেকে শুরু করে প্রতিটি উপকরণ মেপে মেপে দেয়। এখানে সবকিছু তাঁকে করতে হয় সাবধানে, পান থেকে চুন খসলেই খোঁচা খাবে আমার। এখানে সে শুধু বারবিকিউ আয়োজনকারী পিতা নয়।

আমার এই রন্ধনশালা শুধুই একটি ঘর নয়। রান্না আর বেকিংয়ের বাইরে আরও কত কিছু যে ঘটে এখানে। এখানে আমি রাঁধি আমার জীবিকার জন্য, ভালোবাসার জন্য, সঙ্গ লাভের জন্য। এখানে আমি নাচি মনের খেয়ালে। এখানেই আমাদের রাতের খাবারের আড্ডা, সকালের চায়ের আসর, স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের আবদারের ঝুড়ি। এখানে আমরা সবাই মিলে রান্না করি, এখানে আমরা সবাই রাজা। আমার এই রান্নাঘর মামুলি কোনো রান্নাঘর নয়। এটা আমাদের রান্নাঘর।
এটি এমন এক সমন্বয়ের ক্ষেত্র, যাতে ফুটে ওঠে আমার রান্নার ধরন। পরিবারের জন্য আমি দিনের কখন কী রাঁধি, এটি তারই প্রকাশ। যারা কিছু একটা রেঁধে ফেলতে চান, তাদের জন্য এখানে কিছু না কিছু আছে। আপনাকে কেবল ক্ষুধার্ত হতে হবে, আর থাকতে হবে সেটা রেঁধে ফেলতে নেমে পড়ার বাসনা। আশা করি, রেসিপিগুলো পড়ে আপনারাও সেই মজাই পাবেন। আমার মতোই মজা পাবেন খাবারগুলো রান্নায় চড়িয়ে।

চিলি চিজ বুররিতোস
চারজনের খাবার (প্রত্যেকের জন্য দুটি করে র্যাপ)
ঝাল রাঁধতে আমার ভালো লাগে। এক পাত্রের রান্নারও আমি দারুণ অনুরাগী। শুধু সহজ বলেই নয়, বরং এক পাত্রের রান্না আরও অনেকগুলো ডিশ রান্নার সুযোগ করে দেয়। এই মরিচ মেশানো রান্নাটা খুবই ঝটপটে, এর রেসিপিও খুব সহজ। কাজ সেরে বাসায় ফিরে একটা স্টোভ বা স্লো কুকারে আপনি এটা রেঁধে নিতে পারেন। এটা সেই রান্নাগুলোর একটি, যেখানে আপনি গামলাভর্তি উপকরণ নিয়ে বসতে পারেন এবং আপনার স্বাদ ও ক্ষুধামাফিক নিজের উপকরণ নিজে ঠিক করে নিতে পারেন। একটা গরম তরতিয়া (বা টরটিলা) দিয়ে ভাত, মরিচ ও পনির মুড়িয়ে নেওয়া মানেই সেটা একটা বাজিমাত। আমার পরিবারের অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় সদস্যদের জন্য আমি এর সঙ্গে এক গামলা কাঁচা পেঁয়াজ আর ঝাল মরিচ মিশিয়ে নিই। এই রেসিপির কিছু বেঁচে গেলে সেগুলো পাস্তায় অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
প্রস্তুতি: ১৫ মিনিট, রান্না: ৩০ মিনিট
পুর ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায়
পুরের উপকরণ
৫০০ গ্রাম খাসি বা গরুর মাংসের কিমা
৪০০ গ্রাম রেড কিডনি বিন ভিজিয়ে আজলে নেওয়া
১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
৭০০ গ্রাম টমেটো পিউরি
১ টেবিল চামচ মরিচ গুঁড়া
একটি মাঝারি আকারের পেঁয়াজের কুচি
তিনটি পিষে রাখা রসুনের কোয়া
১ টেবিল চামচ জিরার গুঁড়া
আন্দাজমতো গোলমরিচের গুঁড়া
লবণ
পরিবেশনের উপকরণ
৮টি কর্ন তরতিয়া
২০০ গ্রাম সাদা ভাত
১২৪ গ্রাম চেডার চিজের কুচি
১২৫ গ্রাম সাওয়ার ক্রিম
ধনেপাতার কুচি
একটা বড় ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করুন। তাতে রসুন ও পেঁয়াজ ঢালুন। পেঁয়াজ নরম না হওয়া পর্যন্ত কম থেকে মাঝারি আঁচে ১০ মিনিট রান্না করুন। প্যান থেকে নামিয়ে একটি পাত্রে রাখুন।
একই প্যানে কিমা মাংস ঢেলে বাদামি রং না হওয়া পর্যন্ত মিনিট পাঁচেক রান্না করুন। যাতে দলা পাকিয়ে না যায় সে জন্য কাঠের হাতা ব্যবহার করুন। রান্না করা পেঁয়াজ প্যানে ঢেলে দিন।
এবার টমেটো পিউরি, কিডনি বিন, জিরা, মরিচ ও গোলমরিচের গুঁড়া ও লবণ যুক্ত করুন। জমাট না বাঁধা পর্যন্ত মাঝারি আঁচে ১৫ মিনিটের মতো নাড়তে থাকুন।
এই ফাঁকে বাকি উপকরণগুলো টেবিলে প্রস্তুত করুন, যাতে সবাই নিজ নিজ বুররিতোস বানিয়ে নিতে পারে। তরতিয়াগুলো ওভেনে ২২০/ফ্যান ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে ৫ মিনিট গরম করে নিন কিংবা প্যাকেটের পেছনে লেখা নিয়মগুলো মেনে চলুন।

ওয়েলিংটন সসেজ রোল
২৫-৩০টি বানানোর জন্য
সসেজ আমি খেতে চাই না। আবার না খেয়েও থাকতে পারি না। অস্বীকার করতে করতেও বলে ফেলি, আমি সসেজ খেতে ভালোবাসি। এই তো বলেই ফেললাম! ফোলানো পেস্ট্রিতে মোড়ানো সসেজের স্বপ্ন নিঃসন্দেহে সব মেয়েই গোপনে দ্যাখে। যা-ই হোক, এবার আসা যাক আমার বিফ ওয়েলিংটন সসেজ রোলে। সসেজের সঙ্গে মেশানো মাশরুম এর স্বাদকে আরও গভীর আর মাংসল করে। এর মধ্যে শর্ষের একটি স্তর রান্নার পর সসেজ রোলকে একটা সূক্ষ্ম উত্তাপে উষ্ণ করে রাখে। বাচ্চাদের পার্টিতে এটি সবার মন কাড়ে। পরদিন প্যাক করা লাঞ্চের বাক্সে এটা ঢুকলে তো আরও ভালো। এগুলো ফ্রিজেও ভালোমতো রাখা যায়। যখন ইচ্ছা ওভেনে গরম করে নিলেই আবার তরতাজা।
প্রস্তুতি: ২০ মিনিট, রান্না: ২৫ মিনিট
বেক করার আগে-পরে ফ্রিজে রাখা যায়
উপকরণ
৬টি বড় বিফ সসেজ কেটে বের করা মাংস
১০০ গ্রাম মাশরুমের মিহি কুচি
৩০ গ্রাম লবণছাড়া মাখন
১ টেবিল চামচ ওয়ারচেস্টার সস
১ টেবিল চামচ তাবাসকো
গোলমরিচের গুঁড়া
৪৫০ গ্রাম পাফ পেস্ট্রি (কেনা বা বানানো)
৪ টেবিল চামচ শর্ষেদানা
একটি ফেটানো ডিম
সি সল্ট বা লবণ
২০০/ফ্যান ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে আগেই ওভেন গরম করে রাখুন।

ছোট একটা প্যানে মাঝারি আঁচে মাখন ও মাশরুম রাখুন। যতক্ষণ না মাশরুমগুলো নরম হয় এবং আর্দ্রতা চলে যায়, রান্না করতে থাকুন।
মাশরুম রান্না হয়ে গেলে তাতে ওয়ারচেস্টার সস, তাবাসকো, সসেজের মাংস, গোলমরিচের গুঁড়া ও লবণ ঢালুন। ভালো করে নাড়ুন। পরে চুলা থেকে সরিয়ে রাখুন।
রান্নার টেবিলে ময়দা ছিটিয়ে দিন। তাতে পাফ পেস্ট্রি ছেনে প্রায় ২৫ বাই ৩৫ সেন্টিমিটার লম্বাটে আয়তক্ষেত্রের আকার দিন। এবার মাঝবরাবর কেটে তিনটি লম্বা আয়তক্ষেত্র তৈরি করুন।
আয়তক্ষেত্রের ওপরে পুরু করে শর্ষেদানা মাখুন। দৈর্ঘে্যর প্রান্ত বরাবর এক সেন্টিমিটার জায়গা ফাঁকা রাখবেন। সেই ফাঁকা প্রান্তে ফেটানো ডিম মাখান।
আয়তক্ষেত্রের মাঝখানে রান্না করা পুর দিন। দিয়ে পেস্ট্রি দিয়ে এমনভাবে মোড়ান, যাতে ডিম লাগানো প্রান্তগুলো জুড়ে যায়।
তিনটি রোল ফেটানো ডিমে মাখিয়ে নিন। তাতে ছিটিয়ে দিন সি সল্টের দানা। প্রতিটি লম্বা রোল কেটে ৮-১০ টুকরো করে কাটুন।
ছোট রোলগুলো বেকিং শিটে রেখে বাইরের দিকটা সোনালি রং হওয়া পর্যন্ত ২৫-২০ মিনিট বেক করুন। দুই পাশের মাংসগুলো ভালোমতো রান্না হয়েছে কি না, নিশ্চিত হয়ে নিন।

কমলায় ভেটকি
(দুজনের জন্য)
শৈশবে যেসব খাবারের স্বাদে অভিভূত হয়েছিলাম বলে মনে পড়ে, এই পদ তার একটি। আস্ত বা কাটা মাছের টুকরো দিয়ে মা এই পদটি রাঁধতেন। বাবা এগুলোকে ‘সহজ মাছ’ বললেও আসলে ব্যাপারটা তা ছিল না। কারণ, স্বাদ বাড়ানোর জন্য মাছগুলো রান্না করা হতো কাঁটাসহ। খাওয়ার সময় কাঁটা বাছতে অনেক সময় লাগত। প্লেট থেকে দূরে নিরাপদ জায়গায় কাঁটাগুলো রাখতাম। রীতি অনুযায়ী হাত দিয়েই খেতাম (ছুরি-কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়াও অসম্ভব ছিল)। খেতে সুস্বাদু হলেও আজকের দিনে কি আর প্লেটের সামনে ঘণ্টাখানেক বসে থাকার সময় পাওয়া যায়? নিজের বাচ্চাকাচ্চাদের সঙ্গদোষে আমি নিজেও এখন মাছের ফিলের ভক্ত হয়ে গেছি। মানতেই হবে, পদটির স্বাদে এতে টান পড়ে। তবে ক্লেমেন্টাইন বা কমলার ঘ্রাণে সেটা পুষিয়ে যাবে।
প্রস্তুতি: ১৫ মিনিট, রান্না: ৪০ মিনিট
ফ্রিজে রাখলে স্বাদ কমে যায়
উপকরণ
৩০০ গ্রাম ভেটকির ফিলে
২টি ক্লেমেন্টাইন বা কমলার স্লাইস করা খোসা
৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
১ টেবিল চামচ টমেটো পিউরি
আধা টেবিল চামচ হলুদ
আধখানি ফালি করে কাটা পেঁয়াজ
২টি থেঁতলানো রসুনের কোয়া
১ টেবিল চামচ জিরার গুঁড়া
১ টেবিল চামচ পাপরিকা
একমুঠো ধনেপাতা
১ টেবিল চামচ মিহি সি সল্ট
২০০ মিলিলিটার পানি
একটি মাঝারি আকারের প্যানে মাঝারি আঁচে তেল গরম করুন। তাতে থেঁতলানো রসুন ও পেঁয়াজের ফালি দিন। আঁচ কমিয়ে পেঁয়াজ নরম হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
টমেটো পিউরি, লবণ ও পানি দিন। কম আঁচে আরও পাঁচ মিনিট রান্না করুন।
এবার হলুদ, পাপরিকা ও জিরা ঢেলে আরও পাঁচ মিনিট রান্না করুন।
ক্লেমেন্টাইন বা কমলার খোসা দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না খোসা নরম হয়ে ঝুরঝুরে হয়ে আসে।
একটি পটেটো ম্যাশার দিয়ে খোসাগুলো পিষুন। যতটা ভালো করে পিষব, ততই ঘ্রাণ ছাড়বে।
অবশেষে এবার মাছ ঢেলে ঢাকনা চাপান। অল্প আঁচে ১০ মিনিট রান্না করুন। মাছ রান্না হয়ে এলে চুলা থেকে প্যান নামান। কুচি করে ধনে পাতা ছিটিয়ে দিন।
বাসমতী চালের গরম ভাত দিয়ে পদটি মজা করে খান।

কমলার সিলাবাবে চোবানো বিস্কোটি
(৩০টি)
এই মচমচে বিস্কুটগুলো বেশ শক্ত। অনেক দিন রেখে দেওয়া যায়। কোনো কিছুতে চুবিয়ে খাওয়ার ক্ষেত্রে আদর্শ। বাসায় রাখা যেকোনো শুকনো ফল এতে ব্যবহার করা যায়। উপহার হিসেবেও দারুণ। বয়ামের ভরে রাখলেও দেখতে সুন্দর দেখায়। বাসায় অতিথি এলে সিলেবাবে চুবিয়ে এ বিস্কুট পরিবেশন করলে খুবই শৌখিন দেখায়।
প্রস্তুতি: ২০ মিনিট, রান্না: ৪০ মিনিট
ফ্রিজে নয়, বয়ামে রাখা যায়
বিস্কোটির উপকরণ
৩৫০ গ্রাম ময়দা, মাখানোর জন্য বাড়তি কিছু ময়দা
২ চা–চামচ বেকিং পাউডার
২ চা–চামচ গরম মসলা গুঁড়া
২৫০ গ্রাম মিহি করা চিনি
একটি কমলার কোরানো খোসা
৮৫ গ্রাম কিশমিশ
৮৫ গ্রাম শুকনো ক্র্যানবেরি
৫০ গ্রাম ম্যাকাডামিয়া বাদামের কুচি
৫০ গ্রাম পেস্তাবাদাম কুচি
৩টি ফেটানো ডিম
সিলেবাব ডিপের উপকরণ
৩০০ মিলিগ্রাম ফেটানো ক্রিম
৫০ গ্রাম মিহি করা চিনি
দুটি কমলার কোরানো খোসা
আধখানা কমলালেবুর রস
৪ টেবিল চামচ দুধ
বিস্কোটির প্রণালি
ওভেন আগেই ১৮০/ফ্যান ১৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এনে রাখুন। তেল চোয়াবে না এমন কাগজ বা সিলিকন প্যাডের ওপর দুটি বেকিং শিট সাজান।
এবার কমলার কোরানো খোসা, কিশমিশ, ক্র্যানবেরি, ম্যাকাডামিয়া ও পেস্তাবাদাম মিশিয়ে নিন। তাতে ফেটানো ডিম দিয়ে হাতে চেপে পুরোটাকে একটা দলা বানান।
একটি পাত্রে আটা, বেকিং পাউডার, গরম মসলার গুঁড়া ও চিনি ভালো করে মেশান।
দলাটা নিয়ে ময়দা মাখানো শক্ত কিছুতে রেখে সেটিকে দুভাগে ভাগ করুন। দলা দুটোকে বেলে ১০ সেমি প্রশস্ত করুন। প্রতিটিকে একটি করে বেকিং শিটে রাখুন।
দলটা ফুলে উঠে শক্ত হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ৩৫-৪০ মিনিট বেক করুন। এখনো এটি বর্ণহীন।
শিট দুটি ওভেন থেকে বের করে বেকিং শিট থেকে তুলে নিন। ওভেনের আঁচ কমিয়ে ১৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড/ফ্যান ১২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড করুন।
পাউরুটি কাটার ছুরি দিয়ে এক সেন্টিমিটার পুরু করে স্লাইস করুন। স্লাইসগুলো বেকিং শিটে সাজিয়ে রাখুন। শুকিয়ে সোনালি রং না ধরা পর্যন্ত ২৫-৩০ মিনিট বেক করুন। আরও বেশি সময়ও লাগতে পারে। বিস্কুটগুলো পুরোপুরি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা করতে থাকুন।
একটা তারের জালিতে রেখে বিস্কুটগুলো ঠান্ডা হতে দিন।
সিলেবাব ডিপের প্রণালি
নরম না হয়ে আসা পর্যন্ত ক্রিম ও সুগার ফেটাতে থাকুন।
কমলালেবুর কোরানো খোসা ও রস মিশিয়ে নাড়ুন। দুধ ঢালুন, যাতে তা পাতলা হয়ে কিছু চুবিয়ে খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে।
একটি চুবানোর উপযোগী পাত্রে ঢেলে বিস্কোটির পাশে রেখে পরিবেশন করুন।

চকলেট এবং স্টার অ্যানিস ফনড্যান্ট
(চারজনের জন্য)
যেসব ডেজার্ট বেক করা সবচেয়ে ভীতিকর, চকলেট ফনড্যান্ট তার একটি বলে কুখ্যাতি আছে। তিরিশের কাছাকাছি না আসা পর্যন্ত এই ভয়ংকর রান্নায় আমি হাতই দিইনি। গোপনে বলে রাখি, একেবারে যাচ্ছেতাই হয়েছিল, বিপর্যয়ই বলতে পারেন। তবে দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, সবকিছু ঠিকঠাকই যাচ্ছিল। তবে এটা আসলেই অত্যন্ত সহজ রেসিপি। বাইরেরটা মচমচে, ভেতরটা গরম আর তুলতুলে। মসলা হিসেবে স্টার অ্যানিসের দীর্ঘস্থায়ী সুঘ্রাণের তো কোনো তুলনাই হতে পারে না।
প্রস্তুতি: ২০ মিনিট, সঙ্গে ঠান্ডা করার সময়, রান্না: ১৫ মিনিট
বেকিংয়ের আগে ফ্রিজে রাখা যায়
প্রলেপের উপকরণ
৫০ গ্রাম লবণ ছাড়া গলানো মাখন
ডাস্টিংয়ের জন্য কোকো পাউডার
ফনড্যান্টের উপকরণ
২০০ গ্রাম গলানো ব্ল্যাক চকলেট (৭০% কোকোসহ)
২০০ গ্রাম লবণ ছাড়া গলানো মাখন
২০০ গ্রাম মিহি করা চিনি
৪টি পুরো ডিমের সঙ্গে ৪টি অতিরিক্ত ডিমের কুসুম
৪ টেবিল চামচ গুঁড়ো করে ছেঁকে নেওয়া স্টার অ্যানিস
প্রলেপের প্রণালি
গলানো মাখন দিয়ে ৮টি র্যামেকিন বা ময়দার বাটিতে প্রলেপ দিন। স্ট্রোকগুলো ঊর্ধ্বমুখী রাখতে হবে। বাটিগুলো বেকিং ট্রেতে রাখুন। ফ্রিজে ১০ মিনিট রেখে দিন।
বাটিগুলো বের করে আরেকবার গলানো মাখনের প্রলেপ দিন। আবার ১০ মিনিট ফ্রিজে রাখুন। এবার বের করে কোকো পাউডার দিয়ে ভেতরটা ডাস্ট করুন। বাড়তি কোকো ঝেড়ে নিন।
ফনড্যান্টের প্রণালি
ওভেন আগেই ২০০ ডিগ্রি/ফ্যান ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে তপ্ত করে নিন।
একটি পাত্রে চকলেট রাখুন। ফুটন্ত পানির প্যানে পাত্রটি ডুবিয়ে চকলেট গলিয়ে ফেলুন। মাখনের টুকরো কুচি করে চকলেটের সঙ্গে মিশিয়ে গলিয়ে ফেলুন।
ফেনা ফেনা হয়ে আয়তন দ্বিগুণ না হওয়া পর্যন্ত চিনি ও ডিম একসঙ্গে ফেটুন। স্ট্যান্ডিং মিক্সচারে সময় নেবে ৫ মিনিট, ইলেকট্রিক হ্যান্ডহেল্ড হুইস্কে ৫ থেকে ১০ মিনিট। এতে মাখন ও চকলেটের মিশ্রণ যুক্ত করুন। সব একসঙ্গে নাড়ুন। ময়দা ও স্টার অ্যানিসের গুঁড়া যুক্ত করুন। বড় ধাতব চামচ দিয়ে এগুলো ভাঁজ করতে থাকুন।
বাটিগুলো বেকিং ট্রেতে সাজান। বাটিগুলোতে মিশ্রণ এমনভাবে ভাগ করে দিন, যাতে ওপরের দিকে এক সেন্টিমিটার করে ফাঁকা থাকে। ওভেনে ১০-১২ মিনিট রান্না করুন। এর বেশি নয়। বাটির প্রান্ত থেকে ফনড্যান্টগুলো আলগা হয়ে আসবে।
ফনড্যান্টগুলো ওভেন থেকে বের করুন। বাটির মধ্যে সেগুলো মিনিটখানেক রাখুন। তখনো সেগুলো গরম। এ অবস্থাতেই তুলে নিয়ে পরিবেশন করুন, নইলে গরমে ভেতরটা সেদ্ধ হয়ে যাবে।
বেক করার আগে ফনড্যান্টগুলো ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায়। জমাট অবস্থা থেকে রান্না করতে হলে ওভেন ২০০/ফ্যান ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে ১৭ মিনিট রান্না করতে হবে।