এগ-সাইটেড!!!

অলংকরণ: আরাফাত করিম

অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার। বিশ্ব ডিম দিবস। ডিম মানে কিন্তু কেবল মুরগির ডিম কিন্তু নয়। বরং যেসব প্রাণী ডিম পাড়ে সব ডিমের জন্যই এই দিন। আমরা যদিও মুরগির ডিম নিয়ে বেশি কথা বলছি। কারণ আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মুরগির ডিম। তাই আজ আমরা এক্সাইটেড না হয়ে বরং এগ-সাইটেড হতেই পারি।

ডিমে থাকে সবচেয়ে উঁচুমানের প্রাকৃতিক প্রোটিন
ছবি: পেকজেলসডটকম

• ডিমে থাকে সবচেয়ে উঁচুমানের প্রাকৃতিক প্রোটিন।
• যে কয় ধরনের খাদ্য উপাদান প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন-ডি-এর উৎস, ডিম তার একটি।
• মেঝেতে ডিম পড়ে ভেঙে গেলে বেশি করে লবণ ছড়িয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।
• একটি ডিম তৈরি হয়ে পাড়া পর্যন্ত ২৪-২৬ ঘণ্টা সময় লাগে। আর একটি ডিম পাড়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে আরেকটি ডিম তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।

• প্রতি ২০ হাজার ডিমের মধ্যে একটিতে ব্যাকটেরিয়া থাকে।

• সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেকেই কাঁচা ডিম খেয়ে থাকে। অথচ তারা জানেই না কাঁচা ডিমে প্রোটিনের ৫১ শতাংশ কাজে লাগে আর সেদ্ধ অথবা রান্না করা ডিমে প্রোটিনের কার্যকারিতা ৯১ শতাংশ।

রান্না করা ডিমে প্রোটিনের কার্যকারিতা ৯১ শতাংশ
ছবি: পেকজেলসডটকম

• নকল ডিম হতে সাবধান। চীনের কিছু মানুষ এই কুকর্মটি করছে, যা বাংলাদেশেও পাওয়া যায় বলে জানা গেছে। বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানে তৈরি হয় নকল ডিম।

• এখনো পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুরগির ডিমের ব্যাস ৯.১ সেন্টিমিটার। যুক্তরাজ্যের হ্যারিয়ট নামের একটি মুরগি সেটা পেড়েছিল ২০১০ সালে।

• ওমলেট নিয়ে নানা কথা হয়ে থাকে। এর ধরন নিয়েও রয়েছে আলোচনা। একটি তথ্য বলছে বিশ্বে অন্তত ১৯৩ ধরনের ওমলেট হয়ে থাকে। আপনি নিজেও নিজের মতো করে একটা রেসিপি তৈরি করে ফেলতে পারবেন।

বিশ্বে অন্তত ১৯৩ ধরনের ওমলেট হয়ে থাকে
ছবি: উইকিপিডিয়া

• ডিমের সাদা অংশ ঘোলাটে হলে ভাববেন ডিমটা তাজা। আর বেশি পরিষ্কার হলে সেটা নষ্ট কিংবা অনেক দিনের পুরোনো।

• ডিম নষ্ট না ভালো তা বোঝার উপায় একটা গ্লাসে পানি নিয়ে ডিমটা ছেড়ে দেওয়া। ডুবে গেলে সেটা নষ্ট। আর ভালো হলে সেটা ভাসবে।

বাংলাদেশে একজন মানুষ বছরে গড়ে ১০৪টি ডিম খায়
ছবি: পেকজেলসডটকম

• বাংলাদেশে প্রতিবছর ডিমের উৎপাদন ১ হাজার ৭৩৬ কোটি। আমাদের দেশে একজন মানুষ বছরে গড়ে ডিম খায় ১০৪টি। আর যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ২০৫। ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের তথ্যানুযায়ী সে দেশে বছরে মোট উৎপাদন ৫৬০ কোটি। তবে সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদিত হয় চীনে। ২ হাজার ৪০০ কোটি। ভারতের উৎপাদন ৪০০ কোটি। আর জাপানে ২৫০ কোটি।

• সাধারণত ব্রাউন ডিমের দাম সাদা ডিমের চেয়ে বেশি। অথচ সেটা কিন্তু এর গুণগত মানের জন্য নয়; বরং ব্রাউন ডিম পাড়ে বড় মুরগি। তারা খায়ও বেশি। এ জন্য ডিমের দাম বেশি হয়। সাদা কিংবা বাদামি রং যেমনই হোক ডিমের গুণগত মান অভিন্ন।

• একটি ডিমের সাদা ও কুসুম অংশে সমপরিমাণ ৩ গ্রাম করে প্রোটিন থাকে।

• আশ্চর্য গুণ রয়েছে ডিমের। কেটে গেছে, রক্ত বন্ধ হচ্ছে না? একটা ডিম সেদ্ধ করে খোসা ছাড়ানোর সময় পাতলা আবরণ নিয়ে কাটা জায়গায় লাগিয়ে রাখুন, রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

• চামড়ার ব্যাগ বা জ্যাকেটের ময়লা উঠছে? ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে লাগিয়ে মুছে ফেলুন ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।

• পচা ডিম মারার সংস্কৃতি বিশ্বজুড়ে। যাকে পছন্দ হচ্ছে না, তার দিকে পচা ডিম ছুড়ে মারা হয়।

ডিম যখন দারুণ ক্যানভাস
ছবি: পেকজেলসডটকম

• ডিম আবার দারুণ ক্যানভাস। রাঙিয়ে নিন মনের রঙে। ইউক্রেন আর পোল্যান্ডে ডিম রং করা শিল্পকে বলা হয় ডিসানকি।

• আপনারা অনেকেই জানেন পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় ডিম খেতে দেওয়া হতো না, ডিম অর্থাৎ শূন্য পাবে বলে।

• ডিম দিয়ে কত কী রান্না করা যায় তার হিসাব করা মুশকিল। প্রতিটি দেশেই তাদের নিজস্ব এবং ঐতিহ্যবাহী পদ আছে। ঝাল, টক, মিষ্টি, নোনতা সবকিছুই সম্ভব ডিম দিয়ে। বিশেষত বেকিংয়ে ডিম যেন অপরিহার্য। তবে কী হয় আর কী হয় না, তা নিয়ে একদম না ভেবে আপনি নিজেই বানিয়ে ফেলুন ডিমের কোন একেবারে আপনার মতো করে। দেখবেন সেটাই অসাধারণ হয়ে উঠেছে।

• ডিম নিয়ে কিন্তু বিজ্ঞাপন হয়েছে বেশ কিছু। তার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো ভারতের ‘সানডে হো ইয়া মানডে হার রোজ থাও আন্ডে’।

• আর না থেকেও কিন্তু বাঙালির মুখে মুখে বেঁচে আছে ঘোড়ার ডিম।

মুরগি এক ডিম পেড়েই বাড়ি মাথায় তোলে
ছবি: পেকজেলসডটকম

যাক, ডিম কচকচানি বা এগ-সাইটমেন্টে এবার যতি টানা যাক নীতি কথা বলে। ডিম নিয়ে বোধ হয় বেশি প্রবাদ রয়েছে রুশদের। তা থাক। এতক্ষণ আমরা মুরগির ডিম নিয়েই কথা বললাম। তাই মুরগি দিয়ে শেষ করা যাক: হাজার ডিম পেড়েও কচ্ছপ কিছুই বলে না, মুরগি এক ডিম পেড়েই বাড়ি মাথায় তোলে।