কলাইয়ের রুটিতে জমবে আসর

বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের সবখানে ‘কলাইয়ের রুটি’ ভোজনরসিকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। কাঁচা মরিচভর্তা, পেঁয়াজকুচি ও শর্ষের তেল দিয়ে বা পোড়া বেগুনভর্তার সঙ্গে গরম-গরম কলাইয়ের রুটির প্রসঙ্গ তুলতেই অনেকের জিভে জল আসে। যাঁরা রাজশাহীতে যাননি কিন্তু কলাইয়ের রুটি খাওয়ার সাধ আছে, তাঁদের জন্য এখন ঢাকাতেই রাজশাহীর কলাইয়ের রুটি খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

শ্যামলী খিলজি রোডের একটি দোকানে পাওয়া যাচ্ছে কলাইয়ের রুটি। সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আনা উপকরণ দিয়ে তৈরি হচ্ছে জনপ্রিয় এ খাবার। এমনকি রুটি বানানোর কারিগর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট ইউনিয়নের।

মাষ কালাই রুটি বাড়ির স্বত্বাধিকারী মো. আবুল কালাম আজাদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন ২০০৪ সালে। প্রথমে অন্য পেশায় কাজ করলেও বর্তমানে করোনার সময়ে ব্যবসা বদলে মুখোরোচক কলাইয়ের রুটি বানিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে খাওয়ার আয়োজন করেছেন।

প্রথমে অর্গানিক ফুড নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন মো. আবুল কালাম আজাদ। সেখান থেকেই মাষ কালাই রুটি বাড়ি নামে একটি ঘরোয়া দোকান করার চিন্তা আসে। তিনি জানান, রুটি বানানোটা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। আটার মিশ্রণ সঠিক না হলে রুটি ভালো হয় না। সমপরিমাণ আটা ও মাষকলাইয়ের গুঁড়া না হলে রুটি খেতে তিতা বা শক্ত হয়। তাই রুটি বানানোর কারিগর আনা হয়েছে কানসাট থেকে।

আবুল কালাম আজাদ আরও জানালেন, গরম-গরম রুটি বেশি মজা, তাই দোকানে বসে খাওয়াই ভালো। এখানে পাওয়া যাচ্ছে হাঁসের মাংস, গরুর মাংস, বট, মরিচভর্তা, বেগুনভর্তা। বেগুন, ধনেপাতা, মরিচ—সব রাজশাহী থেকে আনেন তিনি। মাটির পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হয় দোকানে।

কারিগর মো. মাহতাব উদ্দিন জানান, রুটি সাধারণত খড়ির চুলায় ভালো হয়, তবে এখন গ্যাসের চুলায় বানানো যায়।

মো. মাহতাব উদ্দিন আরও জানালেন, ভর্তার স্বাদ সঠিক না হলে এই রুটি খেয়ে মজা পাওয়া যায় না। তাই ঝাল ও লবণ স্বাদমতো দিতে হয়। তবে দোকানে আসা ভোজনবিলাসীরা তাঁদের ফরমাশ অনুযায়ী ঝাল ও লবণ বলে দিলে সে অনুযায়ী তৈরি হয় কলাইয়ের রুটি খাওয়ার জন্য ভর্তা।

সন্ধ্যায় দোকানে আসা এক দল তরুণের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, তাঁরা রাজশাহীতে নিয়মিত এই রুটি বিকেলে বা সন্ধ্যায় পথের ধারে বসে খান। তবে ঢাকায় এই প্রথম মাষ কালাই রুটি বাড়ির কথা শুনে এসেছেন খেতে।

রুটি বানানোর প্রক্রিয়

আটা ও মাষকলাইয়ের গুঁড়া চালুনি দিয়ে চেলে ভালোভাবে মেশাতে হবে। পাত্রে পরিমাণমতো পানি ও গুঁড়া দিয়ে শক্ত খামির বানান। হাতের তালু ও আঙুল দিয়ে বারবার ঠেসে খামির মোলায়েম করতে হবে। খামির তিন ভাগ করে তিনটি লাই বানাতে হবে। দুই হাতের তালু ও আঙুল দিয়ে একটু একটু করে হালকাভাবে চেপে লইটিকে বড় গোলাকার রুটির আকৃতিতে আনতে হবে।

রুটি তৈরির সময় মাঝেমধ্যে পানিতে হালকাভাবে হাত ভেজাতে হবে। এতে রুটি দ্রুত গোলাকার হবে। সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আঙুলের চাপে রুটি ফুটো হয়ে না যায়। ফুটো হয়ে গেলে তা পূরণ করে নিতে হবে। এরপর মাটির চুলার ওপরে রাখা গনগনে আগুনে গরম হওয়া তাওয়ার ওপর দিতে হবে রুটি। গরম হলে রুটি দিয়ে এ পিঠ-ও পিঠ সেঁকে গরম-গরম গরুর মাংস, বেগুন ভর্তা বা শুকনা মরিচের ঝালের সঙ্গে আচার, পেঁয়াজকুচি, শর্ষের তেল, ধনেপাতার চাটনিসহ পরিবেশন করতে হবে।

ভোজনরসিকেরা এই শীতে জমিয়ে ঢাকাতেই খেতে পারেন গরম-গরম কলাইয়ের রুটি।