গারো সম্প্রদায়ের নবান্ন

গ্রিক্কা (ঢাল-তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা) করে শোভাযাত্রা করছেন এক গারো যুবক। সঙ্গে অন্য শিল্পীরা শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছেনছবি: লেখক

করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে ৪ ডিসেম্বর পালিত হয়েছে গারো সম্প্রদায়ের নবান্ন উৎসব ‘ওয়ানগালা’। শস্য দেবতার কাছে নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতি চেয়ে গারো সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করেন ওয়ানগালা বা নবান্ন উৎসব।
গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করলে ফসলের ভালো ফলন হয়। ঢাকায় বসবাসরত গারোরা রাজধানীর লালমাটিয়ায় দিনব্যাপী পূজা-অর্চনা, আলোচনা, নাচ-গানে পালন করেছেন তাঁদের সবচেয়ে বড় উৎসব ওয়ানগালা।

ওয়ানগালা উৎসবের শুরুতে নাচের মাধ্যমে শোভাযাত্রা করছেন গারো সম্প্রদায়ের মানুষ
ছবি: লেখক

দেবতাদের পূজার মাধ্যমে শুরু হয় এ উৎসব। ‘আমুয়া’, ‘রুগালা’র মতো ধর্মীয় আচার পালন করা হয়। দুপুরের বিরতির পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নিজেদের ভাষায় গান গেয়ে শোনান গারো শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল গারোদের ঐতিহ্যবাহী জুম নাচ।

উৎসবে উপস্থিত গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওয়ানগালা একই সঙ্গে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। ওয়ানগালা উৎসব পাহাড়ি জুমচাষকে কেন্দ্র করে উদযাপিত হয়ে থাকে। নতুন ফসল তোলার পরে নকমা (গ্রামপ্রধান) সবার সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেন। ২৭ বছর ধরে প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় বসবাসরত গারোরা এ উৎসব আয়োজন করে আসছেন।

আমুয়ার (পূজার) মাধ্যমে শস্য দেবতার উদ্দেশে কামাল (যাজক) নতুন ফসল উৎসর্গ করছেন
ছবি: লেখক

উৎসব উপলক্ষে লালমাটিয়ার হাউজিং স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জড়ো হন ঢাকায় বসবাসরত কয়েক হাজার গারো। শহুরে জীবনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে দিনভর নিজেদের মতো করে আনন্দে মেতে থাকে তাঁরা। বিদ্যালয়ের মাঠে গড়ে ওঠা অস্থায়ী খাবারের দোকানে ঘুরে ঘুরে স্বাদ নেন নিজেদের ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবারের। কেউ কেউ বাসার জন্য কিনে নেন জুমের আলু, কুমড়া, শামুক, কাঁকড়া ও নানা ধরনের মাছ।

গারো সম্প্রদায়ের জন্য ওয়ানগালা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার এক অনবদ্য প্রচেষ্টা।