জাস্ট বিট ইট

ছবি: কারি নাইট, পেকজেলস ডট কম

বিট বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি সবজি। এমন সুন্দর লাল টুকটুকে সবজি গোটা পৃথিবীতে কম আছে। আমাদের দেশে আগে খুব একটা খাওয়া না হলেও, নানাবিধ পুষ্টিগুণের জন্য স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে এর কদর বেড়েছে।

বিভিন্ন রঙের বিট
ছবি: উইকিপিডিয়া

শরীর ফিট রাখতে চাইলে খেতে পারেন বিট। এতে রয়েছে অনেক ফাইবার, ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন আর ভিটামিন সি। এ ছাড়া আছে প্রোটিন, ভিটামিন বি৬ ও সামান্য ফ্যাট। বিট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে মস্তিষ্ক ও হজম স্বাস্থ্যের দেখভাল করে থাকে। সেই সঙ্গে ইনফ্ল্যামেশন ও ক্যানসারের ঝুঁকিও হ্রাস করতে পারে অসাধারণ সবজিটি।

আজ থেকে হাজার বছর আগে থেকেই বিট খাওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, খ্রিষ্টের জন্মের কয়েক শ বছর আগে ভূমধ্যসাগরীয় কিছু অঞ্চল, যেমন গ্রিক ও রোমান সাম্রাজ্য, মিসর, সিরিয়াতে বিটের চাষ হতো। এ অঞ্চলের বাইরে সেই সময়ে কেবল ওলন্দাজদের দেশে, অর্থাৎ হল্যান্ডে বিট চাষের প্রমাণ পাওয়া যায়। রোমানরা অবশ্য বিট চাষ শুরু করে এর শাক খাওয়ার জন্য। বিটের শাক কিন্তু কোনো অংশে বিটের থেকে কম যায় না! এতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ। মূলত ইউরোপীয়দের মাধ্যমে বিট সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

বোর্স্ট বিট দিয়ে বানানো একটি জনপ্রিয় খাবার
ছবি: উইকিপিডিয়া

বর্তমানে পূর্ব ইউরোপের দেশ, যেমন রাশিয়া, ইউক্রেন, লিথুনিয়া, চেক, স্লোভাকিয়া বেলারুশ, মলদোভা ইত্যাদি দেশের নাগরিকেরা সবচেয়ে বেশি বিট খেয়ে থাকে। এটি দিয়ে বানানো বোস্ট (একধরনের সবজির স্যুপ) এসব দেশের অতি প্রচলিত একটি খাবার। এই বোস্ট পূর্ব ইউরোপবাসীরা যেখানেই অভিবাসী হয়েছে, সেখানেই নিয়ে গেছে। উপাদেয় পদটি বিভিন্ন উৎসবে তারা খেয়ে থাকে।

রাশিয়ার পার্শ্ববর্তী উত্তর এশিয়ার কিছু দেশেও বোস্ট খাওয়া হয়। বিট দিয়ে পোল্যান্ড এবং ইউক্রেনে চিক্লা নামের একধরনের সালাদ বানানো হয়, যা কোল্ড কাট বিফ আর স্যান্ডউইচের সঙ্গে সাইড ডিশ হিসেবে খাওয়া হয়। সুইডেন ও নরডিক কিছু দেশে বিফ আ লা লিন্ডস্ট্রোম (মিটবল) বানাতে বিটকুচি মেশানো হয়। ওই দিকে অস্ট্রেলিয়াতে ঠান্ডা ও গরম মাংসের পদ এবং হ্যামবার্গারের সঙ্গে বিটরুট রেলিশ খেতে দেখা যায়, যা বিট দিয়ে বানানো একধরনের টক মিষ্টি আচার। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও কিন্তু অনেকভাবে বিট খাওয়া হয়।

বিটের আচার
ছবি: উইকিপিডিয়া

এ তো গেল বিট দিয়ে বানানো ঐতিহ্যবাহী, বিখ্যাত খাবারের কাহিনি। এবার জানা যাক বিট আর কী কী উপায়ে খাওয়া যায়। সবজিটি কাঁচা এবং নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায়; আর সেটা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। কাঁচা খেতে চাইলে বানানো যায় বিটের সালাদ, স্মুদি, জুস। বিটের স্মুদি বা জুস কিন্তু শরীরের জন্য অত্যন্ত উপাদেয় একটি খাদ্য। যাঁরা লিভার আর ত্বকের সুস্থতা চান এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে চান, তাঁরা নিয়মিত বিটের জুস বা স্মুদি খেতে পারেন।

বিট সেদ্ধ বা বেক করে অনেক সুস্বাদু খাবার বানানো যায়। শুধু বিট তেল, নুন আর গোলমরিচ দিয়ে রোস্ট করে খেতে বেশ মজার। চাইলে নিরামিষে মেশাতে পারেন। বিট দিয়ে বানাতে পারেন স্যুপ, কাবাব, হাম্মুস, পাস্তা, নুডলস, ফ্রাইড রাইস। এতে এসব সাধারণ খাবারের রং আর স্বাদ—দুটিই হবে খাসা। ইদানীং বিট দিয়ে অনেক ধরনের ডেজার্ট, যেমন রেড ভেলভেট কেক, ব্রাউনি, পুডিং, কুকি, আইসক্রিমও বানানো হচ্ছে। অন্তর্জাল ঘেঁটে রেসিপি দেখে চাইলে ঘরেও বানাতে পারেন এসব সুস্বাদু খাবার। আপনাদের সুবিধার জন্যই নিচে বিট দিয়ে বানানো একটি খাবারের সহজ রেসিপি দেওয়া হলো।

বিটরুট ডিলাইট

উপকরণ

বিটরুট ৫০০ গ্রাম, পানি ২ কাপ, চিনি পৌনে এক কাপ, বিটরুটের সেদ্ধ করা পানি আধা কাপ, কর্নফ্লাওয়ার ৪ টেবিল চামচ, কমলার রস ৩ টেবিল চামচ, ঘি পরিবেশন ট্রেতে ব্রাশ করার জন্য লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, শুকনা নারকেল পাউডার পরিমাণমতো, ঘি ১ টেবিল চামচ, পেস্তাকুচি সাজাবার জন্য।

বিটরুট ডিলাইট
ছবি: প্রথম আলো

প্রণালি

বিটরুট পাতলা গোল করে কেটে নিন। প্যান গরম করে তাতে বিটরুট স্লাইস ২ কাপ পানি দিয়ে জ্বাল দিন। পানি কমে বিটরুট সেদ্ধ হলে নামিয়ে রাখুন। পানি ছেঁকে বিটরুট উঠিয়ে রাখুন। পানিটুকু আলাদা রাখুন। হাত ব্লেন্ডারের সাহায্যে সেদ্ধ করা বিটরুট মসৃণ করে ব্লেন্ড করে নিন। বিটরুটের পানির সঙ্গে কমলার রস মিশিয়ে তাতে কর্নফ্লাওয়ার গুলে নিন। প্যান ধুয়ে ব্লেন্ড করা বিটরুট ও চিনি মিশিয়ে নাড়ুন।

কর্নফ্লাওয়ার ও বিটরুট কমলার রসের মিশ্রণে ঢেলে অনবরত নাড়ুন। ঘন হয়ে জমাট বাঁধা শুরু করলে লেবুর রস ও ঘি দিয়ে ভালো করে নেড়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। ট্রেতে ঘি ব্রাশ করে নিন। ঢেলে স্প্যাচুলা দিয়ে উপরিভাগ সমান করুন। ক্লিন পেপার দিয়ে ঢেকে ৬ ঘণ্টা রেফ্রিজারেটরে রাখুন। এবারে রেফ্রিজারেটর থেকে বের করে চার পাশে ছুড়ি দিয়ে বিটরুট কর্নফ্লাওয়ারের মিশ্রণটাকে সামান্যভাবে ঘুরিয়ে নিন। চারকোনা করে কাটুন। স্প্যাচুলা দিয়ে উঠিয়ে হাতের তালুতে নিয়ে চ্যাপ্টা করুন। এবারে এই ডিলাইট শুকনা নারকেল পাউডারে গড়িয়ে নিন। প্রতিটি ডিলাইটের মাঝখানে আঙুল দিয়ে গর্ত করে সেখানে পেস্তাকুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।