বাঁশকোরলের বিস্কুট বানাল ত্রিপুরা

বাঁশকোরল
ছবি: অর্পন চাঙমা

বাঁশের কচি অঙ্কুর খাদ্য হিসেবে খেতে শুরু করেছিল কারা বা কোন জনগোষ্ঠী, সেটা সঠিকভাবে বলার তেমন কোনো উপায় নেই। তবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা যায়, চীনাদের খাদ্য হিসেবে বাঁশকোরল বা বাঁশের কচি অঙ্কুর খাওয়ার ইতিহাস বেশ পুরোনো। প্রায় সাত হাজার বছর আগে থেকে চীনারা বাঁশের বানানো বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করত বলে জানা যায়। প্রাচীন কি তাং (৬১৮-৯০৭ খ্রিষ্টপূর্ব) সাম্রাজ্যের শাসনামলে চীনারা কচি বাঁশের তৈরি খাবারকে মহামূল্যবান খাবার হিসেবে গণ্য করত। তারা বাঁশকে পুণ্যের প্রতীক হিসেবেও বিবেচনা করে।

নিজ দপ্তরে গণমাধ্যমকে বাঁশকোরলের বিস্কুট বিষয়ে অবহিত করছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের দেশে খাবারে যারা বৈচিত্র্য খোঁজেন, তাঁরা জানেন যে বাঁশকোরল একটি সুস্বাদু খাবার। বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীতে খাদ্য হিসেবে বাঁশকোরলের খুব একটা প্রচলন না থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের মধ্যে এটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবে ব্যাপক প্রচলিত। সবজি হিসেবে কিংবা মাংসের সঙ্গে বাঁশকোরল ভীষণ জনপ্রিয় চাকমা, মারমা ইত্যাদি জনগোষ্ঠীতে। শুধু তা–ই নয়, ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’ নামে পরিচিত রাজ্যগুলোর অন্যতম প্রধান খাবার এটি।

বাংলাদেশে এখনো খাদ্য হিসেবে বাঁশকোরল পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে একটি জনপ্রিয় প্রচলিত খাবার হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন প্রণালিতে সেখানে বাঁশকোরল খাওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন এক ভিন্ন খবর।

বাঁশকোরলের বিস্কুট
ছবি: সংগৃহীত

তিনি তাঁর পোস্টে জানিয়েছেন, ত্রিপুরা সরকার বাঁশকোরল দিয়ে তৈরিকৃত বিস্কুট বাজারজাত করতে শুরু করেছে। বিপ্লব কুমার দেব তাঁর পোস্টে জানিয়েছেন, ময়দা, আটা ও বিস্কুট তৈরির অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে বাঁশকোরলকে পেস্ট করে বানানো হয়েছে সেই বিস্কুট।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পোস্টে জানিয়েছেন, ‘মাল্টিভিটামিনস, মিনারেলসে পরিপূর্ণ বাঁশকোরল স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। এই খাদ্য ক্যানসার ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় হজমেও সুবিধা হয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।’

মাল্টিভিটামিনস, মিনারেলসে পরিপূর্ণ বাঁশকোরল স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। এই খাদ্য ক্যানসার ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় হজমেও সুবিধা হয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
বিপ্লব কুমার দেব, মুখ্যমন্ত্রী, ত্রিপুরা, ভারত

বাঁশকোরলের বিস্কুট বাজারজাত করার জন্য তার প্যাকেজিংয়েও ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ ও রিশা।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর পুরো পোস্ট এখানে তুলে দেওয়া হলো।

“ত্রিপুরার মানুষের প্রিয় খাদ্য বাঁশকোরলকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বাজারজাত করার লক্ষ্যে উদ্যোগী আমাদের সরকার। আজ আন্তর্জাতিক বাঁশ দিবসে প্রাথমিকভাবে বাঁশকোরলের বিস্কুট বাজারজাত করার সূচনা করলাম।

ময়দা, আটা ও বিস্কুট তৈরির অন্যান্য উপকরণের সঙ্গেই বাঁশকোরলকে পেস্ট করে এই বিস্কুট প্রস্তুত করা হয়েছে। মাল্টিভিটামিনস, মিনারেলসে পরিপূর্ণ বাঁশকোরল স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। এই খাদ্য ক্যানসার ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় হজমেও সুবিধা হয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

আমাদের সৌভাগ্য এই যে সুন্দরী ত্রিপুরার মাটিতে যে বাঁশ জন্মায়, তার ৮০ শতাংশই মূলি বাঁশ। মূলি বাঁশের পেস্ট দিয়েই এই বিস্কুট প্রস্তুত করা হয়েছে।

বাঁশকোরলের বিস্কুটকে বাজারজাত করার ক্ষেত্রে প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ ও ত্রিপুরার জনজাতি মানুষের অন্যতম ঐতিহ্য রিশা। বাঁশের তৈরি শিশিতে রাখা থাকবে বাঁশকোরলের বিস্কুট। আর তার আবরণ থাকবে রিশার।

যুবসমাজ যদি এই প্রক্রিয়াকরণে অগ্রসর হয়, তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে। আগামী দিনে বাঁশের শিশিতে মধুও বাজারজাত করা হবে। সামগ্রিক বিষয়টিকে আমরা অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে চাই। আশা করি, আমরা তা করতে সক্ষম হব। এই বিস্কুট প্রস্তুত করার জন্য আমি বিসিডিআইকে ধন্যবাদ জানাই।”