মারাঠিদের ইলিশপ্রেম

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

বাংলাদেশ কিংবা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ মানেই একটা উৎসব উৎসব ভাব। ইলিশ খাওয়া হবে, এটা ভেবেই হয়তো বাঙালিরা আনন্দে ভাসতে থাকে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা গেছে, এবার বাংলাদেশে প্রচুর ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে এবং সেখানে ইলিশের দামও বেশ সস্তা। ফলে এই বিদেশ–বিভুঁইয়ে থেকে মনের চোখে দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের মানুষ এ মৌসুমে প্রাণ ভরে ইলিশ খাচ্ছে!

দুই বাংলার বাঙালিদের ইলিশপ্রীতি সর্বজনবিদিত। তবে অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে ভারতের মহারাষ্ট্রে মারাঠি আর সিন্ধিরাও ইলিশের প্রেমে রীতিমতো হাবুডুবু খায়। তারাও পাতে এক টুকরা ইলিশ পেলে বেজায় খুশি।

মুম্বাইয়ের বাজারে ইলিশ
ছবি: লেখক

বাঙালিদের মতো মারাঠিরাও বর্ষা মৌসুম এলেই ইলিশের অপেক্ষায় থাকে। এখানে ইলিশের নাম অন্য। মারাঠিরা ইলিশকে আদর করে ‘পাল্লা’ বলে ডাকে। আর সিন্ধিরা বলে ‘পাল্লো’। এমনিতে তারা কাঁটাওয়ালা মাছ মোটেও পছন্দ করে না। কাঁটা ছাড়া পমফ্রেট, চিংড়ি, লইট্যা, রাওস, সুরমাই, বাংরা, মান্দেলিসহ আরও নানা সামুদ্রিক মাছ পছন্দ করে মারাঠি ও সিন্ধিরা। তবে ইলিশের কথা ভিন্ন। এ মাছের কাঁটা বেছে খেতে তাদের মোটেও আপত্তি নেই। এক বিশেষ পদ্ধতিতে তারা ইলিশ মাছ কাটে। তাই অপেক্ষাকৃত কাঁটা কম মনে হয়।

ভারতের মহারাষ্ট্রে ইলিশের উৎপাদন একদমই হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে পাশের রাজ্য গুজরাটই তাদের ভরসা। গুজরাটের ‘বরুচ’ থেকে মুম্বাইয়ের বাজারে আসে ইলিশ। স্থানীয় ইলিশ ছাড়া বাংলাদেশ, কলকাতা, মিয়ানমারের ইলিশও মারাঠিদের দারুণ পছন্দ।

মুম্বাইয়ের বাঙালি মাছ ব্যবসায়ী পার্থ মুখার্জি
ছবি: লেখক

মুম্বাইয়ের প্রখ্যাত বাঙালি মাছ ব্যবসায়ী ‘পার্থ’স ফ্রেস ফিশ’-এর মালিক পার্থ মুখার্জি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু বাঙালিরা নয়, মারাঠি, সিন্ধিরাও ইলিশ মাছ ভালোবাসে। আমার দোকানে প্রচুর সিন্ধি ও মারাঠি গ্রাহক ইলিশ কিনতে আসেন। স্থানীয় ইলিশের পাশাপাশি কলকাতা, বাংলাদেশের ইলিশ তারা ভালোবাসে। আমার দোকানে গুজরাটের “বরুচ” থেকে ইলিশ আসে। তবে পদ্মা বা গঙ্গার ধারেকাছেও নয় স্থানীয় ইলিশের স্বাদ।’ তিনি আরও বলেন, ‘মহারাষ্ট্রের সমুদ্র কূলবর্তী কঙ্কন অঞ্চলের বাসিন্দারা ইলিশ বেশি ভালোবাসে। মারাঠিরা মূলত ডিম ভরা ইলিশ বেশি পছন্দ করে। ইলিশের ডিম তাদের খুব প্রিয়। আর সিন্ধিরাও ইলিশের বাহারি পদ বানায়।’

বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর ইলিশ রপ্তানি হয়। এবারও হয়েছে। বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ যেমন পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক জনপ্রিয়, মহারাষ্ট্রেও সে রকম বাংলাদেশি ইলিশের জন্য আলাদা প্রেম আছে। বাংলাদেশের ইলিশ শুনলে এখানকার মানুষও রীতিমতো হাবুডুবু খায়। তাই ইলিশের মৌসুম এলেই মারাঠিরা বাংলাদেশি ইলিশের অপেক্ষায় থাকে। তবে এখন পর্যন্ত মুম্বাইতে বাংলাদেশি ইলিশের দেখা নেই। এমনকি কলকাতার ইলিশেরও এবার দেখা মেলেনি এখন পর্যন্ত। মিয়ানমারের ইলিশ এবারো মাতিয়ে রেখেছে মুম্বাইয়ের মাছের বাজার। কিন্তু দামটা বড্ড বেশি। এক কেজি পরিমাণের ইলিশের দাম পড়ে প্রায় ১ হাজার ৯০০ রুপি। তাই অনেকে স্থানীয় ইলিশ খেয়ে এখন দুধের সাধ ঘোলে মেটাচ্ছেন।

বাংলাদেশের ইলিশ
ছবি: প্রথম আলো

তবে শোনা যাচ্ছে, অচিরেই নাকি মুম্বাইতে বাংলাদেশি ইলিশের আগমন ঘটতে পারে। এ কথা জানালেন মুম্বাইয়ের প্রখ্যাত বাঙালি মাছ ব্যবসায়ী পার্থ মুখার্জি। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন। পার্থ মুখার্জি প্রথম আলোকে যা বললেন, তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায়, সিন্ধি ও মারাঠি গ্রাহকেরা বাংলা অঞ্চলের অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের ইলিশ বেশি ভালোবাসেন। বাংলাদেশি ইলিশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মুম্বাইয়ের মাছের বাজার বাংলাদেশ, মিয়ানমার আর কলকাতার ইলিশের দখলে থাকে। তবে এবার শুধু মিয়ানমার আর স্থানীয় ইলিশ খেয়েই মৎস্যপ্রেমীদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। কারণ কলকাতায়ও এবার ভালো ইলিশ ওঠেনি। আগে চোরাই পথে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মুম্বাইয়ে আসত। ইলিশ ব্ল্যাকে বিক্রি হতো বলে দাম ছিল বেশ চড়া। সুখবর যে এখন বাংলাদেশ থেকে ইলিশের আমদানি বৈধ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তাই হয়তো ইলিশের দাম কিছুটা কম হবে। শিগগিরই আইনকানুন মেনে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ হাজার কেজি ইলিশ ভারতে আসবে।’