যেভাবে ‘বিষাক্ত আপেল’ থেকে ‘লাভ আপেল’ হলো টমেটো
অনেককেই বলতে শুনবেন, ‘শীতকাল ভালো লাগে, কারণ এটা টমেটো আর ফুলকপির মৌসুম।’ লাল টকটকে টমেটো এখন সব রান্নাঘরেই পাওয়া যাবে। ফল, সবজি, সালাদ, সস, চাটনি—নানাভাবে খাওয়া যায় টমেটো। এখন তো টমেটো ছাড়া খাবার টেবিলই অসম্পূর্ণ! অথচ মজার ব্যাপার কি জানেন? একসময় টমেটো খেতে ভয় পেত মানুষ, সবজি বা ফলটার ডাকনামই ছিল তখন ‘বিষাক্ত আপেল’।
৭০০ সালের দিকে কেবল মধ্য মেক্সিকোর অ্যাজটেক গোষ্ঠীর লোকেরা টমেটো খেতে পছন্দ করত। আর ১৫৯০ সালের আগে যুক্তরাজ্যে টমেটো উৎপাদনই করা হতো না। কিন্তু ১৬ শতকের শুরুর দিকে মেক্সিকোর বিভিন্ন অংশ অভিযান করে আসা স্প্যানিশরা ইউরোপে টমেটোর বীজ লাগাতে শুরু করে। এরপরই ইউরোপে ধীরে ধীরে টমেটোর উৎপাদন শুরু হয়।
গবেষকের বলেন, ইউরোপে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে টমেটো উৎপাদন শুরু হয় ১৫১৯ সালে। তাঁদের মতে, এর আগে কেবল বাগানের শোভা বাড়াতেই টমেটো গাছ লাগানো হতো। ১৭০০ সালের দিকে টমেটোকে রীতিমতো ভয় পেত ইউরোপ। অভিজাত শ্রেণির মানুষেরা মনে করতেন, এই ফল খেলেই তাঁরা অসুস্থ হবেন বা মারা যাবেন।
আসলে তাঁরা পিউটারের তৈরি থালায় রাখতেন টমেটো। সেখানে সিসার পরিমাণ ছিল বেশি। টমেটোয় যেহেতু অম্লতা থাকে বেশি, তাই সিসার সঙ্গে সংমিশ্রণে বিষক্রিয়া তৈরি করত, মারা যেত মানুষ। কিন্তু বিষয়টার ভেতরের ব্যাপার না জানার কারণে টমেটোকেই মনে করা হতো ‘অপরাধী’। উত্তর আমেরিকাতেও টমেটোকে বিষাক্ত মনে করা হতো। মনে করা হতো এটি সোলানাসিগাছের একটি জাত, যাতে বিষাক্ত ট্রপেন অ্যালকালয়েড নামের পদার্থ আছে।
১৮৮০ সালের দিকে এসে ইউরোপে এমন ধারণা বদলাতে থাকে। জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে পিৎজা। পিৎজার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে টমেটোর। ইতালিতে একে ‘লাভ আপেল’ বা ‘প্রেম আপেল’ বলা শুরু হয়। ১৮২২ সালের দিকে আমেরিকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে টমেটো দিয়ে তৈরি নানা রকম খাবারের রেসিপি প্রকাশিত হতে শুরু করে। এতে টমেটোর বিষাক্ত হওয়ার গুজব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ১৮৩০ সালে নিউইয়র্কেও শুরু হয় ‘লাভ আপেল’ নামে পরিচিত টমেটোর চাষ।
সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন