রসনায় মাত্রা আনতে তুরস্কের পদ

তুরস্কের দুটি পদ: মুহালাবিয়া ও শিশ কাবাবপ্রথম আলো

মুহালাবিয়া

আরবিতে বলা হয় মুহালেবি; হিবরুতে মালাবি। এটি আসলে এক ধরনের পুডিং। ২২৪ থেকে ৬৫১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পারস্যের সাসানিয়া সাম্রাজ্যে মুহালেবির উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়। চাল, চালের গুঁড়া, চিনি এবং দুধ হলো এর মূল উপকরণ। মিষ্টির এই পদ তুরস্ক, ইসরায়েল এবং অন্যান্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে সমধিক জনপ্রিয়। মধ্যযুগে মুহালেবি এবং এরই মতো ইউরোপের একটি পদ ব্লঁমাঞ্জ তৈরি হতো চিকন চিকন করে কাটা মুরগির মাংস দিয়ে। তবে চির চারিত রেসিপি এখনো অনুসৃত হয় তুরস্কে। মুহালেবিকে মুহালাবিয়াও বলা হয়ে থাকে।

কিংবদন্তি রয়েছে, জনৈক পারসিক রন্ধনশিল্পী সপ্তদশ শতকের শেষদিকে এই পদটি আরবদের মধ্যে পরিচয় ঘটান। আল-মুহালেব ইবন আবি সুফরা নামের একজন আরব সেনাপতিকে তিনি এই মিষ্টি পরিবেশন করেন। এটা খেয়ে পরম তৃপ্ত সেনাপতি এর নামই রেখে দেন নিজের নামে। দশম শতকেই মুহালেবির ছিল তিনটি ধরন। ঘন দুধ আর চালের গুঁড়া দিয়ে যেমন তৈরি করা হতো তেমনি দুধ, চাল আর মুরগির মাংস দিয়েও রান্না করা হতো। এ ছাড়া তৃতীয় ধরনটি তৈরি হতো ডিমের কাস্টারড দিয়ে। তবে চাল বা চালের গুঁড়া থাকত না।

মুহালাবিয়ার সবচেয়ে পুরোনো রেসিপি মেলে বাগদাদে বসবাসকারী আরব লেখক ইবন সাইয়ার আল ওয়ারাখের কিতাব আল-তাবিখ গ্রন্থে। অবশ্য ত্রয়োদশ শতকে কিতাব আল-তাবিখ নামে মুহাম্মদ বিন হাসান আল-বাগদাদির বই এবং আন্দালুসিয়ার একটি বইতে মুহালাবিয়ার রেসিপি গ্রন্থিত হওয়ার কথা জানা যায়।

মুহালাবিয়ার সবচেয়ে পুরোনো রেসিপি মেলে বাগদাদে বসবাসকারী আরব লেখক ইবন সাইয়ার আল ওয়ারাখের কিতাব আল-তাবিখ গ্রন্থে। অবশ্য ত্রয়োদশ শতকে কিতাব আল-তাবিখ নামে মুহাম্মদ বিন হাসান আল-বাগদাদির বই এবং আন্দালুসিয়ার একটি বইতে মুহালাবিয়ার রেসিপি গ্রন্থিত হওয়ার কথা জানা যায়। পরের বইতে মুরগির মাংসের বদলে ছাগলের মাংস ব্যবহারের উল্লেখ মেলে। অটোমান সম্রাট মেহমেদের সময় দুই ধরনের রেসিপি ছিল। একটি মাংসসহ অন্যটি মাংস ছাড়া। পরেরটিতে গোলাপজলের ব্যবহার ছিল। উনিশ শতকের ইংরেজি রান্নার বইতে মুহালাবিয়াকে রমজানের কেক বলে বর্ণনা করা হয়।

মুহালাবিয়ার রেসিপি

উপকরণ: দুধ ৩ কাপ, কর্নফ্লাওয়ার ৬ টেবিল চামচ, ঠান্ডা পানি ১ কাপ, চিনি ১ কাপের ৪ ভাগের ৩ ভাগ অংশ, হুইপড ক্রিম ১ কাপ, গোলাপজল ১ টেবিল চামচ, এলাচ গুঁড়া সিকি চা-চামচ।

প্রণালি: দুধ ও চিনি একসঙ্গে জ্বাল দিন। কর্নফ্লাওয়ার পানিতে ভালো করে গুলে নিন। এবার ওই দুধে মিশিয়ে মাঝারি আঁচে নাড়তে থাকুন। ঘন হয়ে এলে নামিয়ে এতে ক্রিম, এলাচ দানা ও গোলাপজল মিশিয়ে নিন। এরপর ফ্রিজে ২-৪ ঘণ্টার জন্য জমতে দিন। ইচ্ছা হলে এতে চালও দেওয়া যায়। ২ কাপ দুধে ১ কাপ চাল এভাবে।

রেসিপি দিয়েছেন: আফরোজা নাজনীন

শিশ কাবাব

কাঠি বা শিকে গেঁথে আগুনে ঝলসানো মাংসকেই কাবাব বলা হয়। অনেক ধরনেরই কাবাব রয়েছে। তবে এর উৎপত্তির সঙ্গে তুরস্ক রয়েছে বলেই ধারণা করা হয়। কারণ সেখানে সৈনিকেরা প্রায়শই পশুর মাংস লোহার শিক বা কখনো কখনো তরোয়ালে গেঁথে আগুনে ঝলসে নিয়ে রসনা তৃপ্তি করত। ১৩৭৭ সালে লেখা তুরস্কের কিসসা-ই-ইউসুফ গ্রন্থ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

‍তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় পদ শিশ কাবাব
প্রথম আলো

শিশ কাবাব বস্তুত কাবারেরই একটি ধরন। চারকোনা করে কাটা মাংস মসলা মাখিয়ে রেখে (যাকে বলে ম্যারিনেট করে রাখা) শিক বা কাঠিতে গেঁথে আগুনে ঝলসানো হয়। এই শিশ কাবাবের সঙ্গে মিল আছে শাসলিকের। এই পদটি আবার ককেশাস অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে মাংসের নানা পদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় শিশ কাবাব। সাধারণভাবে এই কাবাব ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি হয়।

তুর্কি ভাষায় শিশ অর্থ তরোয়াল বা শিক। আর কেবাপ মানে ঝলসানো মাংস। ১৯১৪ সালে সিনক্লেয়ার লুইসের আওয়ার মিস্টার ওয়ারেন উপন্যাসে শিশ কাবাবের উল্লেখ মেলে।

শিশ কাবাবের রেসিপি

উপকরণ: হাড় ছাড়া খাসির মাংস কিউব করে কাটা ১ কেজি, টক দই ৩ টেবিল চামচ, লাল মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, প্যাপরিকা আধা চা-চামচ, জিরার গুঁড়া আধা চা-চামচ, রসুনের গুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, জলপাইয়ের তেল ৩ টেবিল চামচ।

প্রণালি: মাংসসহ সব উপকরণ একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ফ্রিজে সারা রাত বা কমপক্ষে ২ ঘণ্টা ম্যারিনেট করুন। এরপর শিকে বা শাসলিক কাঠিতে গেঁথে ওভেনে ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে বাদামি রং না হওয়া পর্যন্ত গ্রিল করে নিন। সালাদ, নান বা পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশন করুন মাজাদার এই টার্কিশ কাবাব।

রেসিপি দিয়েছেন: আফরোজা নাজনীন