লেটস ইট পিৎজা
প্রথম বেতন পেয়ে ম্যারাডোনা কী করেছিলেন? ম্যারাডোনা বিষয়ে এত তথ্য আমরা জানি আর এটা জানব না!
ম্যারাডোনা! পৃথিবীতে এই একটা নাম মানুষ শোনেননি কিংবা তাঁর বিষয়ে অন্তত একটা তথ্য জানেন না, এটা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। যাঁরা ব্রাজিলের পাঁড় ভক্ত, তাঁরা আর্জেন্টিনা দলকে পছন্দ না করলেও পছন্দ করেন ম্যারাডোনাকে। এমনও বলতে শোনা যায়, কেন ম্যারাডোনার জন্ম আর্জেন্টিনায় হলো!
ফুটবলে ম্যারাডোনা আলটিমেট ফেবারিট কোনো সন্দেহ ছাড়াই। কিন্তু ম্যারাডোনার ফেবারিট খাবার—প্রসঙ্গ এটা হলে একটু খোঁজখবর করতে হয় বৈকি। কারণ, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন খাবার চেখে দেখা ম্যারাডোনার মতো একজন কিংবদন্তির প্রিয় খাবার খুঁজে বের করাটা সত্যিই কষ্টকর। নেটে একটু ঘাঁটলে অনেক অনেক তথ্য পাওয়া যাবে ম্যারাডোনার খাবার নিয়ে। কিন্তু সত্যি সেগুলো তাঁর ফেবারিট খাবারের তালিকায় ছিল কি না, সে বিষয়ে কেউ নিঃসন্দেহ নন। সম্ভবত ম্যারাডোনা নিজেও সন্দেহমুক্ত নন!
এবার আসা যাক প্রসঙ্গে, ম্যারাডোনার ফেবারিট খানাখাদ্য। আগেই বলেছি, প্রচুর তথ্য পাওয়া যাবে। এই ‘প্রচুর’ তথ্য থেকে যদি একটা সরল ধারণায় আসার চেষ্টা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে, পিৎজা, পাস্তা ও কেক—এই তিন খাবার তিনি পছন্দ করতেন। অন্যান্য খাবার যে তাঁর অপছন্দের ছিল, তা নয়। তবে বারবার তিনি এই তিন খাবারে ফিরে আসতেন এবং উপভোগ করতেন বলেই জানা যায়।
‘লেটস ইট পিৎজা’ পিৎজা নিয়ে ম্যারাডোনার কিংবদন্তিসম উক্তি এটি। ঘটনাটা কী? বালক ম্যারাডোনা ফুটবল খেলে প্রথমবার টাকা উপার্জন করেছেন। বলা বাহুল্য, আবেগ আর উত্তেজনায় বিমোহিত ম্যারাডোনা আশ্রয় খুঁজেছেন মায়ের কোলেই। প্রথম পাওয়া টাকা নিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে ভবিষ্যতে ফুটবল ঈশ্বর হতে যাওয়া ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘লেটস ইট পিৎজা।’ তারপর তাঁরা বুয়েনস এইরেসের উপকণ্ঠ নুইভা পম্পেইয়ার একটি পিৎজার দোকান লা রাম্বায় গিয়ে পিৎজা খেয়েছিল পুরো পরিবার।
সম্ভবত ফুটবলের মতো পিৎজাও ম্যারাডোনার প্রথম পছন্দের বিষয় ছিল। কারণ, প্রায় সারা জীবন পিৎজা নিয়ে বিভিন্ন ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। এর কিছু যেমন তিনি নিজেই ঘটিয়েছেন, তেমনি কিছু ঘটনা ঘটেছে তাঁকে ঘিরে। এর একটি বিখ্যাত ঘটনা হলো, ইতালির নেপলসে পিৎজারিয়া ভিনসেনজো কস্টা নামে একটি পিৎজার দোকান আছে। এর মালিক ও শেফ ভিনসেনজো কস্টা। নেপলসের অন্য দশজনের মতো তিনিও ম্যারাডোনাকে ভালোবাসতেন সহনাগরিক হওয়ার জন্য। এই ভালোবাসা থেকেই তিনি তাঁর তৈরি করা একটি পিৎজার নামকরণ করেন ‘পিৎজা ম্যারাডোনা’।
নেপলসের বিখ্যাত ‘দ্য মিশেল’ নামের পিৎজার দোকানটি ম্যারাডোনার মৃত্যুতে তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে যা লিখেছে, তার বাংলা অনুবাদ করা যায়, ‘কিংবদন্তি, মানুষ, আমাদের নম্বর ১০। আমরা তোমাকে মিস করব ডিয়েগো।’ দ্য মিশেলের এই হৃদয়নিংড়ানো শোকের কারণ, নেপলসে থাকাকালে ম্যারাডোনা এ পিৎজারিয়ায় প্রায় নিয়মিত আসতেন পিৎজা খেতে। অনেকেই এক ধাপ বাড়িয়ে বলেন, ম্যারাডোনা নাকি দ্য মিশেল, কে কাকে বিখ্যাত করেছে, সেটা বিতর্কসাপেক্ষ!
একটা সময় ম্যারাডোনার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। বেঢপ চর্বি জমিয়ে ফেলেন তিনি শরীরে। তার ওপর ছিল কোকেনে আসক্তি। এ সময় তাঁর খাবারের মেন্যুতে ছিল পিৎজা, পাস্তা, কেক আর স্টেক। কোকেনে আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দীর্ঘ ১০ মাসের চিকিৎসা চলেছিল ম্যারাডোনার। সে সময় একবার খুব কষ্ট করে পরিবার ও বন্ধুদের কাছে নিজের খাবার থেকে পিৎজা বাদ দিতে বলেছিলেন তিনি। পিৎজার প্রতি ম্যারাডোনার এই দুর্বার রহস্যজনক আকর্ষণের কোনো ব্যাখ্যা কেউ দাঁড় করাতে পারেনি। কেক বিষয়েও একই কথা বলা যায়। ৪৫তম জন্মদিন পালনের সময় জন্মদিনের কেকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি সমবেত শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমার বয়স ৪৫ এবং এখনো আমি জীবিত।’
কিন্তু ম্যারাডোনা কেন মূলত ইতালিয়ান খাবার পিৎজা ও পাস্তা খেতে পছন্দ করতেন? এর বড় কারণ, ইতালিয়ান স্ট্যাপল ফুড পিৎজা ও পাস্তা আর্জেন্টিনাতেও খাওয়া হয় সাধারণভাবেই। এর ফলে ইতালিয়ান এ খাবারগুলোর প্রচুর রেসিপি তৈরি হয়েছে আর্জেন্টিনায়। যেমন ফেইনা বা ফারিনাটা নামে ইতালিয়ান কুজিন প্রভাবিত একটি পিৎজা আছে আর্জেন্টিনার, যেটি পৃথিবীতে আর্জেন্টিনার পিৎজা হিসেবেই পরিচিত। পাস্তার বেলাতেও একই কথা বলা যায়। ফলে ম্যারাডোনা এই খাবারগুলোর প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল থাকবেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এ ছাড়া ম্যারাডোনা দীর্ঘ সময় ফুটবল খেলেছেন ইতালিতে। এটিও তাঁর পিৎজা-পাস্তার প্রতি দুর্বল হওয়ার বড় কারণ হতে পারে। আর কেকের প্রতি দুর্বলতা কার না থাকে?
স্টেক! আর্জেন্টিনার স্থানীয় স্টেকের নাম অ্যাসাডো। বিফ, পর্ক, চিকেন—যেকোনো ধরনের মাংসেই তৈরি হয় এই খাবার এবং এটি আর্জেন্টিনায় ভীষণভাবে জনপ্রিয়। যদি ১০টি আর্জেন্টাইন খাবারের তালিকা তৈরি করা হয়, তাহলে এই অ্যাসাডোর অবস্থান হবে এক থেকে তিনের মধ্যে। আর্জেন্টাইন ম্যারাডোনার খাবারের তালিকায় এ খাবার থাকবে না, সেটা ভাবলেন কীভাবে? ওপরে আগেই বলেছি, একসময় তাঁর খাবারের মেনুতে ছিল স্টেক।
তবে যা-ই বলি না কেন, পৃথিবীর ফুটবল ঈশ্বরের পিৎজাপ্রীতি ফুটবলের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
ফুটবলের উত্তেজনা, ভক্তদের চাপ, ব্যক্তিগত জীবনের উত্থান-পতন—সব থেমে গেছে। এখন এক নিরুদ্বেগ জীবন। ভালো থাকবেন, ম্যারাডোনা। আমরা আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি, কিংবদন্তি!