হাসি খুশি সুশি

সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক মিল। দুই দেশের জাতীয় পতাকার মাঝে রক্তলাল বৃত্ত। জাপান ও বাংলাদেশ—দুই দেশের বাসিন্দাদেরই প্রধান খাদ্য ভাত। কিন্তু শিক্ষা, প্রযুক্তি আর কর্মসংস্কৃতির বিস্তর ফারাক দুই দেশের অর্থনীতিতে গড়ে দিয়েছে বিশাল ব্যবধান। বিশ্বজুড়ে জাপানি প্রযুক্তি আর পণ্যের কদর, তারই হাত ধরে নানান জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে জাপানি খাদ্যসংস্কৃতি। জাপানিদের দীর্ঘায়ু আর সুস্বাস্থ্যের রহস্য লুকিয়ে আছে তাদের খাদ্যাভ্যাসে। তাই তো বিশ্বজুড়ে দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে জাপানি খাবারের।

ডরিন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের প্রধান শেফ কাইকি চেরিকোনে ও তাঁর সহকর্মী শেফ বেলাল

সেই জাপানি খাবারের সবচেয়ে পরিচিত নাম সুশি। সহজ করে বললে যা মূলত ভাতে মোড়ানো মাছ। যদিও সুশি বানানো এতটা সহজ নয়, তবে খুব কঠিনও নয়। আমরা বাংলাদেশে যেমন ঝরঝরে ভাত পছন্দ করি, জাপানে ঠিক উল্টো। কাঠি দিয়ে খেতে হয় বলেই বোধ হয় জাপানিরা আঠালো চালের ভাত খেতেই পছন্দ করেন। যদিও গল্প হচ্ছে, জাপানিরা যেন ভাতের মতোই একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে, সে জন্যই এই আঠালো চালের ভাত খাওয়া হয় জাপানি খাদ্যসংস্কৃতিতে।

নোরি শিট বা একধরনের সামুদ্রিক আগাছাকে শুকিয়ে মণ্ড বানিয়ে তা দিয়ে পাতলা কাগজের মতো একটা জিনিস বানানো হয়, যেটা জাপানি খাদ্যসংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেক খাবারেই আছে এর ব্যবহার, তবে সুশি বানাতে নোরি শিট লাগবেই। বাঁশের তৈরি সুশি ম্যাটের ওপর নোরি শিট বিছিয়ে তার ওপর ঢেলে দেওয়া হয় ভিনেগারে ভেজানো জাপানি চালের ভাত, যা আঠালো। এরপর সেই ভাতের ওপর পছন্দসই উপকরণ বিছিয়ে নেওয়ার পালা। সেটা স্যামন মাছের টুকরা হতে পারে, কাঁকড়ার মাংস হতে পারে, চিংড়ি বা স্বাদ অনুযায়ী অন্য অনেক কিছুই দেওয়া হতে পারে সুশির ভেতর।

রোল করার পর দেয়া হচ্ছে তোবিকো

এবার পুরো জিনিসটাকেই শীতলপাটিতে গুটিয়ে ফেলার মতো করে ‘রোল’ করে নেওয়া হয় বাঁশের রোলার ম্যাটের সাহায্যে। কিছুক্ষণ চেপে রাখার পর বাঁশের পাটিটা খুলে ফেললেই লম্বা একটা ভাতের রোলের চেহারা দেখা যাবে। এবারেই সবচেয়ে কঠিন কাজ! সামুরাই যোদ্ধার তলোয়ারের মতো ধারালো ছুরি দিয়ে নিপুণভাবে কাটতে হবে সুশি। যাতে একটুও না ভাঙে, খসে না পড়ে একদানা চালও। ভাতের ভেতর আটকে থাকা মাছের টুকরাও যেন খসে না আসে। ধারালো ছুরির ফলায় নিপুণভাবে কেটে নেওয়া সুশি পরিবেশন করা হয় সয়া সস আর ওয়াসাবি সসের সঙ্গে।

কাটার ধরন আর উপকরণের ওপর ভিত্তি করে সুশি অনেক নামের হয়ে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়া মাকি রোল, নিগিরিজোশি, ওশিজুশি—এমন অনেক নামই আছে, যা বেশির ভাগই বাঙালি জিবে উচ্চারণ করা শক্ত। মাছে–ভাতে বাঙালি হলেও সেই মাছ আর ভাতের ভিন্ন আঙ্গিকের পরিবেশনা সুশি কেন আলাদা, সেটাই জানিয়েছেন ডোরিন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের প্রধান শেফ কাইকি চেরিকোনে, ‘বাংলাদেশের স্থানীয় ভাতের চাল আর সুশির চাল একদমই আলাদা। এখানে আমরা সাধারণত বাসমতি বা চিনিগুঁড়া চাল ব্যবহার করি। তবে জাপানি চাল একদমই আলাদা আর রান্নার পদ্ধতিটাও ভিন্ন। এখানে চালটাকে গরম পানিতে ফুটিয়ে নেওয়া হয়, তাতে মেশানো হয় ভিনেগার আর কিছুটা চিনি। তবে বছর দুয়েক ধরে বাংলাদেশে সুশি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।’

কাটা হতে হবে নিখুঁত

শেফ কাইকির কথায় আরও জানা গেল, স্থানীয় অতিথিরাই খুব আগ্রহ নিয়ে চেখে দেখছেন জাপানি স্বাদের সুশি, ‘আমাদের ডোরিন হোটেলে অতিথিদের জন্য রেখেছি সুশি প্ল্যাটার, যেখানে ছয় রকমের সুশি আছে এবং অতিথিরা এটা খুব পছন্দ করছেন’ বলেই জানিয়েছেন ব্রাজিল থেকে আগত এই শেফ।

বাড়িতে বসে যাঁরা সুশি বানাতে চান, তাঁদের জন্যও ছোট্ট একটা টিপস দিয়েছেন শেফ, ‘চাল, চিংড়ি, সবজি, সিসেমি সিড (তিল), ভিনেগার—এসব আপনি স্থানীয় বাজার বা সুপারমার্কেটে পেয়ে যাবেন। আপনাকে তোবিকো (একধরনের মাছের ডিম) পেতে হয়তো একটু কষ্ট করতে হবে। তবে খাঁটি চীনা বা জাপানি পণ্য বিক্রি করে এমন কোনো দোকানে গেলেই সেটা আপনি পেয়ে যাবেন।’

সুশি খান খুমি থাকুন

বিশ্ব সুশি দিবস উপলক্ষে ডোরিন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের নিজস্ব আয়োজনে নানান স্বাদের সুশি চেখে দেখতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শেফ কাইকি। আর যাঁরা এই আমন্ত্রণে সাড়া দিতে পারছেন না, তাঁরা সুশি দিবসে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন সুশি আর থাকুন হাসিখুশি!

বিশেষ কৃতজ্ঞতা: ডোরিন হোটেল ও রিসোর্টস