ছুটি কাটান, নাকি কেটে যায়

কর্মব্যাস্ত জীবনে ছুটির দিনটি কাটুক আনন্দে। মডেল: জারা ও শুভছবি: সুমন ইউসুফ

‘ছুটি, ছুটি, গরম-গরম রুটি’। ছোটবেলায় স্কুল ছুটির দিনগুলোতে এই বাক্য অনেকের নিশ্চয়ই খুব প্রিয় ছিল। কিন্তু বয়সের ফেরে কত কিছু্ই তো পাল্টে যায়! পাল্টায় ছুটির সংজ্ঞাও। কর্মজীবনে ছুটির দিনগুলো কেমন কাটবে, সেটি তাই অনেকাংশে নির্ভর করে গরম রুটি আয়েশে খেতে পারছেন, নাকি রুটির জোগাড়যন্ত্রর করতে সময় কেটে যাচ্ছে, তার ওপর।

সাপ্তাহিক ছুটি তাই অনেক ক্ষেত্রেই মহার্ঘ্য বস্তুর মর্যাদা পেয়ে যায়। ব্যস্ত কর্মজীবনে ওই দিনই যে একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ। তবে কখনো কখনো সেই দিনও মাটি হয়ে যেতে পারে। দেখা গেল, অন্যান্য দিনের মতো অভ্যাসবশত ছুটির দিনটাতেও বসে গেলে অফিসের ই–মেইল ঘাঁটাঘাঁটির কাজে! কিংবা অফিসের কোনো বাড়তি কাজ শেষ করার ভাবনা মাথায় নিয়ে নিলেন। এমনটি করেছেন তো ছুটির দিনটাই মাটি। দেখা গেল দিন শেষে ছুটির দিনটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে গেল ঠিকই, কিন্তু আয়োজন করে ‘কাটানো’ আর হলো না।

এমন অবস্থা থেকে মুক্তি চাইলে ছুটির দিনটা ছুটি হিসেবেই মেনে নিতে হবে আগে। এমন কিছু করতে হবে, যাতে ছুটিটা নষ্ট না হয়। আসুন, সে ব্যাপারেই একটু ঝালিয়ে নেওয়া যাক:

১. যা করা হয় না, সেটি করুন

হয়তো কাজের চাপে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের গলায় গলায় মিল থাকা বন্ধুর সঙ্গে ‘হাই–হ্যালো’ করারও সময় পান না। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ওই বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে পারেন। এ জন্য আলাদা করে সময় বরাদ্দ করতে পারেন। বিদেশে থাকা আত্মীয়–পরিজনের সঙ্গে অন্তর্জালের দুনিয়ায় গল্পও হতে পারে। অন্যান্য কর্মদিবসে ব্যস্ততার কারণে এসব ব্যক্তিগত যোগাযোগে হয়তো মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু ছুটির দিনে এসবকেই প্রাধান্য দিতে পারেন।

২. ঘুরে বেড়ানো

এক দিনের জন্য শহরের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে পারেন। যেতে পারেন কোনো রিসোর্ট বা বিনোদন কেন্দ্রে। বিশেষ করে শহুরে পরিবেশ থেকে যেতে পারেন গ্রামের দিকে। এতে প্রকৃতির পরশ পাবে মন। ছুটির দিনটিতে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ুন, ক্ষতি তো নেই কোনো।

৩. ব্যক্তিগত কাজ

ছুটির দিনে নিজের একান্ত কিছু ব্যক্তিগত কাজ করতে পারেন। যেমন নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে হিসাব–নিকাশ। বাস্তব জীবনের পাশাপাশি আমাদের প্রায় সবারই এখন ডিজিটাল জীবন আছে। চাইলে নিজের ভার্চ্যুয়াল জীবন অর্থাৎ ফেসবুক, টু্ইটারের অ্যাকাউন্টগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এতে লাভই কিন্তু বেশি। আবার কাজের ব্যস্ততায় অন্য দিনগুলোতে হয়তো বাসা গোছানোও ঠিকমতো হয় না। ছুটির দিনটিতে তাতে মনোযোগ দিতে পারেন।

৪. টিভি নাকি মুভি?

হ্যাঁ, ছুটির দিনটায় টেলিভিশনের রিমোট নিয়ে একটু নাড়াচাড়া হতেই পারে। দেখতে পারেন পছন্দের কোনো নাটক বা সিরিজ। খেলার দুনিয়া তো থাকছেই। আয়োজন করে সিনেমা দেখাও ভালো। পরিবারের সবার সঙ্গে বসে পছন্দের খাবার খেতে খেতে সিনেমা দেখার মজাই আলাদা! এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হৃদ্যতা যেমন বাড়ে, তেমনি সময়ও কাটে দারুণ।

৫. কিছু রাঁধবেন?

গরম–গরম রুটি বানানোর কথা আগেই উঠেছে। বাধ্য হয়ে রুটি বানানোর বিষয়টিকে চাইলে ইচ্ছায় বদলে দিতে পারেন। খিদে পেলে খেতে হবেই। কিন্তু এর সঙ্গে শখ করে নতুন কোনো পদ রান্না করার বিষয়টি যোগ করে নিলে দেখা যাবে পুরো বিষয়টি আনন্দময় হয়ে উঠছে। এ কাজে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও যুক্ত করতে পারেন। দেখা যাবে, হইহই রইরই করতে করতে তৈরি হয়ে যাবে নতুন কোনো পদ।

৬. শুয়ে–বসে কাটালে ক্ষতি কি?

কোনো ক্ষতি নেই। যদি মনে করেন, সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে দুর্নিবার গতিতে কাজ করার জন্য নিজের পরিপূর্ণ বিশ্রামই একমাত্র সমাধান, তবে তা–ই করুন। স্রেফ শুয়ে–বসে কাটিয়ে দিন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিতান্ত অলস সময় কাটানোও ভালো। এতে সমস্যা সমাধানসহ সৃষ্টিশীল নানা কাজে নতুন উদ্যম পাওয়া যায়। সুতরাং মনে রাখবেন, অলসতাও খারাপ কিছু নয়। আপনি তা উপভোগ করছেন কি না, সেটিই আসল।

তথ্যসূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ইউএস নিউজ, দ্য মুজে ডটকম, ফোর্বস ও হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ ডট ওআরজি