বিচ্ছেদের পর নিজেকে নতুনভাবে আবিস্কার করুন

যেকোনো বিচ্ছেদই কষ্টের। প্রেম হোক বা বিয়ে—সুখের সময় কাটানোর পর হঠাৎ বিচ্ছেদ হলে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। তবে এই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে সহজ করে নিতে হবে। বিচ্ছেদের পর হাজারো প্রশ্ন উঁকি দেয় মনে। তার মধ্যে বেশি মনে হয়, ‘কেন এমন হলো?’ তবে এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব মন অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া জরুরি। পেছন দিকে না তাকিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। নিজের ওপর মনোযোগ দিয়ে আবিষ্কার করুন নতুন ‘আমি’কে।

যেকোনো বিচ্ছেদই কষ্টের
ছবি: প্রথম আলো

পরিচিত লোকজন হয়তো আপনাকে বলবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে মনখারাপ। কখনো কখনো এটি সত্যি হলেও অধিকাংশের জন্য এই সময়ে নিজেকে শক্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিটি দিন যায় আর নিজেকে ঘিরে ধরে আরও বেশি একাকিত্বে। সদ্য সাবেকের অনুপস্থিতিতে সবকিছু শূন্য মনে হয়। এই সময়ে অনেকে আবেগের বশে নিজেকেই শেষ করে দেন। তবে এই সময়ে এসব ভাবনা মনে না এনে, বরং নিজেকে ভালো রাখতে ব্যস্ত হওয়া জরুরি। এত দিন নিজেকে নিয়ে যেভাবে ভাবেননি, এবার সেই কাজ শুরু করুন। অন্যের ভালো লাগার কথা ভাবতে ভাবতে পার করা দিনগুলো এখন অতীত। এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার কী ভালো লাগে। এসব খুঁজে বের করুন আর আবিষ্কার করুন নতুন আমিকে।

নিজেই নিজেকে খুশি করুন

অতীতের শিক্ষা কাজে লাগান
ছবি: প্রথম আলো

জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের নিয়মিত পরিবর্তন করে দেয়, অনেক সময় আমরা বিষয়টা বুঝতেও পারি না। প্রতিদিনের প্রতিটি ঘটনা আমাদের পরিণত করে, ঋদ্ধ করে। অনেক দিন ধরে আপনার ইচ্ছে করছিল কোনো পাহাড়ে গিয়ে ঝুম বৃষ্টি দেখার। হয়তো ইচ্ছে ছিল ঘন শালবনের মধ্যে দাঁড়িয়ে হেমন্তে পাতাদের ঝরে পড়ার ছবি আঁকবেন। দিন পার করে দেবেন সমুদ্রের ঢেউ গুনে। বিচ্ছেদে সেই পাগলামিগুলোকেই নাহয় উসকে দিন। মনের আনন্দের জন্য ছুটে যান বন, পাহাড় বা সমুদ্রে। দেখুন, বেঁচে থাকার মধ্যে কত আনন্দ আছে। নিজেই নিজেকে এবার ট্রিট দিন, ভেঙে না পড়ে সামনে তাকান।

আপনার সঙ্গীর সঙ্গে কাটানো সময়গুলোতেও হয়তো আপনি অনেক কিছু শিখেছেন। সেসব বিষয় নিজের জীবনে কাজে লাগান। তাঁকে ঘৃণা না করে স্বাভাবিক থাকুন। হয়তো এটাই (বিচ্ছেদ) আপনার জন্য ভালো হয়েছে।

সম্পর্ক টিকে থাকে একে অপরের প্রতি প্রেম, বিশ্বাস ও সুন্দর বোঝাপড়ার মাধ্যমে। এর মধ্যে একটি বিষয় নিয়েও কথা উঠলে সেই প্রেমের ভিত নড়বড়ে হতে শুরু করে। একজন আরেকজনের প্রতি আস্থা হারালেই শেষ হয়ে যায় সম্পর্ক। যখন নিজেদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, একজন আরেকজনের আবেগ–অনুভূতিকে বুঝতে চায় না, তখনই সামনে আসে বিচ্ছেদের মতো ঘটনা। তাই আপনার সঙ্গে কী ঘটেছে, সেটা বারবার না ভেবে এবার নিজেকে নিয়ে ভাবুন।

নিজের ভাবনা প্রতিষ্ঠার এই সুযোগ হয়তো আর আসবে না। তাই নিজেকে নিয়ে ভাবুন। নিজের মন ভালো রাখতে এর চেয়ে ভালো বিকল্প পাওয়া দুষ্কর।

নিজের ওপর আস্থা রাখুন

নিজের ওপর আস্থা রাখুন
ছবি: প্রথম আলো

অন্যদের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য নিজের ওপর আস্থা রাখা জরুরি। নিয়মিত ধাপে ধাপে নিজের প্রতিটি ইতিবাচক চিন্তার বাস্তবায়ন করুন। এমন পোশাক পরুন, যেটা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। হয়তো অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল গাঢ় লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানোর, নানা কারণে সেটা হয়নি। এবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেই লাল লিপস্টিকে সাজুন। কারও সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সময় সে কী পছন্দ করত না করত, সেই ভাবনা ঝেড়ে ফেলুন মাথা থেকে। নিজের ওপর আস্থা রাখুন, সামনের দিকে যাওয়া সহজ হবে।

এমন ছোট ছোট বিষয় বাস্তবায়ন করে দেখুন, আপনার হৃদয়ের ক্ষতস্থান পূরণ হতে বেশি সময় লাগবে না। হয়তো অতীত স্মৃতি হঠাৎ মনে পড়বে, কিন্তু সেখানে আটকে থাকা যাবে না।

পরের ধাপে যে কাজটি করতে পারেন, সেটা হলো সম্পর্কের স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা। নিজে যখন মনোবল ফিরে পাবেন, তখন সহজেই অতীত স্মৃতিকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। প্রাক্তনের সঙ্গে ঘৃণার সম্পর্ক এড়িয়ে স্বাভাবিক থাকুন। তাকে এই বলে মনে মনে ধন্যবাদ দিন যে একসঙ্গে কাটানো সময়ে জীবন সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা বেড়েছে।

সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া মানে ব্যর্থ না

সম্পর্ক ভেঙে গেছে বলে নিজেকে দোষারোপ করার কিছু নেই
ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্ক ভেঙে গেছে বলে নিজেকে দোষারোপ করার কিছু নেই। নিজেকে ব্যর্থ ভেবে মনোবল ভেঙে ফেলা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সব সম্পর্কই যে টিকবে এমনটা নয়। হয়তো আপনারা একজন আরেকজনের জন্য উপযুক্ত ছিলেন না। জুটি গড়তে হলে দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া হওয়া চাই পরিপূর্ণ। শুধু নিজের দোষ খুঁজে বেড়ানোর বদলে ভাবুন, আপনি একটা সুযোগ পেয়েছেন। আপনি অপেক্ষা করুন একটি নতুন ভোরের। যেদিন আপনি নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাবেন।

দুঃখ মনোভাব, কান্নাভরা স্ট্যাটাস, মনখারাপ মনোভাব এড়িয়ে নিজেকে চাঙা করুন। প্রাক্তনের পুরোনো ছবি বা স্মৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার না করে হাইড করে ফেলুন। যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত স্মৃতি আপনার সামনে এসে আপনাকে বিরক্ত না করে।

সূত্র: ফেমিনা ও রিডার্স ডাইজেস্ট।