বিয়ের আগে দুই পরিবারের জানাবোঝা

বিয়ের আগে বর–​কনের পরস্পরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে একধরনের জানাশোনা তৈরি হয়। মডেল: সুষমা, আব্দুল আজিজ, মনি আজিজ ও তূর্য, ছবি: কবির হোসেন
বিয়ের আগে বর–​কনের পরস্পরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে একধরনের জানাশোনা তৈরি হয়। মডেল: সুষমা, আব্দুল আজিজ, মনি আজিজ ও তূর্য, ছবি: কবির হোসেন

মিথিলা ও শাকিলের (ছদ্মনাম) প্রেমের বিয়ে। আয়োজন করেছিল পরিবারই। বিয়ের আগে মিথিলা ও শাকিলের একে অপরের পরিবারে যোগাযোগ ছিল। এমনকি পরিবারের অন্য সদস্যরাও যাতায়াত করতেন। এতে দুটো পরিবার একে অপরের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতে পারে এবং দুটো পরিবারের ভেতর একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

আমাদের সমাজে একটা প্রচলিত রীতি ছিল যে বিয়ের আগে ছেলে বা মেয়ে একে অপরের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করতে পারবে না। তাদের বিভিন্ন বিধিনিষেধ মেনে চলতে হতো। ফলে একে অপরকে জানার খুব একটা সুযোগ পেত না, এমনকি পরিবারের বাকি সদস্যরাও নয়। তবে আজকাল এসব রীতি থেকে অনেকেই বের হয়ে আসছে। দুজন মানুষের এবং দুটো পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ জানাবোঝার জন্য ভালো।

পরিবারে একেকজন বেড়ে ওঠে একেকভাবে, বিয়ের পর নতুন একটা পরিবারে হঠাৎ করে খাপ–খাওয়াতে কিছু সমস্যা হয়। স্বাভাবিকভাবে একে অপরের ব্যাপারে এবং পরিবারের ব্যাপারে জানা থাকলে কিছুটা সুবিধা হয়।

প্রচলিত রীতিনীতি থেকে বেরিয়ে আজকাল অভিভাবকেরাও বুঝতে পারছেন যে একটি পরিবারে যাওয়ার আগে ছেলে অথবা মেয়ের একে অপরকে জানা কতটা জরুরি। বিশেষ করে যেসব বিয়ে পারিবারিকভাবে ঠিক করা হয়, সেসব বিয়েতে জানার প্রয়োজনটা আরও বেশি। তবে পছন্দের বিয়েতেও এর প্রয়োজন আছে। ছেলেমেয়ের ভেতর জানাশোনা থাকলেও পরিবারের সদস্যদের ভেতর ভালো সম্পর্ক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, রেস্তোরাঁয় বসেই অনেকে এই চেনাজানার প্রক্রিয়া শেষ করে। তবে আজকাল বিয়ের আগে অনেক পরিবারের সদস্যরা একে অপরের বাড়িতেও যাওয়া-আসা করে। এতে পরিবারের সদস্যরা বেশ কাছাকাছি আসতে পারে।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতানা আলগিন বলেন, ‘বিয়ের আগে যদি দুটি পরিবার একে অপরের বাড়িতে আসা-যাওয়া করে, তবে পরস্পর সম্পর্কে জানতে পারবে। একে অপরের সংস্কৃতি, পারিবারিক নিয়ম, আচার-আচরণ জানতে পারবে।’

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছেলে অথবা মেয়ে একক পরিবার থেকে আসছে। তাকে যৌথ কোনো পরিবারে থাকতে হবে। বিয়ের আগে যদি যোগাযোগ থাকে, তাহলে পরে ওই পরিবারের সঙ্গে খাপখাইয়ে নিতে পারবে। পছন্দের বিয়ের ক্ষেত্রে বলা যায়, ছেলে ও মেয়ে আগে থেকে একে অপরকে জানে, সে ক্ষেত্রে বিয়ের আগে যদি পারিবারিক যোগাযোগ থাকে, তাহলে পরিবারের অন্যদের সম্পর্কে জানার সুযোগটা বাড়ে।

আবার কোনো কারণে যদি ঝামেলা হয়, সেটাও আগে থেকে বুঝতে পারবে এবং সেটা সমাধানের চেষ্টা করবে। মোট কথা, একটা রেস্তোরাঁয় বসে হয়তো পরিচয় হবে, তবে সত্যিকার অর্থে জানাশোনার জন্য একে অপরের বাড়িতে যাওয়া ভালো।

আমাদের সমাজে অনেকে এখনো পুরোপুরি ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না। তবে দুটো পরিবার এবং ছেলেমেয়ে উভয়ই যেন একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখাটাই আসল ব্যাপার।