যে কথা তাকে বলা বারণ!

সঙ্গীর আনন্দে দুঃখ নয়; যোগ করুন আনন্দ
সঙ্গীর আনন্দে দুঃখ নয়; যোগ করুন আনন্দ

পত্রিকায় চোখ বোলালে কখনো কখনো বিরক্তিতে আপনার ভ্রু জোড়া হয়তো একটু ওপরেই ওঠে। জীবনযাপনের নানা উপদেশে ঠাসা কোনো লেখার দিকে সরুচোখে খানিক তাকিয়ে সঙ্গীকে ডাক দিয়ে বলেন, শুনছ, এসে দেখে যাও কী সব লিখেছে। রাগে হয়তো মুখ ফসকে কিছু কটু কথাও বেরোয়। এরপর মুদ্রিত অক্ষরের ভাব ঢাকা পড়ে সঙ্গীর হাসি-ভালোবাসায়। কিন্তু জীবনের পথ চলায় কিছু কথা, কিছু বিষয় আছে যা তাকে না বলাই ভালো, সে সম্পর্কে ব্যক্তিগত কোনো মন্তব্য না করাই শ্রেয়। সামান্য এই মন্তব্যের কারণেই হয়তো আপনার জীবনের আকাশে কালো মেঘ জমে উঠতেও পারে। সে মেঘ থেকে কখন যে ঝড় ওঠে, কখন যে ঝঞ্ঝা। তাই সতর্ক থাকাই শ্রেয়। কিছু কথা তাকে বলতে বারণ। সে আপনি পুরুষই হন কিংবা নারী। 

সংসার শুরু করেছেন। কিংবা হয়তো পরিকল্পনা করছেন শিগগিরই এক ছাদের নিচে আসার। আর আপনিও দারুণ এক মানুষ; যাকে বলে কনফিডেন্ট একজন। সাফল্য পেয়েছেন কিংবা ছুটছেন টগবগে তেজি এক যৌবনের প্রতীক হয়েই। মাঝেমধ্যেই কথাবার্তা হচ্ছে, হচ্ছে দেখা-সাক্ষাৎ। আর ঘরের মানুষ হলে তো কথাই নেই; অবসরে-কাজের ফাঁকে নিত্যদিনই কথা। সেসব কথার মধ্যে যেন না থাকে-

মাকে নিয়ে নেতির কথা
মা জন্মদাত্রী, জননী। সেই ছোট্টটি থেকে বড়ো করেছেন সন্তানকে। তাঁর ঋণ শোধ করার নয়। তাঁকে নিয়ে ভালো মন্তব্য করতে বাধা নেই। তাঁর ভালো দিকগুলো নিয়ে কথা বলুন। আনন্দ করুন। কিন্তু সব সময় মনে রাখবেন তাঁর কোনো নেতিবাচক বিষয় নিয়ে কথা না বলাই শ্রেয়। সে বিয়ের আগেই হোক কিংবা হোক তা বিয়ের পরে। নেতির কথা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। প্রসঙ্গ এলে ব্যক্তিগত মন্তব্য করার সময় খেয়াল রাখা, যাতে মুখ ফসকেও এমন মন্তব্য না বেরোয় যা মাকে কষ্ট দেবে কিংবা কষ্ট দেবে তাঁর সন্তানকে।

তার বন্ধুরা
আড্ডা-হুল্লোড়ের মাঝে সঙ্গীর বন্ধুদের কাউকে আপনার হয়তো ভালো লাগতেই পারে। কারও কণ্ঠস্বর, কারও হাসি, কারও সদালাপি মানসিকতা। স্বচ্ছ মনের কোনো বন্ধুকে হয়তো নিছক ভালো বন্ধু বলেই ভাবেন। সঙ্গীর কাছে তার এই বন্ধুদের সম্পর্কে কোনো সাদামাটা প্রশংসার কথা আগ বাড়িয়ে বলার আগেও একটু ভাবুন। হয়তো আপনার এই অকপট অভিব্যক্তি আর মন্তব্যও সৃষ্টি করতে পারে কূট-সন্দেহের ধূম্রজাল। কী লাভ বাড়িয়ে জটিলতার ধাঁধা। এর চেয়ে নির্মল বাতাসে শ্বাস নিয়ে জীবনটাকে সহজ করুন। বাঁচুন প্রাণ ভরে।

স্বপ্নসঙ্গী
স্বপ্ন ছাড়া জীবন চলে না। আপনার সঙ্গীও যেমন স্বপ্ন দেখেন উজ্জ্বল জীবনের, তেমনি নিশ্চয় আপনিও। কিন্তু জীবনের চলার পথে সঙ্গীর স্বপ্ন নিয়ে কখনো যদি সন্দেহ আর আস্থার অভাব দেখা দিয়েও থাকে, মনের এই মলিন ভাবকে ঝেড়ে ফেলুন আশাবাদ দিয়ে। আস্থা রাখুন সঙ্গীর স্বপ্নে। কেননা এর স্বপ্নসঙ্গী যে আপনিও। মুখের ওপরে বলে ফেলা আপনার কোনো বেফাঁস মন্তব্য আপনার সঙ্গীকে আহত করতেই পারে। স্বপ্নসঙ্গী হন। আর যদি তার এ স্বপ্নে সঙ্গী হতে নাও পারেন, চেষ্টা করুন বিরূপ মন্তব্য না করতে। স্মিত হাসি আর নীরবতাও অনেক সময় সম্মতি বোঝায়।

যখন-তখন চলে যাওয়া
জীবনে মাঝেমধ্যেই খুনসুটি, মাঝে মাঝেই বিরাগ জেগে ওঠে। কখনো বা অনুরাগের বদলে রাগই আপনার মনে স্থান পেতে পারে। প্রেমের ঝগড়ায় কিংবা সংসারের ঝামেলায় তর্ক থেকে বচসা—আরও জটিলতর কোন্দলে জড়িয়ে পড়তে পারেন আপনি। তখন মুখ ফসকে যেন কখনো না বেরোয় ‘চলে যাওয়া’ কিংবা ‘ছেড়ে যাওয়া’র কথা। তর্ক করুন, বচসা করুন কিন্তু ছোট্ট কথা হলেও ‘চলে যাব’ অনেকটা চাবুকের মতোই আঘাত করতে পারে আপনার সঙ্গীকে। হীনম্মন্যতা তৈরি হতে পারে তার মনে। এভাবেই চলার পথে ক্রমশ শুরু হতে পারে এক ধরনের শীতল সম্পর্কের যাত্রা। যার জন্য আপনি নিশ্চিত করেই দায়ী করতে পারেন ‘চলে যাব’ এই অপ্রিয় ছোট্ট কথাটিকে। আপনার সঙ্গী বারবার এ কথা শুনলে মনে করতেই পারেন সামান্য বচসাতেই সে যদি বারবার চলে যাওয়ার কথা শোনায়। এ নিশ্চয়ই তার মনের কথা।

বেতনের টাকা-পয়সা
হতে পারে দুজনই উপার্জন করছেন, হতে পারে একজনই। কিন্তু বেতন নিয়ে কথা বলার সময়, বেতনের সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় খেয়াল রাখুন। মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কোনো মন্তব্য কিন্তু জ্যামুক্ত তিরের মতোই। তা আর ফেরানো যায় না। ভালো থাকুন। আনন্দে থাকুন।
( টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে )