ব্যক্তিগত জীবন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এনে এই বিপদগুলো ডেকে আনছেন না তো?

লোকদেখানোর সংস্কৃতিতে ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখতে যাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, অনেকেই তাঁদেরকে দেখেন কিঞ্চিৎ সহানুভূতির চোখে। ‘প্রাইভেসি’ বিক্রি করাটাকে তো অনেকে রীতিমতো পেশা বানিয়ে ফেলেছেন। কেবল ব্যক্তিগত জীবন অন্যকে দেখিয়েই অনেকে লাখ টাকা কামাই করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ‘বিখ্যাত হওয়ার জন্যই বিখ্যাত’। তাঁরা যতবার প্রেমে পড়েন, বিচ্ছেদ হয়, সন্তান নেন, বিয়ে করেন, তত বেশি ভাইরাল হন, আলোচনায় থাকেন, জনপ্রিয়তা বাড়ে, ইনস্টাগ্রামে অনুসারী বাড়ে। দিন শেষে ভাইরাল হওয়াটাই যেন শেষ কথা।

আর এসবের সমানুপাতে বাড়তে থাকে আয়, বাড়তে থাকে সম্পদের পরিমাণ। অথচ ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখার কোনো বিকল্প নেই। কেন? জেনে নিন কিছু কারণ।

ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখার সুবিধা অনেক
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

১. লোকদেখানোর সংস্কৃতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারলে আপনার জীবনে সত্যিকার অর্থেই যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোতে মনোযোগী হতে পারবেন।

২. পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার ও ঘনিষ্ঠ থাকে। কেননা, সম্পর্ক ভালো দেখানোটাই আপনার কাছে মুখ্য নয়; বরং সম্পর্ক ভালো রাখাটাই বেশি জরুরি। একটি গবেষণার সূত্র ধরে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, যাঁরা ব্যক্তিগত জীবনে সত্যিকার অর্থে সুখী নন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদেরই সেটা ‘প্রতিষ্ঠিত’ করার তাগিদ বেশি থাকে।

৩. দেখানোর ওপর যখন আপনার মনোযোগ থাকে, তখন যাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো দেখানোটা আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভালো অবস্থানের জন্য ‘সুবিধাজনক’, আপনি তাঁদেরকে বেছে নেন। ভালো–মন্দনির্বিশেষে জনপ্রিয়তাই আপনার কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সত্যিকারের সম্পর্ক থেকে আপনার দূরত্ব তৈরি হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা আপনাকে দেখছেন, তাঁরা সবাই আপনার বন্ধু নয়
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা আপনাকে দেখছেন, তাঁরা সবাই আপনার বন্ধু নয়। এর ভেতরে অনেকেই আছে অন্যের জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করাই যাঁদের জীবনের লক্ষ্য। অন্যকে নিয়ে ‘গসিপ’ করে তাঁরা আনন্দ পান, সুখী হন।

৫. ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ্যে আনার ফলে অন্যদের আপনার জীবনযাপন ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ দেন। জনে জনে ব্যাখ্যা দিয়ে বেড়ানোর অত সময় কি আপনার আছে? তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক মন্তব্য আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর।

৬. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত জীবন উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজের অজান্তেই আপনি একটা অসুস্থ্য সামাজিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত আপনার ভেতরে নানা ধরনের হিসাব–নিকাশ ও চিন্তাভাবনা চলছে। এটা আপনার কপালে যোগ করছে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত জীবন উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজের অজান্তেই আপনি একটা অসুস্থ্য সামাজিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

৭. ব্যক্তিগত জীবন কেবল সুখী জীবন-ই নয়, একটা নিরাপদ জীবনও বটে। নিজের জীবন যত আড়ালে রাখবেন, ততই তা আপনার জন্য মঙ্গলজনক।

তাই বলে এই না যে আপনি বিয়ের খবর জানাবেন না বা যুগল ছবি দেবেন না। অবশ্যই দেবেন। কেননা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই আমাদের যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ–বিদেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর আমরা এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভেতর দিয়েই পাই। আপনি কী উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত জীবন সামনে আনছেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত জীবন কতটা দেখাবেন, আর কতটা নিজেদের কাছে রাখবেন, তার একটা সুস্থ ও সুন্দর ভারসাম্য রাখা।

সূত্র: কি ফর সাকসেস

আরও পড়ুন