ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে মেয়েটি আমাকে ব্ল্যাকমেল করছে

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।

পরামর্শ দিয়েছেন ব্যরিস্টার মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমি একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার বয়স যখন ১৮ বছর ৭ মাস, আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়াই। প্রথম থেকেই সে চাইত, আমি যেন ওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হই। বিভিন্ন সময়ে সে আবাসিক হোটেলে যেতে চাইত। শুরুতে না করলেও একসময় আমিও আগ্রহ দেখাই। মেয়েটি আমাকে তার বিভিন্ন রকম ছবি পাঠিয়ে আগ্রহী করেছে। তার সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। বিভিন্ন সময়ে বন্ধু হিসেবে তার রুমে গিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়েছি। এখন সে বিয়ে করার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু শারীরিক সম্পর্কের আগে এমন কোনো কথা সে বলেনি। এমনকি নারী নির্যাতন আইনে মামলা করবে বলে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘দেখ, তোর ফ্যামিলির কী হাল করি। তোকে হলের বড় ভাইদের দিয়ে ধরে রাখব।’

আমার এখন কেবলই মনে হচ্ছে, বিয়ে করার জন্যই আমাকে সে রুমে ডেকে নিয়েছে। এমনকি পরিবার থেকেও সে আমাকে দূরে রাখতে চায়। সে শুধু আমার টাকাপয়সা ও সম্পদের ওপর আগ্রহ দেখায়। আমি চাই না আমার পরিবার এসব জানুক। পরিবারের কথা ভেবে কয়েকবার আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় এসেছিল। আমি এখন নিজেও এই ঝামেলা থেকে মুক্তি চাচ্ছি, পাশাপাশি পরিবারেরও নিরাপত্তা চাই। হলের বড় ভাইদের নিয়েও ভয়ে আছি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আইনের কোনো সাহায্য কি আমি পাব?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: আপনার চিঠির জন্য ধন্যবাদ। মেয়েটি যেহেতু তাঁকে বিয়ে করার জন্য আপনার ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন, বিয়ে না করলে নারী নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলা করার ভয় দেখাচ্ছেন, কাজেই এটা দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারা অনুযায়ী প্রতারণার আওতায় পড়বে। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)-এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতির উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। ২৫০ ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।

দণ্ডবিধির ১৯১ থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি ও মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে।

এ ধরনের বেআইনি কাজ থেকে তাঁকে বিরত থাকতে বলুন। এরপরও এ ধরনের হুমকি দিলে বা একই আচরণ করলে এসব কথা উল্লেখ করে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করুন। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন–এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন।

আপনি প্রয়োজনে আপনার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানান। আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। এ বিষয়ে একজন মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা

প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)  ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA