বান্ধবীর সাবেকের সঙ্গে প্রেম করেছি, এখন শুনছি নভেম্বরে ওদের বিয়ে
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: আমি একটি সমস্যায় পড়েছি, তবে বাড়িতে বলতে পারছি না। আমার ছোটবেলার এক বান্ধবী আছে। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে কলেজ পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে পড়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আমরা একই ছেলের প্রেমে পড়ি।
তবে আমি প্রকাশ করার আগেই আমার বান্ধবীর সঙ্গে ছেলেটির প্রেম হয়ে যায়। দুই বছর পর বান্ধবী বিদেশে পড়তে চলে যায়। এর পর থেকে ছেলেটির সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় এক বছর সেটা ভালোভাবে আমরা চালিয়ে যাই।
এই সময় প্রেমিক ছেলেটি ও আমার বান্ধবী দুজনেই ব্রেকআপ করেছে বলে জানিয়েছিল। তাই আমি এই প্রেমে রাজি হয়েছিলাম, যেহেতু তাকে আমার ভালো লাগত। কিন্তু দুই মাস আগে জানতে পারলাম আমার সেই প্রেমিকের সঙ্গে বিদেশে থাকা বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হয়েছে পারিবারিক আলোচনায়।
নভেম্বরে সে দেশে এলে বিয়ে হবে। আমিও সেখান থেকে সরে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ছেলেটি আমাকে তার আগেই ভয় দেখাতে শুরু করেছে। সে বলছে, কেউ কিছু জানতে পারলে আমাদের ছবি এআই দিয়ে এডিট করে তারপর ছড়িয়ে দেবে। এ ছাড়া আমাদের ফোনের কথোপকথনও সে প্রকাশ করে দেবে।
এই অবস্থায় আমি একটু ভয়ে আছি। বাড়িতে বলতে পারছি না। আবার পুলিশের কাছে যাব কি না, তা–ও বুঝতে পারছি না। আমি কি অন্য কোনোভাবে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। নিজের ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহারে এবং ভিডিও ধারণে সাবধান বা সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আপনার প্রশ্ন থেকে বুঝতে পারলাম ছেলেটি আপনার ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদর্শন করছেন এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
কেউ হুমকির শিকার হলে তাঁকে অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন।
তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। যদি তদন্ত করে দেখা যায় হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করা যাবে। এরপর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীন অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন।
কেউ হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়া যায়। ১০৭ ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড সম্পাদনের জন্য বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
আপনি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, তবে সে ক্ষেত্রে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করবেন। আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে তা আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
১০৭ ধারায় আশ্রয় নিলে আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না এ মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ২৫(১) ধারা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বা জেনেশুনে অন্য কোনো ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইলিং বা যৌন হয়রানি বা রিভেঞ্জ পর্ন বা ডিজিটাল শিশু যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত উপাদান (চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ ম্যাটেরিয়াল) বা সেক্সটর্শন করার উদ্দেশ্যে নিজের তৈরি করা বা প্রাপ্ত বা সংরক্ষিত কোনো তথ্য, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থিরচিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত, এডিটকৃত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে নির্মিত অথবা এডিটকৃত কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন বা প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করার হুমকি দেন, তাহলে সে ধরনের কার্যকলাপ একটি অপরাধ।
২৫(২)–এ হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)–এর অধীন কোনো অপরাধ করেন, তাহলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এই অধ্যাদেশের ২৫(৩)–এ বলা আছে যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)–এর অধীন অপরাধ, কোনো নারী বা অনূর্ধ্ব ১৮ (আঠারো) বৎসরের কোনো শিশুর বিরুদ্ধে সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ২০ (বিশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
এই আইনে ‘ব্ল্যাকমেইলিং’ অর্থ এমন হুমকি বা ভীতি প্রদর্শনকে বোঝাবে, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে তাঁর গোপনীয় তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে বা ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে বেআইনি সুবিধা, সেবা বা অন্য কোনো কাজ করতে বাধ্য করেন।
আপনি ছেলেটিকে ভালোভাবে বোঝান যে আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে সে ক্ষেত্রে আপনারা দুজন তো বটেই, আপনাদের পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়ে রাখতে পারেন তাঁকে আইনের মুখোমুখি হয়ে শাস্তি পেতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কোনো অভিভাবক বা শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহায্য নিন।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা : প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA