দাম্পত্য কলহের পর যেসব কাজ করতে নেই

ছোট্ট একটি মিথ্যা দাম্পত্য সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে। ছবিটি প্রতীকী।ছবি: প্রথম আলো

কোন সম্পর্কে মনোমালিন্য হয় না, বলুন? কথা–কাটাকাটি, মান-অভিমান, ঝগড়াঝাঁটি কিংবা রাগের বহিঃপ্রকাশ—এসব তো সম্পর্কেরই অংশ। একসময় তিক্ততার মেঘ কেটে গিয়ে সম্পর্ক আবার হয়ে ওঠে সূর্যের মতো ঝলমলে। তবে দাম্পত্য কলহের পর এমন কোনো আচরণ করতে নেই, যাতে আপনার সঙ্গী আহত হন কিংবা তিক্ততা বাড়তে থাকে। জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু বিষয়।

ঝাঁজালো কথা চালিয়ে যাওয়া

ঝগড়া থেমে যাওয়ার পরও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ঝাঁজালো কথা চালিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। উত্তেজিত বাক্যালাপ শেষ হয়ে গেলে নিজের কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখুন। স্বাভাবিক কথা বাঁকাভাবে বলবেন না। উত্তেজনার পর স্বাভাবিক হতে নিজেকে একটু সময় দিন। এরপর নিজের স্বর সংযত করে ফেলুন।

নীরবতার দেয়াল তুলে রাখা

ঝগড়াঝাঁটির পর আপনি হয়তো ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসছেন। কথা বলতে গেলে আরেক দফা ঝগড়া হবে বলে মনে হচ্ছে। সেই মুহূর্তের জন্য নীরবতাকে একটি সমাধান মনে হতে পারে ঠিকই। কিন্তু নীরব থাকা, সঙ্গীর কথার জবাব না দেওয়া—এগুলো কিন্তু সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

রাগ করে চলে যাওয়া

রাগ করে একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া উচিত নয়। এই মানুষটার সঙ্গে আর এক ছাদের নিচে থাকা সম্ভব নয়, এখনই সম্পর্ক শেষ করে দেওয়া উচিত—মনের মধ্যে এমন ভাবনা এলেও নিজেকে সংযত রাখুন। মাথা গরম অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেবেন না।

সম্পর্কে মান অভিমান থাকবেই। সেটা দ্রুত মিটিয়ে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ। ছবি: নিয়ামত ও ললনা নূর
ছবি: কবির হোসেন

কিছুই হয়নি, এমন ভাব করা

মনোমালিন্যের পর একেবারে নির্বিকার আচরণ করাও ঠিক নয়। যা হয়েছে, তাতে দুজনেরই কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। অন্তত নিজের তরফ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে, এরপর দৈনন্দিন কাজে ফিরুন। কিছুতেই নিজের দোষ এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়।

ক্ষমা না করা

সঙ্গী যদি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চান, তবে তাঁকে ক্ষমা করে দিন। সঙ্গীকে ক্ষমা না করে মনের ভেতর রাগ চেপে রাখলে পরবর্তীকালে সম্পর্কের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। নিজেকেও ক্ষমা করুন। ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার জন্য অপরাধবোধে ভুগতেই পারেন। কিন্তু সে কারণে নিজেকে কোনো শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। বরং সঙ্গীকে আরও বেশি ভালোবাসার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

অজুহাত তৈরি করা

কাজের চাপ, হতাশা, ট্রাফিক জ্যাম—ঝগড়া বা কথা–কাটাকাটির জন্য নানা কিছুকেই দায়ী মনে হতে পারে আপনার; কিন্তু সঙ্গীর সামনে ঝগড়ার অজুহাত হিসেবে এমন কোনো কিছুকে উপস্থাপন করবেন না। অন্য কোনো চাপের কারণে আপনি সঙ্গীর প্রতি খারাপ আচরণ করে ফেলেছেন, এটি তাঁর জন্য কোনো ভালো বার্তা নয়।

উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কিছু সময় নেওয়া উচিত দুজনেরই।
মডেল: পমি ও সজীব। ছবি: সুমন ইউসুফ

‘আমি কথাটা ওভাবে বলিনি’ ধরনের কিছু বলা

ঝগড়া করতে গিয়ে আপনি হয়তো অপ্রিয় কিংবা অশোভন কোনো কথা বলে ফেলেছেন। আপনি যা বলেছেন, তা আপনি বোঝাতে চাননি—এমন কথার মাধ্যমে কিন্তু আপনার বলা কথাটাকে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। বরং খারাপ কিছু বলে থাকলে সেটির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিন। আর আশস্ত করুন, ভবিষ্যতে এ ধরনের কথা বলবেন না। এ শপথ হোক আপনার নিজের কাছেও।

সমস্যা মেটাতে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ

উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কিছু সময় নেওয়া উচিত দুজনেরই। তবে খুব বেশি সময় বয়ে যেতে দেবেন না। উত্তেজনা কমে এলেই মূল বিষয়ের সমাধানে আসুন। আর ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে দুজনেরই।

ভবিষ্যতেও এই কলহের বিষয় টেনে আনা

একসময়ের কলহের জের পরবর্তীকালে টেনে আনা উচিত নয়। একবার সমাধান হয়ে যাওয়ার পর ওই বিষয় নিয়ে নতুন করে কথা তুলবেন না।

সূত্র: রিডার’স ডাইজেস্ট