মোহাম্মদপুর থেকে সিয়াটল, বন্ধুত্ব এখনো অটুট

আজ আগস্ট মাসের প্রথম রোববার—বন্ধু দিবস। পড়ুন বন্ধুত্বের এক অন্য রকম গল্প। লিখেছেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আরলিংটনের পিএইচডি গবেষক ইশরাক ফারুক

দুজনই ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আরলিংটনে পিএইচডি করেছেন
ছবি: ইশরাক ফারুকের সৌজন্যে

আমার বন্ধু অলিন্দ গুপ্ত। সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে পড়ার সময় ২০০৩ সালে তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। দুজনেরই বাসা ছিল মোহাম্মদপুর, ধীরে ধীরে সেখানেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। স্কুল শেষ করে দুজনই ভর্তি হই নটর ডেম কলেজে। কলেজের মাঠ আর মোহাম্মদপুরের খেলার মাঠে ফুটবল খেলার মধ্য দিয়ে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়। পরে দুজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগে ভর্তি হই। পরের কয়েক বছর আমাদের সবকিছুর কেন্দ্র হয়ে ওঠে বুয়েট। আমরা প্রিপারেটরি লিভে একসঙ্গে পড়তাম, ফুটবল খেলতাম, ক্যাম্পাসের নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিতাম। ক্যাম্পাসে রাত জেগে খেলা দেখা ছিল আমাদের নিয়মিত কাজ। আমি আর্জেন্টিনা আর অলিন্দ ব্রাজিলের সমর্থক; ক্লাব ফুটবলে আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর অলিন্দ আর্সেনাল। তাই বাহাসও চলত অনেক।

ক্যাম্পাসে লাইভ কনসার্ট দেখা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় আমরা একসঙ্গে ঘুরতে যেতাম। দেশের বাইরে নেপাল, ভারতেও একসঙ্গে ঘুরেছি। একটা ঘটনা এখন বিশেষভাবে মনে পড়ছে। শেষ সেমিস্টারে র‍্যাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট চলছিল তখন। উত্তেজনাপূর্ণ এক ম্যাচ আমরা দুজন দুই প্রতিপক্ষ দলে। সেকশন আলাদা, তাই আমাদের দলও আলাদা। সেই ম্যাচে জয়সূচক গোল করে অলিন্দ। খেলার সময় যা হয়, দুই দলের রেষারেষি থেকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। রীতিমতো ঝগড়ার মতো পরিস্থিতি। কিন্তু খেলার মাঠের ঝগড়া পরের সন্ধ্যাতেই ভুলে গিয়েছিলাম। র‍্যাগ কনসার্টে একসঙ্গে গান গেয়েছি গলা ফাটিয়ে।

আরও পড়ুন

স্নাতক শেষ করে ঢাকা ওয়াসার একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয় অলিন্দ। কয়েক মাস পর আমিও সেই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিই। এক টিমে কাজ শুরু করি আমরা। কর্মজীবনের শুরুতেই স্কুলের বন্ধুকে সহকর্মী হিসেবে পাশে পেয়ে যাই। অফিস থেকে বিভিন্ন সাইট ভিজিট আর কাজে সময় পার করছিলাম আমরা। মাঝেমধ্যে অফিস শেষ করে বুয়েট যেতাম। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিতাম।

২০২০ সালের স্প্রিং সেমিস্টারে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যায় অলিন্দ। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আরলিংটনে পিএইচডি করার সুযোগ পায়। খবরটা শুনে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। ২০২১ সালের ফল সেমিস্টারে আমিও অলিন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে একই প্রোগ্রামে ভর্তি হই। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে যখন নামি, বিমানবন্দরে আমাকে নিতে আসে অলিন্দ।

২০২৩ সালে আমরা লস অ্যাঞ্জেলেস জিও কংগ্রেস ২০২৩ সম্মেলনে টি–শার্ট ডিজাইন প্রতিযোগিতায় একই সঙ্গে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হই
ছবি: ইশরাক ফারুকের সৌজন্যে

অলিন্দসহ আরও দুই বন্ধু একই সঙ্গে থাকা শুরু করি। বিদেশের মাটিতে এটাই ছিল আমাদের ছোটখাটো আস্তানা। ল্যাবের কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকত অলিন্দ। তারপরও গভীর রাত পর্যন্ত গল্প করতাম আমরা। আমাদের উচ্চশিক্ষার বিষয় ছিল জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০২৩ সালে আমরা লস অ্যাঞ্জেলেস জিও কংগ্রেস ২০২৩ সম্মেলনে টি–শার্ট ডিজাইন প্রতিযোগিতায় একই সঙ্গে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হই।

আমি সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আরলিংটন থেকে পিএইচডি করেছি। চাকরির নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি সিয়াটল। আমি সেই শহরে যাচ্ছি, যেখানে গত দুই বছর ধরে কাজ করছে অলিন্দ। সেন্ট যোসেফের মাঠে যেমন পেয়েছি, সিয়াটলের সুউচ্চ ভবনেও তেমনি অলিন্দের দেখা পাব। মনে হয়, মোহাম্মদপুর থেকে আমাদের সিয়াটলের যাত্রাটা যেন খুব বেশি দিনের নয়।

আরও পড়ুন