সন্তান, নাতি-নাতনি আর পুতিদের নিয়ে ৮৮ বছর বয়সে বিয়ে করলেন এই জুটি

রোল্যান্ড পাসারো ও অ্যালেইন হল
ছবি: সংগৃহীত

কথায় বলে—‘বেটার লেট দ্যান নেভার’। দেরিতে মানে প্রেমে পড়ার ‘মাত্র’ ৭০ বছর পর বিয়ে করে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন এক মার্কিন জুটি।


ছোটবেলায় চোখের দেখা, সেই থেকে প্রেম, সেই প্রেম বড়বেলায় বিয়ে পর্যন্ত গড়ানো—এমন গল্প আমাদের শোনা। কিন্তু প্রেমে পড়ার সাত দশক পরও যে বিয়ে করা যায়, এমন গল্প হয়তো অনেকেই শোনেননি। হ্যাঁ, গত মার্চে এমনটাই ঘটেছে এই পৃথিবীর আরেক প্রান্তে, মার্কিন মুল্লুকে। এত দিন পর কেন, কীভাবে হলো, সেই বিয়ে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

তখন ১৯৫০-এর দশক। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট শহর অ্যালেনটাউন। এ শহরের একটি হাইস্কুলের কিশোর শিক্ষার্থী রোল্যান্ড পাসারো তুখোড় খেলোয়াড় হিসেবে সুনাম কুড়াচ্ছেন সবখানে। রোল্যান্ডের তখন ‘ভালো লেগে যায়’ একই স্কুলে পড়ুয়া আরেক কিশোরী অ্যালেইন হলকে। দারুণ স্মার্ট, তুখোড় খেলোয়াড় রোল্যান্ডকেও ভালো লেগে যায় স্নিগ্ধ সুন্দর-কোমল কিশোরী অ্যালেইনের। শুরু হয় চোখে চোখে প্রেম। তবে কোনো এক অজানা কারণে সেই প্রেমের কথা তখন একে অপরকে মুখ ফুটে বলে ওঠা হয়নি কারও।

২০ বছর একসঙ্গে থাকার পর ৮৮ বছর বয়সে একে অপরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন রোল্যান্ড পাসারো ও অ্যালেইন হল
ছবি: সংগৃহীত

এভাবে চোখে চোখে প্রেমে প্রেমে কেটে যায় দিন-মাস-বছর। রোল্যান্ড আর অ্যালেইনের হাইস্কুল–জীবনও শেষ হয়ে যায়। লেখাপড়ার পাট চুকানোর পর দুজনের জীবনেই আসে বাঁকবদল। পেশাদার বেসবল খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন রোল্যান্ড। অল্প সময়ে পিচার হিসেবে সুখ্যাতিও অর্জন করেন। একসময় বেসবল আর গ্লাভস তুলে রেখে ক্যারিয়ার শুরু করেন মিয়ামির একটি বিমান সংস্থায়। পারিবারিকভাবে সুজান নামের এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন রোল্যান্ড। তবে সে সংসার খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন সুজান। স্ত্রীর মৃত্যুর এক বছর পর নিজের এক সন্তানের মৃত্যু আরও একাকী করে দেয় রোল্যান্ডকে।

আরও পড়ুন
২০০৩ সালে অ্যালেনটাউনের সেই হাইস্কুলের ৫০ বছর পূর্তির পুনর্মিলনীতে রোল্যান্ডের সঙ্গে অ্যালেইনের দেখা
ছবি: সংগৃহীত

হাইস্কুল-জীবন শেষ করে বসে থাকেননি অ্যালেইনও। জীবনের প্রয়োজনে সংসার পেতেছিলেন ভিন্ন এক ঠিকানায়। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সে সংসার টেকেনি বেশি দিন। একাই তিনটি সন্তানকে বড় করেছেন। বসবাস করতেন সেই অ্যালেনটাউন শহরেই। পেশাগত জীবনে অ্যালেইন পেনসিলভানিয়ার স্থানীয় একটি পত্রিকায় কাজও করেছেন দীর্ঘদিন।

রোল্যান্ড আর অ্যালেইনের দুই জীবন যখন দুই নৌকায় ভাসছিল, সৃষ্টিকর্তার ইশারায় তখনই আবার তাদের দেখা হয়ে যায়। ২০০৩ সালে অ্যালেনটাউনের সেই হাইস্কুলের ৫০ বছর পূর্তির পুনর্মিলনীতে রোল্যান্ডের সঙ্গে অ্যালেইনের দেখা। পুনর্মিলনীর সেই দেখায় দুজনের মধ্যে জেগে ওঠে পুরোনো প্রেম, যা এত দিন অযত্নে অবহেলায় সুপ্ত ছিল। ধুলা জমে থাকা সেই পুরোনো আবেগের বশেই কিনা জীবনের সব গল্প শুনে পুনর্মিলনীর সেই রাতে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি। অ্যালেইনের কপালে চুমু এঁকে দেন রোল্যান্ড।

আরও পড়ুন
প্রেমে পড়ার ‘মাত্র’ ৭০ বছর পর বিয়ে করেন এই জুটি
ছবি: সংগৃহীত

২০০৩ সালে দেখা হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন চিঠি চালাচালি করেছেন দুজন। চিঠির সাদা জমিনে কলমের কালি পড়ে দিনে দিনে দৃঢ় হতে থাকে তাদের প্রেমের বন্ধন। রোল্যান্ড যখন মিয়ামিতে বিমান সংস্থার চাকরি করছেন, তখন সেখানে তাঁকে সঙ্গ দিতে চলে যান। সেই থেকে রোল্যান্ড আর অ্যালেইনের একসঙ্গে থাকা। ২০ বছর এভাবেই থেকেছেন। ২০২৩-এর শেষে এসে প্রণয়কে ‘পরিণতি’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দুজন। প্রস্তাবটা এসেছিল অ্যালেইনের পক্ষ থেকেই। আর রোল্যান্ডও সেই প্রস্তাবে সাড়া দিতে দেরি করেননি।

প্রায় ৬ মাসের দীর্ঘ প্রস্তুতির পর গত ২৩ মার্চ ৮৮ বছর বয়সে একে অপরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন রোল্যান্ড পাসারো ও অ্যালেইন হল। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বিখ্যাত পাম কোস্টে আয়োজিত সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন মাত্র ২২ জন। সেই দলের ১৪ সদস্য হলো বর-কনের চার সন্তান, আট নাতি-নাতনি আর দুই পুতি!


সূত্র: পিপল ডটকম