সিঙ্গেল মা–বাবারা পূর্ণবয়সী সন্তানের সঙ্গে হবু জীবনসঙ্গীকে পরিচয় করিয়ে দেবেন যেভাবে

বিবাহবিচ্ছেদ কিংবা স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুতে সঙ্গীহারা হয়ে পড়েন অনেকে। সন্তান ছোট থাকলে অনেকেই তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেন না। তবে ছেলেমেয়েরা যখন বড় হয়ে নিজেদের সংসার, ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন অনেক একাকী মা–বাবা নিঃসঙ্গ বোধ করেন। সিদ্ধান্ত নেন নতুন কারও সঙ্গে আবার জীবনের বাকিটা পথ হাঁটার। কিন্তু তাঁদের মনে বারবার উঁকি দেয় একটা প্রশ্ন—ছেলেমেয়েরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে তো? আপনি যদি এমনই একজন একাকী মা কিংবা বাবা হন, তাহলে আপনার পূর্ণবয়সী সন্তানের সঙ্গে হবু জীবনসঙ্গীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু কৌশল জেনে রাখুন—

যখনই বুঝবেন আপনাদের সম্পর্কটি একটি পরিণতির দিকে এগোচ্ছে, আপনি নিশ্চিত যে আপনারা বিয়ে করবেন, তখন আপনার সন্তানদের বিষয়টি জানানমডেল: রওনক হোসেন, শুভ ও উল্কা হোসেন। ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে

যখনই বুঝবেন আপনাদের সম্পর্কটি একটি পরিণতির দিকে এগোচ্ছে, আপনি নিশ্চিত যে আপনারা বিয়ে করবেন, তখন আপনার সন্তানদের বিষয়টি জানান। পরে তারা অন্য কোনোভাবে কথাটি জানার চেয়ে আগেভাগে আপনিই সব জানিয়ে দিন। আপনি যদি আপনার সন্তানকে গল্প–আড্ডার এক ফাঁকে বলে দেন যে আপনি সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী হিসেবে একজনকে পছন্দ করে ফেলেছেন, তাহলে আপনাদের ব্যাপারটা জানাবোঝায় আর কোনো জটিলতা থাকবে না। পরবর্তী সময়ে আপনার সিদ্ধান্তের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কষ্টও হবে না। সন্তানেরও আপনার পছন্দের মানুষের ব্যাপারে প্রশ্ন থাকতে পারে। তারাও সেসব প্রশ্ন করার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে। আপনার হবু জীবনসঙ্গী সম্পর্কে তাদেরকে তথ্য দিন। তাঁর ব্যক্তিত্ব, পরিবার, পেশা, সন্তান সম্পর্কে ধারণা দিন। আপনাদের সম্পর্ক এবং সম্পর্কের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে পারলে দূরত্ব বা বিভ্রান্তি তৈরি হবে না।

আপনার সন্তানই যেন আপনার জীবনে প্রাধান্য পায়

পূর্ণবয়সী সন্তানেরাও মা-বাবার নতুন সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্কের সঙ্গে আসন্ন জটিলতার কথা ভেবে ভয় পান। অনেক যুগল ভালোবেসেই বিয়ে করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বিয়ে টেকে না। কারণ, তাদের কারও সন্তানই নতুন মা–বাবা এবং সৎভাই-বোনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলতে পারে না। দেখা যায়, দুজনের আগের সংসারের কিশোর বয়সী সন্তানেরা যে প্যারেন্টিং স্টাইল এবং মূল্যবোধ নিয়ে বড় হয়েছিল, তা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। যত ঝড়ঝাপ্টাই বয়ে যাক না কেন, আপনাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ যেন আপনাদের সম্পর্কের কারণে নষ্ট না হয়ে যায়।

হবু জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সন্তানদের ব্যাপারে কথা বলুন

হবু জীবনসঙ্গীর সন্তান এবং আপনার সন্তানদের কোনো কমন আগ্রহের বিষয় আছে কি না, তা খুঁজে বের করুন। তাদের পেশা, ব্যক্তিত্ব, শখ, আগ্রহের বিষয় ইত্যাদি নিয়ে আলাপ করুন। তাদের সম্পর্কে একটু একটু করে জানতে থাকলে শেষমেশ যখন তাদের দেখা হবে, তখন আলাপ চালিয়ে যাওয়া হবে সহজ। আলাপের সময় যেকোনো স্পর্শকাতর বিষয় এড়িয়ে চলাই ভালো। ধরুন, আপনার সন্তানদের কারোর স্বাস্থ্যগত, পেশাগত বা সম্পর্কগত কোনো সমস্যা আছে। আপনার সঙ্গীকে আগেভাগেই জানিয়ে রাখুন, প্রসঙ্গটি নিয়ে যেন বেশি কিছু না বলেন। তবে খুব বেশি কিছু বলতে যাবেন না। কারণ, আপনার জীবনের নতুন মানুষটিকে আপনি হয়তো বিশ্বাস করেন; কিন্তু আপনার সন্তানদের কাছে তিনি আগন্তুক। অপরিচিত একজন তাদের জীবনের সব খুঁটিনাটি জানে, এই ব্যাপারটায় তারা অস্বস্তি বোধ করতে পারে।

গেট টুগেদারের আয়োজন করুন

সম্ভব হলে কোনো একটি স্থানে আপনাদের সন্তানদের নিয়ে একটি গেট টুগেদারের আয়োজন করুন। বসার জায়গার পরিবেশ যেন আনন্দদায়ক হয়। কোথায় গেট টুগেদারের আয়োজন করলে ভালো হয়, সে ব্যাপারেও সন্তানদের সঙ্গে আলাপ করুন। তাদের মতামত নিন। তারা যেন বুঝতে পারে যে তারাও আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ। এতে তারা সন্তুষ্ট থাকবে এবং নিজেদের আপনাদের নতুন জীবনের একটি অংশ মনে করবে।

আপনার সন্তানদের সঙ্গে কথা বলুন, তাদের কথাও শুনুন

সন্তানেরা প্রাপ্তবয়সী হলেও তারা আপনার নতুন সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে। তাদের মনেও থাকতে পারে ভয় কিংবা সন্দেহ। তাদেরকে প্রশ্ন করার এবং নিজেদের মতামত দেওয়ার সুযোগ দিন। আপনি যদি জানতে পারেন তাদের আসলে কেমন লাগছে এবং কী নিয়ে তারা চিন্তিত, তাহলেই কেবল আপনার পক্ষে তাদের আশ্বস্ত করা সম্ভব হবে। নিজের মা কিংবা বাবার জায়গায় আপনার পাশে অন্য কাউকে দেখা তাদের জন্যও হতে পারে একটি বিশাল পরীক্ষা। এতে তাদের মনোজগতেও আসতে পারে বড় ধরনের পরিবর্তন। তাদের সময় দিন। খোলাখুলিভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। আশা করা যায়, আপনার সন্তানেরা আপনার সঙ্গীকে এবং আপনার সঙ্গীর সন্তানেরাও আপনাকে ততটাই গুরুত্ব দেবে, যতটা গুরুত্ব আপনারা একে অপরকে দেন।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুন