স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্কে বড় শত্রু কে

সঙ্গীকে কখনো অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না। মডেল: আইরিন ও জুলফিকার
ছবি: কবির হোসেন

দাম্পত্য সম্পর্কে সবচেয়ে বড় শত্রু কে?

একেকজনের ক্ষেত্রে এ প্রশ্নের উত্তর একেক রকম। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিয়েবিষয়ক ওয়েবসাইট ম্যারেজ ডটকম অনুসারে, এই প্রশ্নের সবচেয়ে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য উত্তর হলো—তুলনা। নিজের দাম্পত্য সঙ্গীকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা।

স্ত্রী হয়তো অনেক সাধ করে ইলিশের পাতুরি রান্না করে স্বামীর পাতে সবচেয়ে বড় টুকরাটা তুলে দিয়ে আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল, ‘কেমন হয়েছে বলো তো? তোমার পছন্দ বলে ইউটিউব দেখে আজই প্রথম করলাম।’ অমনি স্বামীর বিরস উত্তর, ‘খেতে মন্দ নয়। তবে মায়ের হাতের পাতুরির কাছে টিকবে না।’

এদিকে ফ্যাশনিস্তা শায়লার (ছদ্মনাম) উদ্যোক্তা স্বামী ঘরে–বাইরে সবখানে টি–শার্ট আর প্যান্ট পরে, এমনকি বেড়াতে গেলেও সেই টি–শার্ট আর প্যান্ট। অথচ শায়লার প্রাক্তনের বিজনেস ক্যাজুয়াল লুক, বোহো বা এলিগ্যান্ট ক্ল্যাসিক ফ্যাশন নিয়ে রীতিমতো আলোচনা চলত বান্ধবীমহলে। মুছে ফেলা ছবিগুলোয় কী যে সুন্দর লাগত দুজনকে! অথচ, স্টাইলিশ না হওয়ায় স্বামীর সঙ্গে ছবিই তুলতে ইচ্ছা করে না শায়লার। এ নিয়ে মনে মনে বেশ খেদও আছে।

ওপরের উদাহরণ দুটিকে তুচ্ছ ভেবে অবহেলা করবেন না। তুলনা থেকে তৈরি হয় এমন সব অসন্তুষ্টি, যা একসময় সম্পর্কে বড় ফারাক ডেকে আনে। আর সেই ফাঁকে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়তেই পারে। দাম্পত্য জীবনের এমন সব মোড় থেকে দুজনের জীবন দুদিকে বেঁকে যাওয়াটা অসম্ভব নয়।

দাম্পত্যে তুলনা থেকে তৈরি হয় এমন সব অসন্তুষ্টি, যা একসময় সম্পর্কে বড় ফারাক ডেকে আনে। মডেল: আইরিন ও জুলফিকার
ছবি: কবির হোসেন

দাম্পত্য জীবনে ‘পারফেক্ট’ শব্দটা একটা মিথ

আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনার বিবাহিত জীবনে ঝামেলার শেষ নেই। অথচ ‘অমুক’ ‘অমুক’ কত সুখী! অনেক ক্ষেত্রেই সত্যিটা হলো, ওদের চেয়ে আপনার দাম্পত্য জীবনেই বরং জটিলতা কম। কেননা, আপনার জীবনের জটিলতা আপনি জানেন, আর আপনার চোখে ভাসছে দাম্পত্য জীবনের কিছু সুখী ছবি বা সুখী চিত্র। আসলে ফেসবুকে ঝাঁ–চকচকে পারফেক্ট কাপল ফটোর মতো পারফেক্ট দাম্পত্য জীবন বলে কিছু নেই। পৃথিবীর কোনো দাম্পত্য সম্পর্কই এক শতে এক শ নয়।

সবচেয়ে সহজে অসুখী হওয়ার রেসিপি, তুলনা

অসুখী হওয়া খুবই সহজ। আর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, তুলনা করতে থাকা। আপনার যদি এই বদঅভ্যাস থেকেই থাকে, সেটাকে ঝেটিয়ে বিদায় করুন। নতুবা আপনি সারা জীবনে জন্য অসুখী হওয়ার দুষ্ট চক্রে পা দিয়ে খেই হারিয়ে ক্রমেই অতল গহ্বরে পড়তে থাকবেন। পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষের মতো প্রতিটি দাম্পত্য সম্পর্কও অনন্য। কোনোটার সঙ্গে কোনোটার তুলনা হয় না। অন্যের দিকে তাকানোর চেয়ে আপনি বরং নিজের ভেতর ডুব দিন। অন্যের সঙ্গে নিজের স্বামী বা স্ত্রীর তুলনা করে কখনো ‘সুস্থ প্রতিযোগিতা’ তৈরি করা যায় না, সবকিছু কেবলই বিষাক্ত হতে থাকে।

আরও পড়ুন

মানুষ কেন নিজের সঙ্গীকে অন্যের সঙ্গে
তুলনা করে?

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট সাইকোলজি টুডের মতে, এর সবচেয়ে সহজ উত্তর হলো, মানুষ নিজের ছোটবেলা থেকে ‘তুলনার শিকার’ হয়ে বড় হয়। এভাবে সহজাতভাবেই তুলনা বিষয়টা তার ভেতর ঢুকে পড়ে। মার্কিন ক্লিনিক্ল্যাল সাইকোলজিস্ট, গবেষক, লেখক ও বক্তা কুলি গটম্যান ইউজিএ ফ্যাক্টসকে বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা ও সন্তানকে ছোট থেকে বড় করার সময় থেকেই তুলনা বিষয়টি বাদ দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সুস্থ সম্পর্কের দৃষ্টান্ত হিসেবে নেওয়া যাবে না। আর একে অন্যের সেরাটাকে বের করে আনার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে হবে।’

দাম্পত্য সম্পর্ককে যথাসম্ভব ব্যক্তিগত রাখুন। মডেল: জুলফিকার ও আইরিন
ছবি: কবির হোসেন

কীভাবে আপনি তুলনার ফাঁদ থেকে নিজেকে বাঁচাবেন, এর কয়েকটি উপায়ও জানিয়েছেন এই মনোবিদ।

  • কেবল নিজেদের সম্পর্কে মনোযোগ দিন। নিজেদের মধ্যকার ভিন্নতা আর দাম্পত্য সম্পর্কের অনন্যতাকে উদযাপন করুন।

  • দাম্পত্য সম্পর্ককে যথাসম্ভব ব্যক্তিগত রাখুন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘কনটেন্ট’ বানাবেন না।

  • আপনার সঙ্গীর ইতিবাচক দিকগুলোয় জোর দিন। আপনার জন্য তিনি যা করছেন, সে জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন। সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দ্বিধা করবেন না।

  • ক্যারিয়ার গোলের মতো দাম্পত্য সম্পর্কেও ছোট ছোট ‘রিলেশনশিপ গোল’ পূরণের মাধ্যমে বড় বড় রিলেশনশিপ গোলের দিকে এগিয়ে যান।

  • আপনি যদি আপনার সম্পর্ক নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ, দ্বিধা বা অনিশ্চয়তায় ভোগেন, সেটা অপর পক্ষকে নির্দ্বিধায় জানান। খোলামেলা আলাপ করুন। একান্তে সময় কাটান।

আরও পড়ুন