আমার সাবেককে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি

সাবেককে নতুন করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন এক ব্রিটিশ। কিন্তু তার সাবেক এখন অন্য আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। জানার পরও কিছুতেই বিষয়টা মানতে পারছেন না তিনি। নিজের এই জটিল অবস্থা ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়ে সমাধান চেয়েছেন। আমাদের সমাজেও এ ধরনের সমস্যা এখন দেখা যাচ্ছে। তাই পাঠকদের জন্য বিশেষজ্ঞের দেওয়া পরামর্শটি তুলে ধরা হলো।

প্রতীকী এই ছবিতে মডেল হয়েছেন আমিন ও দীপ্তি
ছবি: সুমন ইউসুফ

সমস্যা: আমার সাবেক একজনকে ভালোবাসে। আমি জানি, সে আমার সাবেক। তবু আমি এটা মানতে পারছি না। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর আমি তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি! শুনে অদ্ভুত লাগতে পারে। কিন্তু আমি আমার অনুভূতি তাঁকে জানিয়েছি। পুরোটা এখন তাঁর ওপর।

আমি জানি না কীভাবে আমি আমার ‘রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস’ বোঝাব। আমরা দুজনই চল্লিশোর্ধ। দুই বছর আগে আবার আমাদের দেখা হয়। আমরা দুজনই তখন ডিভোর্সড আর সিঙ্গেল। দিনের পর দিন আমরা একসঙ্গে থেকেছি। আমাদের সম্পর্কটা বেশ সুন্দর ছিল। আমাদের সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর দূরত্বও ছিল। সেই দূরত্বই আমাদের সম্পর্ককে তেতো হতে দেয়নি। আমরা বাকি জীবন একসঙ্গে কীভাবে কাটাব, তার খসড়া পরিকল্পনা করেছি। তবে কখনো কেউ কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিইনি।

সম্পর্কে থাকার একটি পর্যায়ে আমাকে চাকরি ছাড়তে হয়। আর শহরের বাইরে চাকরি নিতে হয়। আমি এ বিষয়ে আমার প্রেমিকার সঙ্গে আলাপ করিনি। কেননা, আমার নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়াটাই ঠিকমতো হচ্ছিল না। ওকে কী বলব? আমি বাধ্য হই শহরের বাইরে থাকতে। একটু সময় পেলেই শহরে এসে ওর সঙ্গে সময় কাটিয়ে যেতাম। তবে আমার অনেক কষ্ট হতো। কেননা, আমার চাকরিটাও ছিল ভীষণ পরিশ্রমের। আমি যখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম, সেই সময় থেকে আমাদের সম্পর্কে চিড় ধরতে থাকে। আর ঠিক সেই সময়ই নতুন একটি ছেলের সঙ্গে ওর পরিচয় হয়। ছেলেটি বয়সে আমাদের চেয়ে অনেক তরুণ, সুদর্শন আর ফুরফুরে। প্রেম হওয়াটাই স্বাভাবিক। ও আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে ওর আর আমার সম্পর্ক সেখানেই শেষ। কিন্তু আমি মেনে নিতে পারিনি। চাকরি ছেড়ে দিলাম। কিন্তু প্রেমিকার কাছে ফিরতে পারলাম না। এই মুহূর্তে আমি আমার সেই প্রেমিকাকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি করে চাই। আমি ওকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছি। ও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, অন্য পুরুষটি আমার চেয়ে অনেক বেশি উদার। ওর সঙ্গে সে অনেক ভালো আছে। আমার কারণে ওর সঙ্গে বিচ্ছেদের কোনো প্রশ্নই আসে না। এখন আমি কী করব?

সমাধান: আমি আপনার পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। পরিস্থিতিটা এমন, আপনি জীবিকার তাগিদে শহরের বাইরে নতুন চাকরি শুরু করলেন। আর সেই বিরতিতে সে নতুন প্রেম শুরু করল। আর আপনাদের সম্পর্কের মধে৵ এমন একজন জড়িয়ে গেল, যে সম্পূর্ণ নিরাপরাধ। আপনি বলেছেন, আপনাদের দুই বছরের সম্পর্ক দারুণ ছিল, যদিও আপনি সম্পর্কের মধে৵ স্বাস্থ্যকর দূরত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। আমি আপনার বিষয়টি নিয়ে সাইকোথেরাপিস্ট জন পল ডেভিসের সঙ্গে আলাপ করেছি। ডেভিস আপনার জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করে বলেন, ‘দুজনই যদি কোনো একটা সম্পর্কে কমিটেড থাকে, তাহলে সেই সম্পর্ক সংকটকালে গেলেই সে আরেকজনকে খুঁজে নেবে না। বরং সম্পর্কটা কীভাবে আরও কার্যকর হতে পারে, সেই সমাধান খুঁজবে। দুজন মানুষ দুজনকে ভালোবাসে। তাঁরা দুজনেই সেই সম্পর্কে সুখী। সেখানে হঠাৎ করে একজন ব্যক্তিগত বা পেশাগত কারণে মানসিক সংকটে পড়লে আরেকজন সমর্থন দেবে। সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য একটা সহজ উপায় খুঁজবে। আরেকজন ‘পার্টনার’ খুঁজে নেওয়া মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। সে ক্ষেত্রে আমার ধারণা, একপক্ষ যেভাবে ওই সম্পর্কের ভেতর ছিল, অন্যপক্ষ হয়তো সেভাবে সন্তুষ্টির সঙ্গে ছিল না। সম্পর্ক তো দুই পক্ষের ব্যাপার। এখানে তো আপনার কিছু করার ছিল না। নিজেকে দোষারোপ করবেন না। সত্যিই এটা খুবই কঠিন আর যন্ত্রণাদায়ক সময়। আপনি আপনার সাবেককে ক্ষমা করে দিন। তাঁর আশায় দিনযাপন করা বন্ধ করুন। বরং আপনার পরিবার বা কাছের কোনো বন্ধুর কাছে যান। আপন মানুষের সঙ্গে মনের অবস্থা ভাগ করে নিন। চাকরিতে যোগ দিন। স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফেরার চেষ্টা করুন। বিশ্বাস করুন, আপনার সামনে অপেক্ষা করছে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।