পছন্দের জীবনসঙ্গীকে মা-বাবা মানতে চাইছেন না?

মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের মতের অমিলের অন্যতম প্রধান কারণ প্রজন্মের ব্যবধান। এক প্রজন্মের কাছে যা দৃষ্টিকটু, অন্য প্রজন্মের কাছে তা–ই ‘কোনো ব্যাপার না’। মতের এমন অমিলের কারণে জীবনে টুকটাক সমস্যা হতেই পারে। তবে বড়সড় গোলযোগ বাধে, যখন মতের অমিল হয় জীবনসঙ্গী নির্বাচন নিয়ে, সন্তানের পছন্দে যখন আস্থা রাখতে পারেন না মা-বাবা।

সন্তান কেন নিজ থেকে জীবনসঙ্গী পছন্দ করেন, সেটাও মানতে পারেন না অভিভাবক হিসেবে
ছবি: প্রথম আলো

একদিকে ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়, অন্যদিকে মা-বাবার মনে আঘাত দেওয়ার শঙ্কা। রীতিমতো উভয়সংকট! এমন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখা সত্যিই মুশকিল। তবে ভবিষ্যৎ জীবনে শান্তি বজায় রাখতে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সব দিক সুন্দরভাবে সামলানো ছাড়া উপায়ও কিন্তু নেই। করণীয় জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিণ হক।

আরও পড়ুন

খুঁজতে হবে কারণ

এমন জটিল পরিস্থিতিতে পড়লে আপনার প্রথম কাজ কী হবে, জানেন? মা-বাবার নেতিবাচক ভাবনার পেছনের কারণটা খুঁজে বের করা। বয়স, ধর্ম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক অবস্থা কিংবা সামাজিক অবস্থানের মতো বিষয়গুলোর কারণে মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। এ দেশের সামাজিক পরিসরে একজন অভিভাবকের পক্ষে এ ধরনের বিষয়গুলোতে নিজেদের ভাবনার সঙ্গে অসামঞ্জস্য মেনে নেওয়া কঠিন। অনেক সময় ‘ছোটখাটো’ বিষয় অভিভাবকের চোখে ‘বড়’ হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো সন্তানের জীবনসঙ্গী নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশা ছিল ভিন্ন। আবার একেবারে অকারণেও বিপত্তি বাধাতে পারেন কোনো কোনো অভিভাবক। সন্তান কেন নিজ থেকে জীবনসঙ্গী পছন্দ করলেন, কেবল এই ‘অপরাধ’-এর কারণেও বিষয়টি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন তাঁরা।

মা–বাবার কারনে অনেকেই পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে পারেন না
ছবি : প্রথম আলো

শুনুন, উপলব্ধি করুন

নিজের মতো করে কারণ খুঁজে বের করার পরেও কিন্তু অভিভাবকদের যুক্তিগুলো আপনাকে মন দিয়ে শুনতে হবে। উপলব্ধি করতে হবে তাঁদের দুশ্চিন্তার জায়গাটা। এমনভাবে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না, যাতে মনে হয়, আপনি তাঁদের কথাকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না কিংবা আপনি তাঁদের আবেগকে অবমূল্যায়ন করছেন। নিজ থেকে জীবনসঙ্গী পছন্দ করাটাকে তাঁরা ‘অপরাধ’ বলে গণ্য করতেই পারেন। তবে আপনি এভাবেও বোঝাতে পারেন, আপনি নিজে জীবনসঙ্গী পছন্দ করেছেন ঠিকই, কিন্তু বিয়ে করে নেননি। বরং অভিভাবকের অনুমতিক্রমেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাচ্ছেন।

আবেগ দিয়েই বোঝাবেন, প্রয়োজনে সাহায্য নেবেন

অভিভাবকদের সামনে নিজের আবেগের জায়গাটাকে সুন্দরভাবে তুলে ধরুন। মা-বাবার সঙ্গে ঝগড়া করবেন না। চিৎকার-চেঁচামেচি করবেন না। বরং আপনি যাঁকে পছন্দ করেন, তাঁর ভালো দিকগুলো উপস্থাপন করুন। মা-বাবাকে বোঝাতে পারেন, আপনার সঙ্গে তাঁর দারুণ বোঝাপড়া। তা ছাড়া আজকের পৃথিবীতে অচেনা বা স্বল্পচেনা মানুষকে যে বিশ্বাস করা কঠিন, সেটাও বুঝিয়ে বলতে পারেন। তবে অভিভাবকের সঙ্গে যে বিষয়েই কথা বলুন, পরিমিতবোধ বজায় রাখুন। আস্থার জায়গা গড়ে তুলুন। নিজের পছন্দে বিয়ে করতে চাচ্ছেন বলেই যে তাঁদের অবাধ্য হয়ে যাচ্ছেন, এমনটা যেন মনে না হয়। তবে পছন্দ করা সঙ্গীকে আপনার মা-বাবার ইচ্ছানুযায়ী বদলে যেতে বলবেন না। এটি তাঁর জন্য অসম্মানের। এতে সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধন আলগা হয়ে পড়তে পারে। মা-বাবাকে বোঝানোর জন্য পরিবারের এমন কারও সাহায্য নিতে পারেন, যাকে আপনার মা-বাবা মান্য করেন। মা-বাবার বন্ধুদের কাছেও এ ব্যাপারে সাহায্য পেতে পারেন। মা-বাবার আশীর্বাদ নিয়েই একটি সুখী দাম্পত্যের স্বপ্ন দেখছেন, নিজের আবেগকে সেভাবেই উপস্থাপন করুন।

আরও পড়ুন