মা বললেন, ‘মিথিলা ট্রাক চালানোও শিখে নিয়েছিল’
তানজিয়া জামান মিথিলা আলো ছড়াচ্ছেন মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে। তাঁর বাড়ি মাগুরা শহরে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর বাড়ি ও বাড়ির মানুষদের নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ এখন তুঙ্গে। আর এই বাড়িতেই থাকেন মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২৫ তানজিয়া জামান মিথিলার মা মিছরি খাতুন। গতকাল ২০ নভেম্বর রাতে মুঠোফোনে কথা হলো মিছরি খাতুনের সঙ্গে।
মিছরি খাতুন জানালেন, গতকাল ২০ নভেম্বর বিকেলেই মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। মিথিলা বলেছেন, মা যেন তাঁর জন্য বেশি বেশি দোয়া করেন। কারণ, মায়ের দোয়াই মিথিলাকে এত দূর এনেছে।
মাগুরা থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর মিথিলা চেয়েছিলেন ঢাকায় পড়াশোনা করতে। কিন্তু বাধ সাধেন পরিবারের লোকেরা। কারণ, পরীক্ষার কিছুদিন আগে মিথিলার বাবা মারা যান, কাজেই মিথিলার পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাঁর বিয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে চান।
তিন বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট মিথিলার জন্য পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান তাঁর মা। তিনি বলেন, ‘মিথিলা যা চায়, তা–ই হবে।’
মায়ের সমর্থনেই ঢাকায় পড়াশোনা করতে আসেন মিথিলা। শখের বসে টুকটাক মডেলিং করতেন, ধীরে ধীরে নিজের মনের গোপন ইচ্ছাটাকে বাস্তবে রূপ দেন মিথিলা। হয়ে ওঠেন দেশের প্রথম সারির মডেল।
মিছরি খাতুন বলেন, ‘মডেলিংয়ের বিষয়ে আমার অতটা আগ্রহ ছিল না, তবে মেয়ের আগ্রহে কখনো বাধা দিইনি। ঢাকা থেকে ফোনে বলত, “মা, আমার মডেলিংয়ের জন্য জিনিসপত্র কিনতে টাকা লাগবে।” আমিও তাকে সাধ্যমতো টাকা পাঠানোর চেষ্টা করতাম।’
মিথিলার পছন্দ–অপছন্দ
মিছরি খাতুনের কাছেই জানা গেল, মিথিলা ছোটবেলা থেকেই খুব শান্ত ও ঠান্ডা প্রকৃতির। তিনি বলেন, ‘সারা দিনই ঘরে বসে পড়ত আর বলত, “মা, আমার যেকোনো উপায়ে হোক, ঢাকায় পড়তে যেতে হবে।”’
তবে ছোটবেলা থেকে নাকি খাওয়াদাওয়া নিয়ে মাকে বেশ জ্বালাতেন। বাবা–ন্যাওটা মেয়ে ছিলেন, তাই বাবা বাড়িতে এসে তাঁকে ভাত খাইয়ে দিতেন। শৈশব–কৈশোরের মিথিলা ভালোবাসতেন চিংড়ি, ইলিশ মাছের পেটি ও দেশি মুরগি। এ ছাড়া আর কোনো খাবারই নাকি মুখে দিতেন না। বাবাও মেয়ের পছন্দের কথা মাথায় রেখে বাজার থেকে এসব কিনে আনতেন।
মিছরি খাতুন বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর মেয়েটা মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছিল। বাবার জন্য এখনো কাঁদে। প্রায়ই বলে, “আব্বাকে আমি খুব মিস করি, মা।”’
দস্যি মিথিলা
মা যতটুকু মিথিলার পাশে থেকেছেন, বাবার কাছেও ঠিক ততটাই আদুরে ছিলেন মিথিলা। ভাইদের মতো শার্ট-প্যান্ট পরতে ভালোবাসতেন। বাবাও বাজার থেকে তেমন পোশাক কিনে আনতেন। প্যান্ট–শার্ট পরেই বাবার মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন মিথিলা। বাবার তখন চিন্তা, কোথায় গেল মেয়েটা!
মায়ের কাছেই জানা গেল, মিথিলা নাকি ট্রাকও চালাতে পারেন। মিছরি খাতুন বলছিলেন, ‘আমাদের ইটের ভাটা আছে, যে কারণে ট্রাক ছিল, ড্রাইভারদের কাছ থেকে মিথিলা ট্রাক চালানোও শিখে নিয়েছিল।’
মিথিলার জন্য মায়ের গর্ব
মিস ইউনিভার্স ২০২৫–এর চূড়ান্ত ফলাফল এখনো ঘোষণা হয়নি, তারপরও এখনই মিথিলাকে দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন তাঁর আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশী।
এই যে মিথিলা এখন বিশ্বের বড় এক আয়োজনের মঞ্চে, আপনার কেমন লাগছে? মিছরি খাতুন বললেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) এক নারী রাস্তায় আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আপনি তো গর্বিত মা, এমন মেয়ে জন্ম দিয়েছেন যে পুরো দেশের নাম উজ্জ্বল করছে।” খুশিতে চোখে পানি চলে এল।’
থাইল্যান্ডে মিস ইউনিভার্সের ৭৪তম আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তানজিয়া জামান মিথিলা। ‘পিপলস চয়েস’ বিভাগে কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। আলাদা করে নজর কেড়েছেন বিচারকদের। এরই মধ্যে তাঁকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে সামাজিক মাধ্যমে। মিথিলা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারবেন কি না, তা জানা যাবে আজ ২১ নভেম্বর।