বয়সের ব্যবধান বেশি হলেও যে সূত্রে সুখী হন দম্পতিরা

ভিন্ন সময়ে বেড়ে ওঠা দুটি মানুষের ভাবনাচিন্তার ধরন অনেকটাই আলাদা। এমন দুজনের একসঙ্গে পথ চলতে গেলে নানান বিষয়ে মতের অমিল হতেই পারে। বয়সের পার্থক্যটা যখন বেশি, তখন হয়তো একজনের চোখে পৃথিবী রঙিন, অপরজন অভিজ্ঞতার নিরিখে সবকিছু বিচার করেন। তবু তো সুখী হন তাঁরা। কী তাঁদের সুখের সূত্র?

দম্পতির বয়সের পার্থক্য ঠিক কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে সুখের এক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া। দাম্পত্যে খোলামেলা আলোচনার বিকল্প নেই। নিজের সম্পর্কে জানাতে হবে সঙ্গীকে। তাঁর দিকটাও জানতে হবে, বুঝতে হবে। বয়সের ব্যবধান যেমনই হোক, সম্পর্কটা যখন দাম্পত্য, তখন একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠার মানসিকতা থাকা খুবই জরুরি। এসব সূত্র মেনেই সুখী হন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক

আধুনিকতা আর অভিজ্ঞতার মিশেলে দারুণভাবে একটা সংসার বোনা যেতে পারে, যদি পরস্পরের কথা গ্রহণ করার মানসিকতা থাকে, ছাড় দেওয়ার সদিচ্ছা থাকে
ছবি: প্রথম আলো

দায়িত্বশীল আচরণ

যিনি বয়সে বড়, তিনি যদি ধরেই নেন যে তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে সংসার চলবে, তাহলে অশান্তির ঝুঁকি বাড়ে। অভিজ্ঞ পরামর্শ তিনি নিশ্চয়ই দেন। তবে তা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া বা আধিপত্য প্রদর্শনের মতো ব্যাপার হয় না। আবার যিনি বয়সে ছোট, তাঁকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়। সঙ্গীর কথা খানিকটা সেকেলে মনে হলেও তা একেবারে উড়িয়ে দেন না তিনি। আধুনিকতা আর অভিজ্ঞতার মিশেলে দারুণভাবে একটা সংসার বোনা যেতে পারে, যদি পরস্পরের কথা গ্রহণ করার মানসিকতা থাকে, ছাড় দেওয়ার সদিচ্ছা থাকে। সঙ্গীকে ভালোবেসে নিজের খানিকটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনা খারাপ কিছু নয়।

আলোচনায় বোঝাপড়া

যেকোনো বিষয়ে নিজের ভাবনা ভাগ করে নিতে হয় সঙ্গীর সঙ্গে। মতপার্থক্য থাকলেও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে হয়। অভিমান চেপে না রেখে নিজের মনের কথা স্পষ্টভাবে বলা জরুরি। দুজনের জীবনধারা হয়তো আলাদা। একজন রাত জাগেন, অন্যজন দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন। একজন হয়তো একটু রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতে অভ্যস্ত, অন্যজনের আবার সন্ধ্যার মধ্যেই ঘরে ফেরার অভ্যাস। নানান কিছু নিয়েই মতের অমিল থাকতে পারে। তবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস থাকলে কোনো কিছুই খুব বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

সংবেদনশীল বিষয়ে

কিছু বিষয় অবশ্য খুব সংবেদনশীল। পোশাক–আশাক, পেশা, পারিবারিক ঐতিহ্য, সন্তান পালন প্রভৃতি বিষয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সংবেদনশীল বিষয়ে বিয়ের আগেই জেনে নেওয়া প্রয়োজন, যাতে পরে এসব নিয়ে অশান্তি না হয়। তবে কিছু বিষয় বিয়ের পরও সামনে আসতে পারে।

দ্রুত সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে পারিবারিক চাপও থাকতে পারে সঙ্গীর ওপর, তবে সঙ্গী হয়তো সন্তানপালনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত মনে করছেন না
ছবি: প্রথম আলো

ধরা যাক, যাঁর বয়স বেশি, তিনি দ্রুত সন্তান নেওয়ার পক্ষে। এ ব্যাপারে পারিবারিক চাপও থাকতে পারে তাঁর ওপর। তবে সঙ্গী হয়তো সন্তানপালনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত মনে করছেন না। কিংবা ক্যারিয়ার গোছানোর কাজটাই হয়তো তিনি করতে চান প্রথমে। এমন পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। দুজনের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সন্তানধারণের জন্য কত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারবেন তিনি।

আরও পড়ুন

লোকের কথায় ভয়?

যে যা-ই বলুক, সঙ্গীর প্রতি ভরসা রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারও কথায় প্ররোচিত হওয়া ঠিক নয়
ছবি: প্রথম আলো

চেনা–জানা মানুষেরা কখনো কখনো দাম্পত্যে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেন। কেউ কেউ বয়সের ব্যবধান নিয়ে হাসাহাসি করতে পারেন। কেউ আবার এ নিয়ে অমূলক ভয় ঢুকিয়ে দিতে পারেন দুজনের কারও মনে। যে যা-ই বলুক, সঙ্গীর প্রতি ভরসা রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারও কথায় প্ররোচিত হওয়া ঠিক নয়।

আরও পড়ুন