যে ৭ উপায়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবেন
মানুষ একা চলতে পারে না, জীবনের প্রতিটি ধাপে আমাদের অন্যদের সাহায্যের দরকার হয়। তাই আমাদের নেটওয়ার্ক বাড়ানো দরকার। তবে অচেনা কারও সঙ্গে জোর করে কথা বলা, মেকি হাসি দিয়ে আলাপ চালিয়ে যাওয়া কিংবা এমন কারও বিজনেস কার্ড নেওয়া, যাকে পরে আর কখনো ফোনই করা হবে না—এসব কাজ অনেকের কাছে বিব্রত ও বিরক্তিকর লাগে।
সত্যি কথা বলতে, খুব কম মানুষ আছেন যাঁরা নেটওয়ার্কিংয়ের কথা ভেবে খুশি হন। তার চেয়ে বরং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো অনেক বেশি আনন্দের ও স্বাচ্ছন্দ্যের। তবু বাস্তবতা হলো নেটওয়ার্কিং ছাড়া আজকের দুনিয়ায় সফল হওয়া কঠিন। আপনার নেটওয়ার্ক যত বড় হবে, চাকরি, ব্যবসা বা পদোন্নতির সুযোগ তত বাড়বে।
কীভাবে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবেন, সেই বিষয়ে কিছু সহজ আর সৃষ্টিশীল উপায় জেনে নিন।
১. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত থাকুন
নেটওয়ার্কিং মানে এই না যে আপনাকে বড় কোনো ইভেন্টে গিয়ে অচেনা লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। চাইলে ঘরে বসেই আপনি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারেন। অনলাইনে অনেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, তার মধ্যে বিশেষ করে লিংকডইন বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ শুরু করার চেষ্টা করুন। প্রথমে আপনার প্রোফাইল ঠিক করে নিন। একটি স্পষ্ট ও পেশাদার ছবি দিন। কোথায় পড়েছেন, কোথায় কাজ করেছেন—এই তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে লিখুন। এরপর যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, চিন্তাভাবনা করে তাঁদের বেছে নিন। যখন কাউকে মেসেজ পাঠাবেন, সেটা যেন ছোট, আন্তরিক এবং একটু আলাদা হয়। একেবারে সাধারণ বা কপি-পেস্ট করা মেসেজ যেন না হয়। আর যদি ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাউকে অ্যাড করতে চান, তাহলে ভদ্রভাবে অনুমতি নিন।
২. প্রশ্ন করে মানুষের মন জয় করুন
সবাই নিজের গল্প বলতে পছন্দ করে। তাই আপনি যদি আগ্রহ নিয়ে কারও কাছে প্রশ্ন করেন, বেশির ভাগ সময় তাঁরা খুশি হয়েই উত্তর দেবেন। এটা নেটওয়ার্কিংয়ের দারুণ একটা উপায়। অনেকেই পরিচয়ের সময় স্রেফ জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কী করেন?’ এই প্রশ্ন সাধারণ আর একঘেয়ে। বদলে বলতে পারেন, ‘আপনি এখন কী নিয়ে ব্যস্ত?’ বলতে পারেন, ‘ছুটির দিনে আপনি কী করতে ভালোবাসেন?’ ‘সাম্প্রতিক কোন বইটা পড়েছেন?’ ‘এই পেশাটা কেন বেছে নিলেন?’ অথবা ‘আমি কীভাবে এখন আপনাকে একটু সাহায্য করতে পারি?’ এ ধরনের প্রশ্ন করলে আলাপ সহজে শুরু হয়। মানুষ তখন নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এতে আপনার সঙ্গে একধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে।
৩. একে অপরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন
একে অপরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। এটাও একটি চমৎকার গুণ। এতে আপনি হয়ে উঠবেন একজন ‘কানেক্টর’। যিনি শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও সুযোগ তৈরি করেন। যেকোনো ইভেন্টে নিজেকে হোস্ট মনে করুন। যদি দেখেন দুজনের মধ্যে কোনো পারস্পরিক প্রয়োজন রয়েছে, তবে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিন। এতে তাঁদের উপকার হবে, ভবিষ্যতে তারাও আপনাকে গুরুত্ব দেবেন। আপনি যদি সব সময় মানুষকে সাহায্য করেন, তাহলে সবাই আপনাকে গুরুত্ব দেবে, আপনাকে প্রভাবশালী আর ভালো মানুষ হিসেবে দেখবে। এ ধরনের মানুষের সঙ্গে সবাই বন্ধুত্ব রাখতে চায়।
৪. সম্পর্ক ধরে রাখুন
নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যেমন দরকার, তেমনই পুরোনো সম্পর্ক বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। আগের সহকর্মী বা পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। এটি আপনার নেটওয়ার্ককে দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী করবে।
৫. যেকোনো জায়গায় নেটওয়ার্কিং করুন
নেটওয়ার্কিং শুধু অফিস বা ইভেন্টেই নয়, অপ্রচলিত জায়গায়ও করা যায়। যেমন মেট্রোরেল বা ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, পাশের কাউকে যদি বন্ধুবৎসল মনে হয়, তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এলিভেটর, জিম বা টংদোকানে চা খেতে খেতে ছোট্ট কথোপকথনের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। নিশ্চয়ই ভাবছেন, এদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে কী হবে? ওই মুহূর্তে তাঁদের কাউকে গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও ভবিষ্যতে কোনো কাজে যে তাঁদের সাহায্য লাগবে না, কীভাবে বলবেন? আর যদি তেমন কিছু না-ও হয়, তবুও এই চর্চা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, অন্যদের সঙ্গে সহজে মিশতে সাহায্য করবে। তাই সুযোগ পেলেই আলাপ শুরু করুন।
৬. নেটওয়ার্কিংকে অভ্যাসে পরিণত করুন
নিয়ম করে প্রতি মাসে নতুন কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করুন। শুধু নিজের সুবিধার জন্য নয়; বরং নতুন নতুন বিষয় শিখতে বা অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির জন্যও মানুষ চেনা খুব দরকার। এতে জ্ঞান বাড়ে, সুযোগও আসে।
৭. দুটি তালিকা তৈরি করুন
প্রথম তালিকায় রাখুন যাদের আপনি চিনেন। যেমন অফিসের সহকর্মী, কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হওয়া দূর সম্পর্কের আত্মীয়, প্রতিবেশী। দ্বিতীয় তালিকায় রাখুন যাদের আপনি এখনো চেনেন না; কিন্তু চিনতে চান। যেমন অফিসের বড় কর্মকর্তা, কোনো সংগঠনের মানুষ যেখানে আপনি যোগ দিতে চান বা এমন কেউ যিনি নিজ কাজে খ্যাতনামা।
সবশেষে
একটি আফ্রিকান প্রবাদ মনে রাখুন—তুমি যদি দ্রুত যেতে চাও, তবে একা যাও। আর যদি অনেক দূর যেতে চাও, তবে সবার সঙ্গে মিলে যাও।