ইচ্ছা করে মাকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে সারা মাসের চার্জ নিয়ে যাই
আজ মে মাসের দ্বিতীয় রোববার, মা দিবস। বিশেষ এই দিন উপলক্ষে আমরা মাকে নিয়ে লেখা আহ্বান করেছিলাম পাঠকের কাছে। পাঠক লিখেছেন তাঁর বেড়ে ওঠার পেছনে মায়ের অনুপ্রেরণার গল্প।
মা আমার কাছে যতটা না একটি শব্দ, তার চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্য। শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অনেক গল্প। আমার মা আমার কাছে একজন ‘সুপারহিরো’র মতো, আমার জন্য যে সব করতে পারে। সুপারহিরো বলার আরেকটি কারণ, কিছু বলার আগেই আমার মনের কথা বুঝে ফেলতে পারে মা। ধরুন, আমার কিছু একটা খেতে ইচ্ছা করছে অনেক দিন ধরে। ছোট্টবেলায় বলার আগেই মা সেটি নিয়ে চলে আসত অফিস শেষে। এখন অবশ্য চিত্রটা একটু বদলেছে। মায়ের সঙ্গে দেখা হয় কম। তারপরও আগে যেমন অফিস শেষে পছন্দের খাবার নিয়ে আসত, এখন মাঝেমধ্যে সেগুলো ক্যাম্পাসে চলে আসে।
আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে খুব ভালোবাসত মা, এখন আমি মাকে নিয়ে ঘুরতে ভালোবাসি। দেশে তো বটেই, যখনই জীবনের দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে গেছি, মা আর আমি দেশের বাইরেও ঘুরতে গিয়েছি। মা নিজের আয় থেকে একটি অংশ বাঁচিয়ে সম্ভবত আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেত। এখন খুব ইচ্ছা করে, নিজের টাকা দিয়ে মাকে ঘুরতে নিয়ে যাই দূর কোনো দেশে। ইচ্ছা করে মায়ের সব ইচ্ছা পূরণ করি, ঠিক যেভাবে সাধ্যের মধ্যে আমার সব ইচ্ছাকে মা প্রাধান্য দিয়েছে সারা জীবন, সবচেয়ে বেশি।
ছোটবেলায় পড়তে পড়তে ক্লান্ত লাগলে ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরা যেত। বলতাম, ‘তোমার কাছ থেকে একটু চার্জ নিয়ে যাই।’ এখন বন্ধুরা একসঙ্গে পড়ি, ক্লান্তি এলেও মাকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ পাই না। তাই মায়ের সঙ্গে দেখা হলে ইচ্ছা করে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে সারা মাসের চার্জ নিয়ে যাই।
মায়ের দেখা পেতে এখন অপেক্ষা করতে হয় অনেক দিন। কখনো এক সপ্তাহ, কখনো দুই, কখনোবা পেরিয়ে যায় মাস। মনে পড়ে, স্কুল থেকে ফিরে বাসাময় হুটোপুটির পর বিকেলবেলায় ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম বাসার বারান্দায়। মাকে অফিস থেকে ফিরতে দেখতে ভালো লাগত। অপেক্ষাটা এখন আরও লম্বা।
মা অফিস থেকে দেরি করে ফিরলে মন খারাপ করতাম, আর মা অপরাধবোধে ভুগত। এখন অপরাধবোধটা আমার, মন খারাপটা মায়ের। আমি বড় হই, মা বুড়ো হয়, আর কেমন করে যেন হিসাবগুলো এভাবে উল্টে যায়। মা বলে, সে নাকি আমার বাচ্চার মতো হয়ে যাচ্ছে, আমি হয়ে যাচ্ছি তার অভিভাবক। কিন্তু আমার শুধু মনে হয়, এই গল্পে আমিই সবচেয়ে বাচ্চা। লেখাপড়া শেষের দিকে হওয়ায় ক্যাম্পাসে এখন আমরাই সবচেয়ে বড়। সবার চোখে এত বড় হয়ে গেলেও মায়ের কাছে গেলেই মনে হয়, আমার বয়স হয়ে যায় আট বছর। একটি ছোট্ট ঋদ্ধ, যে বিকেলবেলায় জানালা ধরে অপেক্ষায় থাকে মায়ের জন্য।
লেখক: ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।