সঙ্গীকে যেসব কথা বলতে নেই

মান-অভিমান কোন সম্পর্কে থাকে না বলুন? দুজন মানুষ একই সঙ্গে চলতে গেলে কখনো কখনো রাগারাগি, ঝগড়াঝাঁটি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে যত রাগই হোক, কিছু কথা কখনোই বলতে নেই, যা সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে তোলে। এসব কথা বলে ফেলার পর ঠান্ডা মাথায় যতই আপনি দুঃখ প্রকাশ করুন না কেন, সম্পর্কে কিন্তু আগের সেই মধুরতা ফিরে না-ও আসতে পারে।

আমি এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যেতে চাই

আপনি আপনার সঙ্গীকেই ভালোবাসেন, তাঁর সঙ্গেই জীবনটা পার করতে চান। কিন্তু রাগের মুহূর্তে বলে ফেললেন তাঁকে ছেড়ে যাওয়ার কথা। বিচ্ছেদের হুমকি দিয়ে বসলেন। এতে কিন্তু আপনার সঙ্গীর বিশ্বাস টলে যাবে। তিনি এই সম্পর্কে আর নিরাপদ বোধ করবেন না।

যত রাগই হোক, কিছু কথা কখনোই বলতে নেই, যা সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে তোলে।
ছবি: প্রথম আলো

আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না

আপনি হয়তো ধারণা করছেন, আপনার সঙ্গী মিথ্যা বলছেন। এ রকম পরিস্থিতিতেও সরাসরি বিশ্বস্ততার প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। একটা ধারণার ওপর ভিত্তি করে কখনোই সঙ্গীকে ‘মিথ্যাবাদী’ আখ্যা দেবেন না, অন্য কারও কথা শুনে তো নয়ই। যে বিষয়ে আপনার মনে সন্দেহ হচ্ছে, তার বিস্তারিত জানতে চান তাঁর কাছে। তবে জেরার ভঙ্গিতে নয়, স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন করে সত্যটা জানতে চেষ্টা করুন। ‘অমুকে তো তোমাকে সেদিন অন্য জায়গায় দেখেছে’ এমন বাক্য বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। সঙ্গীর কথা থেকেই পুরো ঘটনাটি বুঝতে চেষ্টা করুন। তাঁর অবিশ্বস্ততার প্রমাণ পেলে কেবল তারপরই আপনি তাঁকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, এ ক্ষেত্রে চিৎকার-চেঁচামেচি কোনো সমাধান নয়। বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজুন।

তুমি সামান্য বিষয়ে ‘রিঅ্যাক্ট’ করছ

কোন বিষয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, তা আপনার সঙ্গীকে শেখাতে যাবেন না। বরং তিনি প্রতিক্রিয়া দেখালে মন দিয়ে শুনুন তাঁর কথা, বুঝতে চেষ্টা করুন, কেন তাঁর খারাপ লেগেছে। আপনার কাছে হয়তো বিষয়টা তুচ্ছ। কিন্তু একজন দায়িত্বশীল সঙ্গী হিসেবে আপনার উচিত হবে বিষয়টা পুরোপুরি বুঝে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা।

‘কখনোই’ এবং ‘সব সময়’

‘তুমি কখনোই আমাকে সাহায্য করো না’ কিংবা ‘তুমি সব সময় দেরি করো’ এ রকম বাক্য বলে সঙ্গীকে দোষারোপ করবেন না। বরং আপনি ঠিক কী চাচ্ছেন, তা স্পষ্ট করে বলুন এবং অবশ্যই মিষ্টি স্বরে!

স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে মতের অমিল হবেই, নিজেদের মধ্যেই বোঝাপড়া করে নিতে হবে
ছবি: প্রথম আলো

তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসতে, তাহলে…

এ ধরনের কথা বলে কারও ভালোবাসাকে পরীক্ষায় ফেলতে নেই। এতে অযাচিত চাপের মুখে পড়বেন আপনার সঙ্গী। বরং এ ক্ষেত্রেও সেই একই ব্যাপার; আপনি যা চাচ্ছেন, সেটা তাঁকে সুন্দরভাবে জানান। দুজনের ঘুরতে যাওয়ার সময় মিলছে না তাঁর ব্যস্ততার কারণে? ‘ভালোবাসলে ঠিকই সময় বের করতে’ না বলে বরং আপনি বলতে পারেন, তাঁর সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়গুলোকে ‘মিস’ করছেন।

আমার এমন কাউকে দরকার ছিল, যে আমাকে বোঝে

কেউ কারও মন শতভাগ বুঝতে পারবেন, এমন আশা করাটাই বোকামি। আপনার মনের ভেতরে কী আছে, তা আপনার সঙ্গী কেন বুঝতে পারছেন না, অন্য কেউ আপনার জীবনসঙ্গী হলে আপনার জন্য কত কী করে ফেলতেন—এসব কথা আপনার সঙ্গীর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তোমার পরিবার তো ওই রকমই

সঙ্গীর পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। তাঁদের প্রতি অসম্মানসূচক শব্দ প্রয়োগ করবেন না কখনোই।

আমাকে কি কাজের লোক বা টাকা কামানোর মেশিন মনে হয়?

এ ধরনের নেতিবাচক বাক্য উচ্চারণ করবেন না। আপনি হয়তো ঘরের কিংবা বাইরের কাজের চাপে পিষ্ট হচ্ছেন রোজ। আপনার অসুবিধার কথা বন্ধুর মতো করে ভাগ করে নিন সঙ্গীর সঙ্গে।

আপনার কথা বন্ধুর মতো করে ভাগ করে নিন সঙ্গীর সঙ্গে।
ছবি: প্রথম আলো

এসব করে কী হবে?

আপনার সঙ্গী হয়তো সামাজিক দৃষ্টিতে ‘ছোটখাটো’ কোনো কাজ করছেন। এ নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না। বলবেন না, ‘এসব করে কী হবে?’ বরং মনে রাখবেন, সৎ থেকে যে কাজই করা হোক না কেন, তা কখনো ‘ছোট’ হয় না। প্রয়োজনে তাঁর পাশে দাঁড়ান জীবনের লড়াইয়ে। তবেই না আপনি সত্যিকার জীবনসঙ্গী। আবার আপনার খারাপ সময়ে হয়তো আপনার সঙ্গী ‘ছোটখাটো’ কোনো উপহার বা আয়োজনে আপনাকে উৎফুল্ল করতে চাচ্ছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টাকে ছোট করে কখনোই বলবেন না, ‘এসব করে কী হবে?’

সূত্র: রিডারস ডাইজেস্ট