নানা অজুহাতে বারবার সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার

মিতি সানজানা

প্রশ্ন: ২০২২ সালে আমি এইচএসসি পাস করেছি। এক বছরের বেশি হলো, একটা ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। কিন্তু বারবার নানা অজুহাতে সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আবার অনেক বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনি। আমার দিক থেকে তার সঙ্গে সম্পর্ক অনেক গভীর। তাকে ছাড়া একদমই থাকতে পারি না, কিন্তু বারবার সে এরই সুযোগ নেয়। আমাকে সে অনেকবার বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এখন পরিবার মানবে না বলে বিয়ে করতে চায় না। সে যদি আমার কাছে আর না আসত, আমিও তাকে ছেড়ে দিতাম। আমাকে সে ঠকাচ্ছে। এখন সে এমন করলে আমি আর বাঁচতে পারব না। পরিবারের কাছে মুখ দেখাতে পারব না। আমি চাই, সে আর তার পরিবার আমাকে মেনে নিক। আমি এখন কী করব, তার আইনি পরামর্শ চাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: আপনার বয়স কম। কম বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নানা ধরনের আবেগ কাজ করে। প্রেম বা বিয়ে, যেকোনো ক্ষেত্রেই ভাঙন আসতে পারে। দুই পক্ষের সম্মতি ছাড়া কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা উচিত নয়। কোনো এক পক্ষ অসম্মতি জানালে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা দুই পক্ষরই করা উচিত। যেহেতু অপর পক্ষ আপনার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার জন্য বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে, কাজেই আপনার ভেবে দেখা উচিত, কেন সে সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছে না। যেহেতু তাঁর পরিবার সম্পর্কটি মানতে চাচ্ছে না, সে জন্য হয়তো তিনি তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারছেন না। এ জন্য হয়তো তিনি আপনাকে আর অপেক্ষায় রাখতে চান না। কিন্তু আপনি কষ্ট পাচ্ছেন এবং প্রতারিত বোধ করছেন। শুধু আপনি প্রতারিত বোধ করলেই হবে না। প্রতারণার জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে এর আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে।

আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলক বা অসাধুভাবে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো অর্থ সম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করে, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছা করে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করে, যার কারণে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটি প্রতারণা হবে।

দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তার কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে।

এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, সে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। কেননা, কোনো সম্পর্ক ভেঙে গেলে যেকোনো এক পক্ষ প্রতারিত বোধ করতেই পারে। তবে আইনের চোখে তা প্রতারণা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া সে বা তার পরিবার আপনাকে মেনে না নিলে আইনগতভাবে তাদের বাধ্য করার কোনো উপায় নেই।

আশা করি, আপনি আবেগের বশবর্তী না হয়ে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রয়োজনে কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।

পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA