‘এ রকম স্বামী বা বাবা থাকার চেয়ে না থাকা অনেক ভালো’

ভারতের ছোট পর্দার ইতিহাসের সফলতম তারকাদের একজন শ্বেতা তিউয়ারি। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩৬ লাখ। সম্প্রতি তিনি বলিউড বাবলের ‘হার স্টোরি’ অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন নিজের ব্যক্তিজীবন, দুই বিয়ে, বিচ্ছেদ ও একা হাতে সন্তানদের বড় করা নিয়ে।

৪১–এও তরুণ শ্বেতা তিউয়ারি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

খুব ছোটবেলায়ই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান শ্বেতা। ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে পালিয়ে বিয়ে করেন আরেক অভিনেতা রাজা চৌধুরীকে। ২০০০ সালে জন্ম নেয় এই জুটির সন্তান পলক তিউয়ারি। সেই বিয়ে সুখের হয়নি। যদিও বিয়ে টিকিয়ে রাখার সব রকম চেষ্টা করেছেন শ্বেতা। বিয়ের ৯ বছর পর ২০০৭ সালে শ্বেতা বিচ্ছেদের আবেদন করেন। ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই জুটির বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়।

এক ফ্রেমে মা–মেয়ে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

বিচ্ছেদের কারণ সম্পর্কে শ্বেতা বলেন, ‘আমি সময় নিয়েছি। আমার মনে হচ্ছিল, নিজের সুখের জন্য আমি আমার সন্তানকে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করব? তারপরই আমার মনে হয়েছে, নিয়মিত যে ট্রমার ভেতর দিয়ে আমি যাচ্ছি, সে–ও তো একই ধরনের ট্রমা নিয়ে বড় হচ্ছে। একটা বাচ্চা দেখে যে তার বাবা নিয়মিত মাতাল হয়ে এসে তার মাকে পেটায়। একটা বাচ্চা দেখে, তার বাবা–মায়ের কাজের জায়গায় গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে। মায়ের গায়ে হাত তোলে। সে জীবনে এর চেয়ে খারাপ আর কী–ই বা দেখতে পারে?’

সমস্ত দুঃসময় পেরিয়ে কেবল সামনে তাকিয়েছেন শ্বেতা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

শ্বেতা জানান, তাঁর সবই ছিল। স্বাধীনতা, অর্থ, সাহস, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। শুধু মানসিক সমর্থনের জন্য খুব ছোটবেলায়ই সংসার পেতে থিতু হতে চেয়েছিলেন তিনি। শ্বেতা তাঁর প্রথম স্বামী থেকে অনেক বড় তারকা। তাই চেষ্টা করতেন তাঁর জীবনসঙ্গী রাজা যাতে কোনো হীনম্মন্যতায় না ভোগে, সেই দিকটি খেয়াল রাখতে। সবকিছুতেই রাজার মতামত নিতেন তিনি। জিজ্ঞেস করতেন, ‘এই পোশাক পরব, নাকি এটা? এই কাজটা করব?’  

শ্বেতা তিউয়ারি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

দিনের পর দিন মেকআপে শারীরিক আঘাতের চিহ্ন ঢেকেছেন শ্বেতা। চোখের পানি মুছে মুখের হাসি ধরে রেখেছেন ক্যামেরার সামনে। তারপর এক দিন সন্তান নিয়ে বেরিয়ে গেছেন বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে। শ্বেতা বলেন, ‘বিশ্বাস করুন, এ রকম স্বামী বা বাবা থাকার চেয়ে না থাকা অনেক ভালো। আপনার যদি মনে হয় যে একটা মৃত সম্পর্কের গোড়ায় পরিবার আর সমাজের দিকে তাকিয়ে পানি ঢালছেন, ভুল করছেন। আপনার যদি অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা থাকে, ওই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসুন। যদি না থাকে, তবু ওই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসুন। আর অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত হোন। বিশ্বাস করুন, আপনি অনেক ভালো থাকবেন।’

ছেলের সঙ্গে শ্বেতা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

শ্বেতা একবার নয়, দুবার করেছেন একই ভুল। তিন বছর প্রেমের পর ২০১৩ সালে বিয়ে করেন আরেক অভিনেতা অভিনব কোহলিকে। ২০১৬ সালে জন্ম নেয় এই জুটির পুত্রসন্তান। ২০১৭ সাল থেকে তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। ২০১৮ সালে শ্বেতা তাঁর ও তাঁর মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত খারাপ আচরণের জন্য বিচ্ছেদের আবেদন করেন। এখনো তাঁরা আলাদা আছেন।

শ্বেতার ৬ বছর বয়সী ছেলে ও ২২ বছর বয়সী মেয়ে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

শ্বেতাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা আর বিদ্রুপের শিকার হতে হয়েছে। অনেকেই জিজ্ঞেস করে, তৃতীয় বিয়ে কবে করবেন। আবার টিপ্পনী কেটে এও বলে, শ্বেতার মেয়ে পলক নাকি পাঁচটা বিয়ে করবে। শ্বেতা এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি কবে তৃতীয় বিয়ে করব, এটা নিতান্তই আমার সিদ্ধান্ত। তারা কি আমার বিয়ের খরচ বহন করবে? আমার মেয়ে পাঁচটা বিয়ে করবে, নাকি একটাও করবে না, এটা ওর সিদ্ধান্ত। এমনও তো হতে পারে, ও ছোটবেলার বিভৎস স্মৃতিতাড়িত হয়ে জীবনে বিয়েই করল না। এটাও খারাপ, কেননা, সম্পর্কের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফুরফুরে মনে বেঁচে থাকা কঠিন। এমনকি আমার ছয় বছর বয়সী সন্তানকে প্রতিবেশীরা জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা, বাবা কি বাসায় আসে? আমি কোনোদিন আমার কোনো সন্তানকে বলিনি যে তোমার বাবা খারাপ বা তোমরা বাবার সঙ্গে কথা বলবে না। আমি চেয়েছি, বাবা আর সন্তানদের যদি স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকে, থাকুক। সেটা ওদের সম্পর্ক। আমি তার মাঝে যেতে পারি না। কেন যেন ওরা নিজেরাই বাবাকে মিস করে না। কোনোদিন বাবার কথা বলে না।’

শ্বেতা যেন ছাই থেকে জেগে ওঠা এক ফিনিক্স
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

শ্বেতা নিয়মিত কাজ করছেন। তাঁর কন্যা পলক তিউয়ারি একাধিক মিউজিক ভিডিওতে দেখা দিয়েছেন। বলিউডের বড় পর্দার দিকে চোখ রেখে পথ চলছেন তিনি। মায়ের মতোই আত্মবিশ্বাসী আর স্মার্ট হিসেবে নামডাক আছে পলকের।

পলক তিউয়ারি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে