কম বয়সে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার পর যা হয়
শিশু, কিশোর বা উঠতি বয়সী তরুণদের পড়ালেখা ছাড়া খুব বেশি দায়িত্ব সাধারণত থাকে না। পরিবারের কাজে সহযোগিতা করলেও সেটি অভিভাবকের তত্ত্বাবধানেই হয়ে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, যখন কম বয়সী সন্তানকেও নিতে হয় পরিবারের দায়িত্ব, যা তার বয়সের তুলনায় অনেক বেশি। একেই বলে প্যারেন্টিফিকেশন। বলছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক।
কেমন হয় সেই দায়িত্ব?
প্যারেন্টিফিকেশনের আওতায় কম বয়সেই পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন, খাবারদাবারের ব্যবস্থা, বাড়ির দেখাশোনা কিংবা ছোট ভাইবোনকে মানুষ করার দায়িত্ব নিতে হতে পারে। মা–বাবাকে মানসিক সমর্থন দেওয়ার কাজটাও করতে হতে পারে। তবে অনেকেই শিক্ষাজীবনে নিজের খরচ চালানোর জন্য টুকটাক কাজ করেন, বাড়িতে মা–বাবাকে কাজে সহযোগিতা করেন কিংবা ছোট ভাইবোনের দেখভাল করেন। মা–বাবার তত্ত্বাবধানে থেকে এমন কাজ করাকে কিন্তু প্যারেন্টিফিকেশন বলা হয় না।
কেন এই দায়িত্বের বোঝা?
প্যারেন্টিফিকেশন অর্থ কম বয়সেই মা–বাবার মতো করে দায়িত্ব নেওয়া। মা–বাবা কেউ যদি মারা যান, শারীরিক বা মানসিক কারণে পরিবারের দায়িত্ব পালনে অপারগ হন কিংবা কোনো কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকেন, সে ক্ষেত্রে কম বয়সী সন্তানকে বয়সের তুলনায় বেশি দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে দেখা যায়।
অতিরিক্ত দায়িত্বে যেমন হয় জীবন
বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হলে জীবনটা আর ঠিক স্বাভাবিক ছন্দে চলে না। কম বয়সের রঙিন পৃথিবীটা ধূসর হয়ে যায়। আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে, কম বয়সে দায়িত্ব নিতে শিখে যাওয়াটা ভালো। কিন্তু কম বয়সের বাড়তি দায়িত্বের কারণে অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। নষ্ট হয় বয়সের স্বতঃস্ফূর্ততা। নিজেকে অনেক কিছু থেকে বিরত রাখার প্রবণতা গড়ে ওঠে।
দায়িত্বের চাপে নিজের ছোটখাটো শখ–আহ্লাদ, এমনকি স্বপ্নও হারিয়ে যায়। বিষণ্নতা গ্রাস করতে পারে একসময়; হতে পারে বঞ্চনার অনুভূতি। এমনকি নিজের দায়িত্বে থাকা কেউ কোনো কারণে মন খারাপ করলেও নিজেকেই দোষী মনে হয়। বছরের পর বছর ধরে নানা দায়িত্বের বোঝা বইতে বইতে ক্লান্তও হয়ে পড়তে পারেন তিনি।
অন্যান্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে
প্যারেন্টিফিকেশনে দায়িত্ব নিতে নিতে সব সময় অন্যের খুশির দিকে অতিরিক্ত খেয়াল রাখাটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়াতে পারে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। পরবর্তী জীবনে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমনই হয়ে দাঁড়ায়। জীবনে কেউ পাশে দাঁড়িয়ে অকুণ্ঠ সমর্থন দেবেন কিংবা জীবনের দায়িত্ব ভাগ করে নেবেন, এমনটা বিশ্বাস করাই কঠিন হয়ে পড়ে।
যাঁরা কাছের মানুষ
কাছের মানুষেরাও তাঁকে যত্ন করছেন, এ অনুভূতিটা তাঁর মানসিক সুস্থতার জন্য খুব জরুরি। সবাই তাঁর আত্মত্যাগকে ‘টেকেন ফর গ্র্যান্টেড’ অর্থাৎ ওর তো এটা করারই কথা ছিল বলে ধরে নিচ্ছেন, এমনটা যেন মনে না হয়। এ ধরনের মানুষের বন্ধু ও জীবনসঙ্গীর দায়িত্ব একটু অন্য রকম। মনের কথা উজাড় করে দেওয়ার মতো ও স্বস্তির অনুভূতি দেওয়ার মতো সত্যিকার বন্ধু, এমন মানুষের প্রয়োজন। আর জীবনের দায়িত্বের বোঝা ভাগ করে নেওয়াটাও তাঁর জীবনসঙ্গীর এক বিশেষ দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়।