সম্পর্কে পিঙ্ক ফ্ল্যাগগুলোই পরবর্তী সময়ে বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে না তো?
দাম্পত্য বা রোমান্টিক সম্পর্কে আপাতদৃষ্টে কিছু সমস্যাকে ‘পাত্তা দেওয়ার মতো’ বড় মনে না হলেও সময়ে বা পরিস্থিতিতে সেসব মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এমনকি হতে পারে বিচ্ছেদের কারণও।
পিঙ্ক ফ্ল্যাগ কী
সম্পর্কে রেড ফ্ল্যাগগুলো নিয়ে আমরা সবাই কমবেশি সচেতন হয়ে উঠছি। সঙ্গীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, অসম্মান, মূল্যায়ন না করা, সারাক্ষণ সন্দেহ করতে থাকা, চাপে রাখা—এসবকে এককথায় রেড ফ্ল্যাগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আবার আপনি ঠিক যেমন সম্পর্ক আশা করেন, সম্পর্কে যা যা চান, তা মিলে যাওয়াকে বলে গ্রিন ফ্ল্যাগ। তবে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেসব ঠিক রেড বা লাল নয়, আবার গ্রিন বা সবুজও নয়, মাঝামাঝি বলা চলে। আপাতদৃষ্টে প্রাথমিকভাবে সেসবকে ‘পাত্তা দেওয়ার মতো’ বড় সমস্যা মনে না হলেও সময়ে বা পরিস্থিতিতে সেসব রেড ফ্ল্যাগের মতোই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এমনকি হতে পারে বিচ্ছেদের কারণও। রোমান্টিক বা দাম্পত্য সম্পর্কে সেই পিঙ্ক ফ্ল্যাগগুলো কী?
১. দুজনের ‘লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ’ ভিন্ন
একজনের কাছে হয়তো সম্পর্কে শারীরিক আকর্ষণটা মুখ্য, অন্যজনের কাছে ভালোবাসা হলো সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, নানান অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা, সঙ্গীর জন্য নানান কিছু করা বা হতে পারে ভালো ভালো রেঁধে খাওয়ানো। এখন একজন যদি অন্যজনের ভালোবাসার ভাষাকে মূল্যায়ন না করেন, তাহলে সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যায় পরিণত হতে পারে।
২. দুজনের জীবনের লক্ষ্য ভিন্ন হওয়া
ধরুন, দুজনার একজন সন্তান চাইছেন। আরেকজন সন্তানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নন। এই দ্বিমত সম্পর্ক ভেঙে ফেলার জন্য যথেষ্ট।
৩. ঝগড়া এড়িয়ে চলা
সম্পর্কে দুটি মানুষের দ্বিমত, ভিন্নমত, মান-অভিমান থাকাটাই স্বাভাবিক। ‘আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হয় না’—এর মানে দুজনের কোনো একজন অথবা দুজনই ঝগড়া এড়িয়ে যাচ্ছেন, চেপে যাচ্ছেন, নীরবে সইছেন, নিজেকে প্রকাশ করছেন না বা চুপচাপ সবকিছু মেনে নিচ্ছেন। এ রকম ছোট ছোট অমীমাংসিত ইস্যু একসময় এত বড় আকার ধারণ করবে যে সেটা আর কোনোভাবেই সমাধান করা সম্ভব হবে না। আর ঠিক এ কারণেই ‘আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই’ মানে সেই জুটির বড় কোনো সমস্যা আছে! কেননা কোনো একজন অথবা দুজন সমস্যা প্রকাশই করছেন না বা করাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না।
৪. প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব
আপনি যদি প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চালিয়ে যান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপনার সঙ্গী বাহ্যিক উদারতা দেখিয়ে মুখে কিছু না বললেও মনে মনে মেনে নিতে পারেন না। আর সেটা অন্যভাবে প্রকাশ পেতে থাকে। তাই সম্পর্কবিশেষজ্ঞরা প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখাটাকেই শ্রেয় মনে করেন।
৫. অর্থনৈতিক বিষয়ে দ্বিমত
ধরুন, আপনি ‘একটু কম খেয়ে কম পরে’ টাকা জমিয়ে আগে একটা বাড়ি কিনতে বা বানাতে চান। আর আপনার সঙ্গী ‘ইউ অনলি লিভ ওয়ান্স’ মতবাদে বিশ্বাসী। তিনি তাঁর সব ছোটখাটো শখ-আহ্লাদ পূরণ করে বাঁচতে চান। তিনি বাড়ি–গাড়ি চান না। বিশ্ব ঘুরে দেখাই তাঁর ইচ্ছা। প্রাথমিকভাবে এটিকে বড় সমস্যা মনে না হলেও পরবর্তী সময়ে তা জটিল আকার ধারণ করে সম্পর্কে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৬. মনের ভাব সঠিকভাবে প্রকাশ না করা
আপনি যদি সঙ্গীর সঙ্গে নিজের অনুভূতি যথাযথভাবে প্রকাশ না করেন, তখন শুরু হয় ‘গেসিং গেম’। এর ফলে সম্পর্কে ভুল–বোঝাবুঝির অবকাশ তৈরি হয়।
কী করবেন
এসব ক্ষেত্রে পিঙ্ক ফ্ল্যাগগুলো জমে জমে গাঢ় হয়ে রেড ফ্ল্যাগ হয়ে ওঠার আগেই সেসবের মোকাবিলা করতে হবে। সম্পর্কটাকে যদি দুজনেই সবার আগে প্রাধান্য দেন, তাহলে দুজনকেই সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হতে হবে। তবে সবার আগে নিজের মনের গভীরের কথা শোনার কোনো বিকল্প নেই। অনেক সময় আপনার মন আপনাকে বারবার সতর্ক করে দেয়। কিন্তু আপনি প্রেমে পড়ার প্রাথমিক আবেগে বা শারীরবৃত্তীয় রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার প্রভাবে সেসবে পাত্তা দেন না। বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের মনের কথা শুনুন। নিশ্চিত হয়ে তবেই আগান।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট