সঙ্গীর ওপর অতিরিক্ত খবরদারি করছেন না তো?

সঙ্গীর ওপর অতিরিক্ত কর্তৃত্ব অনেক সময় সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ফেলে। মডেল: সায়রা ও রেহান
ছবি : সুমন ইউসুফ

আপনি কী সঙ্গীকে রোজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে তাড়া দেন? কী খাবে ঠিক করে দেন? অথবা সারা দিন কী করবে, না করবে বলে দেন? জেনে-বুঝে অথবা নিজের অজান্তে করা এই কাজগুলো আপনার সঙ্গীর ওপর ফেলতে পারে বাড়তি চাপ। এমনকি তাঁর মধ্যে তৈরি করতে পারে হীনম্মন্যতা।

সঙ্গীর ওপর এ ধরনের কর্তৃত্ব অনেক সময় ভালোর চেয়ে খারাপ প্রভাব ফেলে বেশি। সম্পর্কে কমতে থাকে রোমান্টিকতা, বাড়তে থাকে তিক্ততা। এ ধরনের অভিভাবকত্ব আরও প্রমাণ করে, আপনি আপনার সঙ্গী, এমনকি নিজের ওপরও সন্তুষ্ট নন। দিল্লির সম্পর্ক পরামর্শক রুচি রাহ বলেন, ‘একজন বাবা বা মা তাঁর সন্তানের যেভাবে খেয়াল রাখেন, তাঁদের চিন্তাধারা নিয়ন্ত্রণ করেন এবং অনেক নিয়মনীতি ঠিক করে দেন, সঙ্গীর সঙ্গে তেমন অভিভাবকসুলভ আচরণ তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করার শামিল।’ এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ নানাভাবে করতে পারেন একজন সঙ্গী। হতে পারে সেটা সঙ্গীর ব্যবহার পরিবর্তন করার চেষ্টা, নিরাপত্তাহীনতা দূর করার চেষ্টা, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন বা সঙ্গীকে নিজের সমকক্ষ করার চেষ্টা।

মনোবিজ্ঞানী ড. সরোস প্রসাদ বলেন, সঙ্গীর অভিভাবকত্ব দুই ধরনের হতে পারে। এক, সাধারণ বা ইতিবাচক; দুই, নেতিবাচক।

ইতিবাচক অভিভাবকত্বে একজন সঙ্গী আরেকজন সঙ্গীর যত্ন নেন, তাঁর খেয়াল রাখেন বা তাঁর কাজে সাহায্য করেন, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঙ্গীর দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি দাম্পত্যকে আরও সুগঠিত করে। সরোস আরও বলেন, অনেক মানুষই সঙ্গী হিসেবে তাঁর চেয়ে বিচক্ষণ ও মানসিকভাবে বেশি পরিপক্ব ব্যক্তিকে পছন্দ করেন। যাতে সঙ্গীর কাছ থেকে তাঁরা সুপরামর্শ পান, জীবন চলার পথে ভুলত্রুটি কম করেন। অনেকে নিজের ইচ্ছাতেই সঙ্গীর আদর্শ সামনে রেখে পথ চলতে চান। এ ধরনের অভিভাবকত্ব অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্কে ভালো অবদান রাখে।

আর নেতিবাচক অভিভাবকত্ব বিষয়ে সরোস বলেন, ‘এ ধরনের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে সঙ্গী স্বেচ্ছায় এই নিয়ন্ত্রণ চান না। সঙ্গীর এ ধরনের নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তির নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলার শঙ্কা থাকে। আপনার সঙ্গীর কাছ থেকে ক্রমে কী খাবেন, কীভাবে হাঁটবেন, কী ধরনের পোশাক পরবেন, আপনার বন্ধু কে হবেন অথবা আপনার সাজসজ্জা যুগোপযোগী নয়; এ ধরনের মন্তব্য আপনার মধ্যে ব্যক্তিত্ব-সংকট তৈরি করতে পারে।’

সরোস আরও বলেন, ‘সঙ্গীকে আপনি এটা শিখাতে পারেন যে তাঁর সব কথা শুনে নিজেকে পরিবর্তন করার চেয়ে আপনি যেমন, সেভাবেই আপনাকে মেনে নেওয়া উচিত।’

আপনার সঙ্গী আপনার ওপর কর্তৃক করছেন কি না, তাঁর কিছু ব্যবহারেই তা বোঝা যাবে।

  • সঙ্গী যদি সারাক্ষণ নেতিবাচক সমালোচনা করেন এবং আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন করেন।

  • একা নিজে সব সিদ্ধান্ত নেন।

  • অযাচিত পরামর্শ দেন।

  • সঙ্গী যদি ব্যক্তিত্ব বদলাতে, চাকরি ছাড়তে বা পরিবর্তন করতে, শখ বদলাতে চাপ প্রয়োগ করেন।

  • অন্য দম্পতি বা যুগলের সঙ্গে তুলনা করা বা তাঁদের মতো হওয়ার জন্য উদাহরণ টানা।

সঙ্গীর ওপর এ ধরনের কর্তৃত্ব ফলানোর পেছনে থাকতে পারে বেশ কিছু কারণ।

  • নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা

  • আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব

  • সম্পর্কে অবাস্তব চাওয়া-পাওয়া

  • একাকিত্বের ভয়

  • নিরাপত্তাহীনতা এবং নিজের প্রতি সন্দিহান থাকা

  • পারিবারিক শিক্ষা

  • সঙ্গীর দায়িত্বহীনতা

সঙ্গীর ওপর কর্তৃত্ব তৈরি করার ফলে দুজনের সম্পর্কে আসতে পারে নানা প্রতিবন্ধকতা। সম্পর্কে আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। সঙ্গীদের মধ্যে নৈরাশ্য তৈরি হতে পারে। শারীরিক দূরত্ব তৈরি হয় দুজনের মধ্যে। সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। সঙ্গীর স্বতন্ত্রতাকে মেনে নেওয়ার পরিবর্তে নিজের ইচ্ছাকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

সঙ্গীর ওপর কর্তৃত্ব চাপিয়ে না দিয়ে এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় সম্পর্কে কাউন্সেলর রুচি রাহ বলেন, সঙ্গীর স্বাতন্ত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ও মেনে নেওয়া উচিত। সঙ্গীর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক—দুই বিষয় নিয়েই কথা বলতে হবে, যাতে সমালোচনায় একটি ভারসাম্য থাকে। সঙ্গীদের মধ্যে একটি নিরাপদ স্থান তৈরি করা, যাতে দুজনেই নিজেদের অনুভূতি অকপটে একে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারেন। দুজন মানুষের নিজেদের কিছু একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় থাকে। সেই অবস্থানে অযাচিত অনুপ্রবেশ করতে না চাওয়া। একটি সম্পর্কে দুজনের সমান অবদান রাখা, নিজের সিদ্ধান্ত জানানোর অধিকার থাকাও খুব জরুরি। একে অন্যের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন করলে ও শ্রদ্ধাশীল হলে এ ধরনের কর্তৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিবর্তে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে