এই দেশের তরুণদের পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে কেন

বলিউড তারকা ও সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের একটা সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ ব্যাপক জনপ্রিয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন জনপ্রিয় মার্কিন টেলিভিশন উপস্থাপক, কমেডিয়ান, লেখক ও প্রযোজক ডেভিড লেটারম্যান। ২০০৫ সালের সেই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ এখনো রিল হয়ে ঘুরে বেড়ায় ইউটিউব ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সেখানে ডেভিড লেটারম্যান একটু ‘খোঁচা দিয়েই’ ঐশ্বরিয়াকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনি নাকি আপনার মা-বাবার সঙ্গে থাকেন? ভারতীয়রা নাকি বড় হয়ে যাওয়ার পরও মা-বাবার সঙ্গেই থাকে?’ চট করে জুতসই জবাব দিয়ে নিজের উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া। বলেছিলেন, ‘মা-বাবার সঙ্গে থাকাটা খারাপ নয়। কেননা, মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য আমাদের “ডিনারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট” নিতে হয় না, স্যার!’  

পরিবার থেকে আলাদা হয়ে । অনেকে প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকা শুরু করেন
ছবি: পেক্সেলস

পরিবার থেকে তরুণদের আলাদা হয়ে যাওয়াটা যুক্তরাষ্ট্রে কোনো নতুন ঘটনা নয়। ১৮ বছর পর অনেকেই পার্টি দিয়ে, কেক কেটে মা-বাবার সঙ্গে আলাদা হয়ে যাওয়ার অনুমতি পাওয়াকে উদ্‌যাপন করেন। নিজের স্বাধীনতার অবাধ উদ্‌যাপন করতে অনেকে নিজের বাসায় ব্যাচেলর জীবন যাপন শুরু করেন। অনেকে প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকা শুরু করেন। তবে বয়স ১৮ হলেই মার্কিন তরুণদের ভেতর মা-বাবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে মিলেনিয়াল (যাঁদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের ভেতর) ও জেন-জিরা (যাঁদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের ভেতর) অন্য প্রজন্মের তুলনায় এ ব্যাপারে বেশি এগিয়ে আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্ল পিলেমার একটি গবেষণা বলছে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ মার্কিনদের ২৭ শতাংশ তাঁদের পরিবার থেকে ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। তাঁরা তাঁদের বাবা বা মা কারও সঙ্গেই থাকেন না। মাত্র ৫২ শতাংশ তরুণ তাঁদের বাবা ও মায়ের সঙ্গে থাকেন। ২১ শতাংশ থাকেন মা অথবা বাবার সঙ্গে। এর ভেতর আবার মায়ের সঙ্গে থাকেন প্রায় ১৮ শতাংশ; আর বাবার সঙ্গে থাকেন মাত্র ৩ শতাংশ!

এর ভেতর যাঁরা অন্য দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হয়েছেন, সেসব পরিবারের তরুণদের মধ্যে আবার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম।
বাবা ও মায়ের থেকে যাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের একটা অংশ আবার মহামারিকালে একাকিত্ব ও তীব্র বিষণ্নতায় পড়ে পরিবারের কাছে ফিরেছেন।

মূলত নিজেদের ‘ভালোর’ জন্যই তরুণেরা পারিবারিক বন্ধন টিকিয়ে রাখতে চান না!
ছবি: পেক্সেলস

কেন পরিবার ছাড়ে মার্কিন তরুণরা?

শৈশবের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, মতের অমিল হওয়া, মূল্যবোধ ও জীবনদর্শনে পার্থক্য থাকা, স্বাধীনতা উপভোগ করতে চাওয়া, উচ্চশিক্ষা, পেশাজীবন ইত্যাদি পরিস্থিতি পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার প্রধান কারণ। টিকটকে ‘টক্সিক ফ্যামিলি’ হ্যাশট্যাগ ছাড়িয়ে গেছে ২ বিলিয়ন!

মূলত নিজেদের ‘ভালোর’ জন্যই তরুণেরা পারিবারিক বন্ধন টিকিয়ে রাখতে চান না! আবার এমন তরুণদের অনেক বাবা বা মা-ই নতুন করে দাম্পত্যজীবনে জড়িয়েছেন। সেখানে তাঁরা নিজেরাই চান না যে তাঁদের সন্তানেরা তাঁদের নতুন সংসারে থাকুক। কেননা, সন্তানকে নিয়ে অনেকের নতুন দাম্পত্যজীবনে ‘ঝামেলা’ তৈরি হয় বা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মনোবিজ্ঞানী ও গবেষক কুইন্সি গিডনও বিষয়টাকে নেতিবাচকভাবে দেখেন না। তিনি এমন অনেক তরুণকে মানসিক সেবা দিয়েছেন, যাঁরা তাঁদের পরিবারের মাধ্যমে মারাত্মকভাবে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত। মা-বাবার সংসারে অশান্তি, বিচ্ছেদ, বাবা বা মায়ের নতুন সঙ্গীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারা, পারিবারিক চাপ ইত্যাদি পরিস্থিতি থেকে অনেকে মরিয়া হয়ে বেরিয়ে পড়তে ১৮ বছর পর্যন্তও অপেক্ষা করেন না। কুইন্সি বলেন, ‘আরেকটু ভালো জীবনের আশায়, মানসিক স্থিরতার উদ্দেশ্যে কেউ যদি পরিবার থেকে বেরিয়ে পড়ে, সেটাকে খারাপভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বরং আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার জন্য তাঁকে অভিনন্দন।’  

এই মনোবিজ্ঞানী জানান, কেউ কেউ পারিবারিক বন্ধনেই সুখ খুঁজে পাচ্ছেন। আবার অনেকেই পরিবার থেকে দূরে থেকেই শান্তি-স্থিতি খুঁজছেন।


সূত্র: কসমোপলিটন