দাম্পত্য সম্পর্ক উন্নয়নে ঘনিষ্ঠতা কেন জরুরি

স্পর্শ বা শারীরিক ঘনিষ্ঠতা দাম্পত্যের বন্ধনকে দৃঢ় করতে সহায়তা করে। ছবিটি প্রতীকীছবি: সুমন ইউসুফ

দাম্পত্যে স্পর্শের নিবিড়তা একে অপরের প্রতি আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসা প্রকাশের অদ্বিতীয় মাধ্যম। এটি সম্পর্ককে দৃঢ় ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে। দুটি মানুষের মধ্যে তৈরি করে অনন্য সংযোগ সেতু।

আমেরিকার প্রখ্যাত আচরণবিজ্ঞানী ও সম্পর্কবিষয়ক কোচ ক্লারিসা সিলভা বলেন, ‘স্পর্শ, বিশেষ করে আদর, শরীর থেকে অক্সিটোসিন নিঃসরণ করতে সাহায্য করে। এটি একটি ভালো হরমোন, যা আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেয় ও প্রতিকূল চিন্তাভাবনা থেকে দূরে রাখে। এ হরমোন দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা মজবুত করে। দাম্পত্যের বন্ধনকে সুন্দর ও দৃঢ় করতে সহায়তা করে।’

স্পর্শ কিংবা শারীরিক সান্নিধ্যের রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। নিচে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—

পরস্পর আলিঙ্গনাবদ্ধ হলে অক্সিটোসিন নিঃসরিত হয়, যা মানসিক চাপ কমায়
ছবি: সুমন ইউসুফ

কমায় মানসিক চাপ

শারীরিক সান্নিধ্য রক্তচাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে। পরস্পর হাত ধরলে বা আলিঙ্গনাবদ্ধ হলে অক্সিটোসিন নিঃসরিত হয়। এ হরমোন মস্তিষ্কের চাপ কমাতে সাহায্য করে, উদ্বেগ হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে মন আপনা–আপনি প্রফুল্ল ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

প্রেমের বহিঃপ্রকাশ

শারীরিক ঘনিষ্ঠতা ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক রসায়ন ও আন্তরিকতার অভাব আছে এমন সম্পর্কগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিরস ও ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে সাবলীল শারীরিক স্পর্শ বিদ্যমান আছে, এমন সম্পর্কগুলো তুলনামূলকভাবে সফল ও সুখী হয়। তাই সম্পর্ক উন্নয়নে শারীরিক সান্নিধ্যের বিষয়টির ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি

ঘনিষ্ঠতা শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবেও আপনাকে সুস্থ ও সুন্দর রাখবে। এটা সরাসরি রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। যেসব মানুষ যৌনজীবনে সক্রিয়, তাঁদের দেহে প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা ক্ষতিকর ভাইরাস এবং জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অসুস্থতার হার হ্রাস পায়।

শারীরিক উপকারিতা

নিয়মিত শারীরিক অন্তরঙ্গতা পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটালে রাতে ভালো ঘুম হয়। কর্মোদ্দীপনা বৃদ্ধি পায় এবং মনে সারাক্ষণ উৎফুল্ল ভাব বজায় থাকে।

ঘনিষ্ঠতা ও আস্থা

যেকোনো ধরনের সম্পর্কে বিশ্বাস একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন দুজন মানুষ একে অপরকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তখন তাঁরা নির্ভার বোধ করেন। অনুভূতিগুলো একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নেন। দুজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ যখন ঘনিষ্ঠ হন, তখন তাঁরা আরও বেশি আত্মপ্রত্যয়ী ও বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।

দীর্ঘজীবী হওয়া

যাঁরা যৌনজীবন পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করেন, তাঁদের হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রিয়জনের সঙ্গে শারীরিক সান্নিধ্য বা ঘনিষ্ঠতার অর্থ কেবল যৌনতা নয়, এটি নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার একটি অনন্য উপায়।

পরিশেষে বলা যায়, স্পর্শ কিংবা আদর, দুটিই যেকোনো সম্পর্কের দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে অপরিহার্য। তাই সম্পর্ককে সুষম ও সাবলীল রাখতে শরীরী বিষয়ে মনোযোগী হোন, উপভোগ করুন সুখী ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন।

ডেইলি হান্টফিজিওলজি টুডে অবলম্বনে