বন্ধু কি আপনাকে ঈর্ষা করেন? যেভাবে বুঝবেন
বন্ধুর জন্য নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের বহু উদাহরণ আছে। তবে সব বন্ধুত্ব একই রকম নয়। বন্ধু নামের আড়ালে অনেক রকম মানুষই থাকেন। বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ আপনাকে ঈর্ষাও করতে পারেন। তবে বন্ধুত্বে ঈর্ষা থাকলে সেটি সব সময় একইভাবে প্রকাশিত না-ও হতে পারে।
মনে রাখতে হবে, ঈর্ষা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ঈর্ষার ব্যাপারটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে ‘বন্ধু’ আপনার ক্ষতি পর্যন্ত করতে পারেন। বন্ধু হিসেবে কারও ক্ষতি করা বেশ সহজ। কারণ, বন্ধুত্বে থাকে দৃঢ়বিশ্বাস। তাই বন্ধুত্বে ঈর্ষা থাকলে আগেভাগে সাবধান হওয়া ভালো। কিছু ক্ষেত্রে এর সমাধানও করা যেতে পারে। সাধারণ কিছু বিষয় লক্ষ করলে আপনি অনুভব করতে পারবেন, আপনার প্রিয় বন্ধু হয়তো আপনাকে ঈর্ষা করছেন। যদিও বন্ধুত্বের মায়ায় আমরা অনেক সময় বন্ধুর ঈর্ষাকে ঠিক ঈর্ষা বলে মানতে চাই না। এমনটাই বলছিলেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক।
আচরণে ঈর্ষার ছাপ
ঈর্ষার প্রশ্ন তখনই আসে, যখন আপনি সফলতা পান কিংবা সুখে থাকেন। আপনার ক্যারিয়ার বা ব্যক্তিগত জীবনের নানান দিক নিয়েই কারও ঈর্ষা হতে পারে। যে বিষয়টি নিয়ে আপনি ভালো আছেন, আপনার বন্ধু যদি সেই বিষয়টিকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন তিনি হয়তো আপনাকে ঈর্ষা করছেন। তাঁর কথার ধরন এবং আচরণ থেকেই আপনি বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন। আপনি যখন পরিশ্রমের ফল হিসেবে পদোন্নতি পান, আপনার বন্ধু তখন এই সফলতাকে ‘ভাগ্য’ বলে আখ্যা দিতে পারেন কিংবা ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার সুফল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন। আবার সাফল্যের উদ্যাপনে আপনি একজন ঈর্ষান্বিত বন্ধুকে না-ও পেতে পারেন। কিংবা আপনি যখন ব্যক্তিগত সম্পর্কে সুখী, তখন হয়তো অতীতের কোনো তিক্ততার কথা তিনি মনে করিয়ে দিলেন। আবার আপনি যখন ভালো আছেন, তখন তিনি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়েও দিতে পারেন। বুঝতেই পারছেন, নির্দিষ্ট একধরনের আচরণেই ঈর্ষা প্রকাশিত হয় না। বরং তাঁর আচরণ, কথা, কণ্ঠস্বর—সব মিলিয়েই আপনি পাবেন ঈর্ষার ছাপ।
সমাধান যেভাবে
বন্ধু আপনাকে ঈর্ষা করছেন বলে মনে হলেই যে আপনি বন্ধুত্বের ইতি টানবেন, তা কিন্তু নয়। খোলামেলাভাবে তাঁর সঙ্গে আলাপ করুন। তবে সরাসরি ঈর্ষার প্রসঙ্গ তুলবেন না। ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণেও তিনি নেতিবাচক আচরণ করে থাকতে পারেন, যেটিকে হয়তো আপনি ঈর্ষা ভেবে ভুল করছেন। তাই তাঁর আচরণের অসংগতিগুলো নিয়ে কথা বলুন। এর কারণ জানতে চান। আপনার সাফল্যের যে তিনিও একজন অংশীদার, সেটি তাঁকে বুঝিয়ে দিন। তিনি কোনো ব্যক্তিগত সমস্যায় থাকলে তা সমাধানে সাহায্য করুন অবশ্যই।
সাবধানের মার নেই
সব চেষ্টার পরও যদি বন্ধুর আচরণের সেই খারাপ দিকগুলোর কিছুটা রয়েই যায়, তাহলে একটি সীমারেখার ভেতর নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া ভালো। এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আর এই বন্ধুটির সঙ্গে ভাগ করে নেবেন না, যেটির কারণে আপনার কিংবা আপনার পরিবারের ক্ষতি হতে পারে। এটা ঠিক যে বন্ধুত্ব নষ্ট হলে আপনার কষ্ট হবে। তবে জীবনে নিরাপদ থাকাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভালো থাকার জন্য তাই নিজের পরিবার এবং ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিন। নতুন বন্ধুত্বও গড়ে তুলতে পারেন, তবে অবশ্যই বুঝেশুনে।