নিজেকে শান্ত করার আট উপায়

আপনি যতই শান্তিপ্রিয় হোন না কেন, বিরূপ পরিস্থিতিতে হুট করে মেজাজ বিগড়ে যেতেই পারে। রেগে যাওয়াটাই আসলে সহজ। অমন পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখাটা একটা বড় রকমের ‘চ্যালেঞ্জ’। কথায় বলে, ‘রেগে গেলেন, তো হেরে গেলেন’। কিন্তু রেগে যাওয়ার সময়টায় এ কথা কজনই–বা মনে রাখতে পারেন, বলুন? ঝগড়া-বিবাদ বা উত্তেজনার মুহূর্তে নিজেকে শান্ত রাখতে চাইলে আপনাকে বেশ কৌশলী হতে হবে। জেনে নেওয়া যাক নিজেকে শান্ত রাখার কিছু কৌশল।

লম্বা শ্বাস নিন, গভীরভাবে শ্বাস ছাড়ুন

উত্তেজনার মুহূর্তে আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। আপনি বরং চেষ্টা করুন ধীরে ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাস চালাতে। লম্বা করে শ্বাস নিন। গভীরভাবে শ্বাস ছাড়ুন। উত্তেজনাকে আপনিই নিয়ন্ত্রণ করুন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা নিতান্ত সামান্য বিষয় নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ি
ছবি: প্রথম আলো

ভাবনার গতিপথ বদলে নিন

অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা নিতান্ত সামান্য বিষয় নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ি। জীবনে যার গুরুত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। ভেবে দেখুন, এই যে অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে, আগামীকাল বা আগামী সপ্তাহে আপনার জীবনে এর কোনো গুরুত্ব থাকবে কি না। জীবনে এর প্রভাব কতটা। আরও ভেবে দেখুন, আপনি উত্তেজিত অবস্থায় যা বলছেন বা যা করছেন, তা অশোভন হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না, ভবিষ্যতে এ ঘটনার স্মৃতি আপনার লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াবে কি না। যিনি এ মুহূর্তে আপনার ‘প্রতিপক্ষ’, তাঁর বিষয়েও চিন্তা করুন। আপনি কি এই মানুষটাকে নিজের শান্তিভঙ্গের কারণ হয়ে উঠতে দিতে চান? এসব ভাবলে আপনি শান্ত হতে পারবেন সহজেই।

ভেবে দেখুন, বিষোদ্‌গার সত্য নয়

কখনো কখনো কেউ কেউ ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয়ে সংবেদনশীল মন্তব্য করে বসেন। এসব ক্ষেত্রে অনেকেই চট করে খেপে যান। কিন্তু এ রকম পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রাখাই কর্তব্য। কেউ বিরূপ মন্তব্য করলেই কিন্তু তা সত্যি হয়ে যাচ্ছে না। আপনি ভদ্রভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলুন। এমন অসত্য কথার মাধ্যমে বিষোদ্‌গার করতে নিষেধ করুন। এ ছাড়া আপনার এটাও বিবেচনা করতে হবে, যিনি এসব কথা বলছেন, তিনি আপনার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ না হলে তাঁর কথাকে অত গুরুত্ব দেওয়ারও কিছু নেই। তবে কাছের মানুষ অমন খারাপ কথা বললে শান্তভাবে তাঁকে বুঝিয়ে বলুন, তাঁর বক্তব্যের কোথায় ভুল ছিল।

রেগে না গিয়ে যুক্তি দিয়ে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে
ছবি: প্রথম আলো

নিজেই নিজেকে সাহায্য করুন

আপনি যদি উত্তেজিত বোধ করে থাকেন, নিজের কাছে তা স্বীকার করুন। নিজেকে শান্তরূপে কল্পনা করুন। এভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাটা সহজ হয়ে উঠবে। হালকা খাবার খেতে পারেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় বিরক্ত বোধ করাটা অস্বাভাবিক না। চুইংগামও চিবোতে পারেন।

অন্যদিকে মন দিন

মন শান্ত করতে পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান
ছবি: প্রথম আলো

তর্কের বিষয় ছাপিয়ে মনকে অন্য কিছুর দিকে নিয়ে যান। ঝগড়ার জায়গা থেকে চলে যেতে পারেন। অল্প সময়ের জন্য হলেও একেবারে ঘরের বাইরে খোলা হাওয়াতে যেতে পারেন। হাঁটাহাঁটি বা শারীরিক কসরত করতে পারেন। এ ছাড়া পছন্দের অডিও ক্লিপ শুনতে পারেন। পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান। মনে রাখবেন, চিৎকার-চেঁচামেচি, ঝগড়ায় কিন্তু প্রাণীরাও ভয় পায়। চাইলে মজার কোনো ভিডিও দেখতে পারেন। রুবিকস কিউব বা পাজলের মতো খেলাও কাজে দেয়।

দেহ শিথিল রাখুন

উত্তেজনায় আমাদের দেহের পেশিগুলো দৃঢ় হয়ে পড়ে। আপনি বরং কাঁধ নামিয়ে ফেলুন। তবে ঋজু অবস্থানে বসুন। বাড়িতে থাকলে মেঝেতে শুয়ে পড়তে পারেন। পায়ের ওপর পা তুলে রাখবেন না। সোজাভাবে শোবেন। হাত থাকবে দেহের পাশে এলানো অবস্থায়। শোয়া অবস্থায় দেহের পেশিগুলোকে শিথিল করতে থাকুন। পায়ের দিক থেকে শুরু করে একে একে কপালের পেশি পর্যন্ত সব পেশি শিথিল করে ফেলুন।

লিখে ফেলুন মন যা চায়

মেজাজ খারাপ হলে একটা কাগজে লিখে ফেলুন মন যা চায়
ছবি: পেক্সেলস

কথা বলতে গেলে হয়তো আপনি উত্তেজনাকর কিছু একটা বলে ফেলবেন বলেই মনে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে একটা কাগজে লিখে ফেলুন মন যা চায়। সম্পূর্ণ বাক্য না হলেও ক্ষতি নেই। খারাপ লাগার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে এভাবেই।

কাছের মানুষের সাহায্য নিন

যা নিয়ে খারাপ লাগছে, তা ভাগ করে নিতে পারেন কাছের মানুষের সঙ্গে। তবে দাম্পত্য কলহের কথা অন্যদের বলবেন না।

সূত্র: হেলথ লাইন