স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে কেন ৪৫০ কিলোমিটার হেঁটেছিলেন তিনি
ইতালির এক ব্যক্তি স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে ঘর ছাড়েন। মাথা ঠান্ডা করার জন্য হাঁটতে থাকেন তো হাঁটতেই থাকেন। অবশেষে থামেন ৪৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার পর। ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত তাঁকে খুঁজে পায় পুলিশ।
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আর নেটিজেনরা ওই ব্যক্তিকে (তাঁর নাম অপ্রকাশিত রাখা হয়েছে) ডাকতে শুরু করে ‘ইতালির ফরেস্ট গাম্প’। ২০২০ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে রাগ করে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। বাসা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে তাঁকে পাওয়া যায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। করোনা মহামারিকালের সেই ঘটনা এখন আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।
যা ঘটেছিল
করোনা মহামারি চলছে তখন। সবাই গৃহবন্দী। নিতান্তই জরুরি কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। ওই ব্যক্তির বাসা ছিল ইতালির উত্তর কোমোতে। সেখান থেকে স্ত্রীর সঙ্গে প্রচণ্ড ঝগড়ার পর মাথা ঠান্ডা করতে ঘর ছাড়েন তিনি। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘর ছাড়ার এক সপ্তাহ পর দিবাগত রাত দুইটার দিকে ইতালির আদ্রিয়াতিকো সাগরের উপকূলবর্তী ফানো শহরের রাস্তায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে পুলিশ তাঁকে আটক করে। কারফিউয়ের নিয়ম ভাঙার অভিযোগে জেরা করতেই বেরিয়ে পড়ে আসল ঘটনা।
তারপর কী হলো
ওই ব্যক্তিকে কারফিউ ভাঙার অভিযোগে ৪০০ ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল। তিনি পুলিশকে বলেন, ‘আমি এত দূর এসেছি খালি পায়ে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় জুতা নেওয়ার কথা মাথায় ছিল না। চলতি পথে অনেকেই আমাকে খাবার, পানি দিয়েছেন। একদম ঠিক আছি। কেবল একটু ক্লান্ত।’
জানা যায়, স্ত্রী তাঁর খোঁজ না পেয়ে স্থানীয় থানায় ‘মিসিং রিপোর্ট’ করেছিলেন। এই ঘটনা প্রথম ইতালির বোলোনিয়া শহরের একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারপর অনলাইনে হয় ভাইরাল। সেই সূত্রে একে একে প্রকাশিত হয় বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন পত্রিকায়। গড়ে প্রতিদিন ওই ব্যক্তি ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার হেঁটেছিলেন।
লোকে কী বলল
একজন লিখেছেন, ‘জরিমানা কেন করেছে, তাঁকে তো পুরস্কার দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে এক জোড়া জুতা।’ আরেকজন স্ত্রীর সঙ্গে কোনো সহিংসতার ঘটনা এড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ায় তাঁর প্রশংসা করেছেন।
আরেকজন লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, কয়েক কিলোমিটার হাঁটার পরই তাঁর মাথা ঠান্ডা হয়েছে। তবে বাধাহীনভাবে, সব দায়িত্ব-কর্তব্য পেছনে ফেলে প্রকৃতির সংস্পর্শে নিরুদ্দেশ যাত্রা বা ঘুরে বেড়ানোর যে সুখ ও স্বাধীনতা, তা তাঁকে পেয়ে বসেছিল। আর উনি সেটা দারুণ উপভোগ করছিলেন।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘আমার শুধু জানতে ইচ্ছা করে, স্ত্রীর সঙ্গে গাড়িতে করে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় কী কথা হয়েছিল তাঁদের? নাকি দুজনেই চুপচাপ ছিলেন? আমার মনে হয়, উনি এখনো মাঝেমধ্যে এমন নিরুদ্দেশ হয়ে যান। কয়েক শ কিলোমিটার পর আবার নিজে নিজেই ফিরে আসেন। স্ত্রী-ও আর “মিসিং রিপোর্ট” করেন না।’
সূত্র: বিবিসি