সুখী হওয়ার ৪ কৌশল

আনন্দময় সুখী জীবনের সংজ্ঞা জানতে চাইলে অনেকেই বলবেন, এমন জীবন যেখানে দুঃখ নেই, হতাশা নেই, শুধু সুখ আর সুখ। কিন্তু দুঃখ ছাড়া জীবন তো অবাস্তব কল্পনা! কর্মক্ষেত্রের চাপ, সামাজিক ও পারিবারিক জীবন, ভবিষ্যৎ চিন্তা, সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষের পক্ষে কি আনন্দময় সুখী জীবন পাওয়া সম্ভব?

পরিবারের মজবুত সুসম্পর্ক সুখী জীবনের জন্য অন্যতম উপাদান। মডেল: সাইদা আহমেদ, আদিব, তারেক হাসান ও দৃণা।ছবি: সুমন ইউসুফ

টেডএক্স টকস-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে আনন্দময় সুখী জীবনের অর্থ বোঝাতে চেষ্টা করেছেন বক্তা, লেখক, মনোবিজ্ঞানী, সুস্থতা ও ফিটনেস প্রতিষ্ঠান এরাইভ অ্যাট হ্যাপির প্রতিষ্ঠাতা ও সনদপ্রাপ্ত চিফ হ্যাপিনেস অফিসার টিয়া গ্রাহাম। বলেন, সুখী জীবনের মানে সব সময় আনন্দে থাকা নয়, বরং জীবনে নেতিবাচকতার চেয়ে ইতিবাচকতা বেশি থাকা।

সমাজে আমরা সুখ ও আনন্দের নানা চিত্র দেখতে পাই। কিন্তু এসবের কোনোটিরই আসলে অর্থ নেই যদি না আপনি নিজের ভেতরে তা অনুভব করেন। সুখ নির্ভর করে নিজের ওপর, এখানে অন্য কারও কোনো হাত নেই, বলেন টিয়া গ্রাহাম। ১৫ মিনিটের হাস্যরসাত্মক আলোচনায় সুখী জীবন নিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতে চেষ্টা করেছেন তিনি; শিখিয়েছেন জীবনকে আরও সহজ ও আনন্দময় করার চার বিজ্ঞানসম্মত কৌশল।

সুখের প্রথম সূচক হচ্ছে সম্পর্ক

কাছের মানুষের উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ভেতরের গ্লানি কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয়। এটি একেকজনের জন্য একেক রকম হতে পারে। পরিবারকে সময় দিতে পারেন বা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। কোনোটিই সম্ভব না হলে দিনের যেকোনো সময় ফোন করে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তবে পরিবার ও বন্ধুদের সামনাসামনি থাকলে অবশ্যই ফোন যথাসম্ভব দূরে রাখতে হবে, হেসে বলেন টিয়া গ্রাহাম। প্রাপ্তবয়স্কদের বিকাশের ওপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা এক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন সম্পর্কের ধরন সরাসরি আমাদের স্বাস্থ্য ও সুখের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই সুখী হতে হলে সম্পর্কগুলোকে প্রতিদিনই অল্প হলেও সময় দিতে হবে।

কাছের মানুষের উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ভেতরের গ্লানি কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয়
ছবি: প্রথম আলো

ভালো ঘুম নিশ্চিত করে মানসিক শান্তি

সুখের সঙ্গে ভালো ঘুমের সম্পর্ক সমানুপাতিক, ইকোনমিক পার্সপেক্টিভস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা এটি প্রমাণ করেছে। পর্যাপ্ত ভালো ঘুম মস্তিষ্কের কাজ সহজ করে, অবসাদ দূর করে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে, জীবনকে করে সহজ। ‘ফোনে, টিভিতে একের পর এক ভিডিও দেখতে দেখতে রাত না জেগে একদম ঠিক সময়ে ঘুমানো উচিত; পারলে ফোন রান্নাঘরে রেখে আসবেন’, বলেন টিয়া গ্রাহাম।

সপ্তাহে কমপক্ষে ৪ দিন ব্যায়াম

শরীরচর্চা শুধু শরীরের সুস্থতাই নিশ্চিত করে না, এটি মানসিক চাপ ও হতাশাও কমায়। টিয়া বলেন, সৌন্দর্যের জন্য নয়, সুখী হওয়ার জন্য ব্যায়াম করতে হবে।

শরীরচর্চা বা যোগব‍্যায়াম শুধু শরীরের সুস্থতাই নিশ্চিত করে না, মানসিক চাপ ও হতাশাও কমায়
মডেল: অহনা। ছবি: প্রথম আলো

প্রাধান্য পাক পছন্দের কাজ

সবার জীবনেই দুঃখ-কষ্ট আছে। তবে জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য থাকলে দুঃখ-কষ্ট ছাপিয়ে জীবনে সুখের সন্ধান পাওয়া সম্ভব। জীবনে আনন্দের অন্যতম উৎস হচ্ছে অভিজ্ঞতা। গ্যালাপ-এর জরিপ বলছে, পৃথিবীর ৭৯ শতাংশ মানুষ এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত, যা করতে তাঁরা নিজেরাও পছন্দও করেন না। জীবিকার তাড়নায় বাধ্য হয়ে তাঁরা এমন অভিজ্ঞতা অর্জনে ব্যস্ত, যা তাঁদের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। টিয়া গ্রাহাম বলেন, ‘যে কাজটি করতে আপনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, সেটি করলে সময় ভালো কাটে এবং মনও থাকে উৎফুল্ল। এটি সম্ভব না হলে ইতিবাচক ও আশাবাদী হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে!’ অক্সফোর্ড-এমআইটির সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, যারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্ট, তারা অন্যদের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি উৎফুল্ল থাকে। সুখী ব্যক্তিরা কর্মক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করে এবং স্বাস্থ্যের দিক দিয়েও ভালো থাকে। তারা দীর্ঘজীবী হয়।

সুখী হতে হলে এগুলো ছাড়াও আরও অনেক কিছু করতে পারেন। যেমন প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো, মানুষকে সাহায্য করা, ধ্যান করা, অতিরিক্ত চিন্তা এলে লিখে রাখা ইত্যাদি। সবকিছুই নির্ভর করবে আপনার ওপর। যা–ই করুন না কেন, ভালোবেসে করুন। আলোচনার শেষ পর্যায়ে টিয়া বলেন, ‘কথাটা কিছুটা স্বার্থপর শোনালেও সুখে থাকতে হলে মোটকথা হচ্ছে নিজের খেয়াল রাখতে হবে। নিজে ভালো থাকলেই আপনি আপনার সম্পর্কগুলোকে ভালো রাখতে পারবেন।’