টেক্সট মেসেজ দেওয়ার সময় যে ১২টি কাজ কখনোই করা উচিত নয়
স্মার্টফোনের যুগে টেক্সট মেসেজ বা খুদে বার্তা আমাদের দৈনন্দিন যোগাযোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। চটজলদি খবর আদান–প্রদান থেকে শুরু করে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা—সবই চলে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার কিংবা খুদে বার্তায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের নানা ইমোজি। ফলে যোগাযোগ হয়ে উঠেছে আরও সহজ ও প্রাণবন্ত। কিন্তু সব কথাই কি মেসেজে বলা যায়? কিংবা বলা উচিত? কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা সংবেদনশীল প্রসঙ্গ খুদে বার্তায় বলা হলে, ছোট্ট পর্দায়ই হারিয়ে যেতে পারে বক্তব্যের মৌলিক অর্থ। তৈরি হতে পারে ভুল–বোঝাবুঝি। এমনকি স্বাভাবিক সম্পর্কও খারাপ হয়ে যেতে পারে। আবার ভুল সময়ে পাঠানো একটি ভুল বার্তা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই করে বেশি। জেনে নেওয়া যাক এমন ১২টি কাজ, যা টেক্সট মেসেজে কখনোই করা উচিত নয়।
১. বিচ্ছেদ-বার্তা টেক্সটে নয়
সম্পর্ক স্বল্পকালীন কিংবা দীর্ঘদিনের—যা-ই হোক না কেন, নানা কারণেই তাতে বিচ্ছেদের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এমতাবস্থায় ব্রেকআপ বা সম্পর্কচ্ছেদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই টেক্সট মেসেজে জানানো উচিত নয়। অন্তত ফোন করে কিংবা সম্ভব হলে সামনাসামনি দেখা করে সম্পর্ক শেষ করার শ্রদ্ধাটুকু দেখান। ছোট্ট বার্তায় সম্পর্ক শেষ করা কেবল অভদ্রতা নয়, এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অসম্মানজনক। অনেক সময় ভুল–বোঝাবুঝির কারণেও ব্রেকআপ হতে পারে। হয়তো মুখোমুখি আলোচনায় বেঁচে যেতে পারে আপনার সম্পর্ক।
২. ডেট বাতিলে খুদে বার্তা নয়
প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত সময় বা দিনক্ষণ হুট করে বাতিল করার প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ‘কাজ পড়ে গেছে, পরে দেখা হবে’-জাতীয় কিছু লিখে বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া মোটেই শিষ্টাচারসম্মত নয়। এর চেয়ে বরং ফোন করে বিশেষ সমস্যার কথা জানিয়ে বলতে পারেন, আজ দেখা করতে পারছি না। আগামী ‘অমুক দিন বা সময়ে’ কি দেখা হতে পারে? এতে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা যেমন বজায় থাকবে, তেমনি প্রিয় মানুষটিও নিজেকে গুরুত্বহীন ভাববেন না।
৩. খারাপ খবর টেক্সট মেসেজে জানাবেন না
চাকরি হারানো কিংবা প্রিয়জন হারানোর মতো দুঃসংবাদ যে কারও পক্ষেই হজম করা শক্ত। কাউকে যদি এমন সংবাদ জানাতে হয়, যা তাঁর জীবনকে এলোমেলো করে দিতে পারে, তাহলে তাঁকে আগে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা জরুরি। টেক্সট মেসেজে সেই গভীরতা বা গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এর চেয়ে সরাসরি ফোন করুন। কিংবা সম্ভব হলে দেখা করে অন্যান্য কথার ফাঁকে তাঁকে সংবাদটি দিন।
৪. সুসংবাদও টেক্সটে দেবেন না
একইভাবে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো দুর্দান্ত কোনো সুসংবাদও টেক্সট মেসেজে জানানো উচিত নয়। পরীক্ষার ভালো ফল কিংবা এ রকম ছোটখাটো কোনো সাফল্যের খবর টেক্সট মেসেজে জানানো যেতে পারে। কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব, সন্তান ধারণের খবর বা স্বপ্নের চাকরি বা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির মতো বড় খবর অবশ্যই ফোন করে, সম্ভব হলে সামনাসামনি জানানো উচিত। যদিও আপনার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষকে ফোন করতে পারবেন না, কিন্তু যাঁরা আপনার কাছের মানুষ, তাঁদের কাছে টেক্সট মেসেজের চেয়ে ব্যক্তিগতভাবে সংবাদ পৌঁছানোই শ্রেয়।
৫. ব্যক্তিগত তথ্যে সতর্কতা
ব্যাংকের তথ্য কিংবা ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবির মতো সংবেদনশীল তথ্য মেসেজে শেয়ার করা বিপজ্জনক। এর মানে এই নয় যে অপর পাশের মানুষটিকে আপনি অবিশ্বাস করছেন। কিন্তু হ্যাকারদের ক্ষেত্রে তো এসব বিশ্বাস-অবিশ্বাস খাটে না। ফলে ব্যক্তিগত মেসেজ বা ছবি পাঠানোর আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ এ তথ্য দেখলে কী পরিণতি হতে পারে। যদি একটুও নেতিবাচক কিছু আপনার মনে আসে, তবে সেই তথ্য পাঠানো থেকে বিরত থাকুন।
৬. গুরুতর উদ্বেগ বা অভিযোগ সরাসরি জানান
সঙ্গীর মদ্যপান, সন্তানের অবাধ্যতা, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর কাজে অন্যমনস্কতা প্রভৃতি গুরুতর অভিযোগ বা উদ্বেগের বিষয়ে টেক্সট মেসেজে তাঁকে জানাবেন না বা বকাঝকা করবেন না। বরং সরাসরি কথা বলুন।
৭. আবেগতাড়িত হয়ে দুঃখ বা ক্ষোভ উগরে দেওয়া
বন্ধুরা দলবেঁধে কোথাও বেড়াতে গেছে, আপনাকে জানায়নি পর্যন্ত। প্রাক্তনের নতুন প্রেম হয়েছে, ফেসবুকে চলে এল নতুন সেই সঙ্গীর ছবি। এমন অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে আপনার ভেতর তীব্র রাগ, হতাশা বা দুঃখের উদ্রেক হতে পারে। এমন হলে কোনোভাবেই হুট করে মেসেজ বক্সে কিছু লিখতে যাবেন না। বরং মাথা ঠান্ডা করে ফোনটি হাত থেকে নামিয়ে রাখুন। সত্যি সত্যিই খুব দুঃখ পেলে, বিচলিত বোধ করলে কিছুক্ষণ বরং বাইরে হেঁটে আসুন। কিংবা দুর্দান্ত কোনো সিনেমা দেখতে পারেন। শুনতে পারেন প্রিয় কোনো গান।
৮. গুজব ছড়াবেন না
আর যা–ই হোক, টেক্সট মেসেজে গুজব, ভুল তথ্য, অপতথ্য এসব লিখবেন না বা শেয়ার করবেন না। বুড়ো আঙুলের আলতো চাপে হয়তো এমন কিছু লিখতেই পারেন; তবে মনে রাখবেন, একবার সেন্ড বাটন চেপে দেওয়া মানেই কিন্তু তা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সময়-বিশেষে আপনার প্রতিটি শব্দই স্ক্রিনশট হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে আপনারই বিরুদ্ধে।
৯. কর্মক্ষেত্র-সংক্রান্ত অভিযোগ
হয়তো কোনো সহকর্মীর সঙ্গে চ্যাটিং চলছে। বস কিংবা অন্য কোনো সহকর্মীর প্রসঙ্গ এলে সচেতনভাবে আঙুল চালান। বসকে নিয়ে হয়তো আপনার সেই সহকর্মীর মনোভাবও অভিন্ন হতে পারে। মনে রাখবেন, কর্মক্ষেত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিষয়ে যেকোনো আলটপকা নেতিবাচক মন্তব্য চাকরি চলে যাওয়ার মতো ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
১০. অবিরাম ঝগড়া
কোনোভাবেই টেক্সট মেসেজে ঝগড়া চালাবেন না। আচমকা এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও, দ্রুত সামলে নিন। সন্তর্পণে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। যাঁর সঙ্গে কথা চালাচালি হচ্ছে, তাঁকে বলুন যে দেখা হলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। বিশেষত প্রিয় মানুষের সঙ্গে টেক্সটে ঝগড়া করা অধিকতর খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তার চেয়ে সামনাসামনি প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা করলে অনেক জটিলতাই সহজে কেটে যায়।
১১. একতরফা দীর্ঘ আলাপ
কারও সঙ্গে হয়তো চ্যাটিং চলছে। প্রথম দিকে আপনার কথার জবাবও হয়তো তিনি দিয়েছেন। তারপর উত্তর দিচ্ছেন না। আপনি অধৈর্য হয়ে একের পর এক টেক্সট মেসেজ পাঠাতেই থাকলেন। উত্তর না দেওয়ার জন্য তাঁকে দোষারোপ করতে লাগলেন। অথচ এমন তো হতেই পারে যে তিনি কোনো বিশেষ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁর ইন্টারনেটও বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারে।
১২. ক্ষমা চাওয়া
কাউকে হয়তো কষ্ট দিয়েছেন কিংবা কোনো ভুল করে ফেলেছেন। বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়াই সঠিক কাজ। তবে তার জন্য টেক্সট মেসেজে কোনোক্রমেই ভালো কোনো মাধ্যম নয়। কেবল ‘দুঃখিত’, ‘ক্ষমা করুন’—এ ধরনের ছোট্ট বার্তা আপনার আন্তরিকতার সত্যিকার অবস্থাকে ফুটিয়ে তুলতে পারে না। এতে বরং ব্যাপারটার প্রতি আপনার অবহেলা বা গুরুত্বহীনতাই প্রকাশ পায়। তার চেয়ে দেখা করে সামনাসামনি কথা বলুন। দুঃখ প্রকাশ করুন বা ক্ষমা চান।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট