আমরা একসঙ্গে কাজ করি

ছবি: পেকজেলসডটকম

জীবনের অর্ধেকটা সময় আমরা ব্যয় করি যেখানে, সেই স্থান হলো কর্মক্ষেত্র। পরিবার-পরিজনের সঙ্গেও অতটা সময় আমরা একসঙ্গে থাকি না, যতটা থাকি সহকর্মীদের সঙ্গে। সম্পর্কের সব রসায়ন এখানেও কম যায় না। কারণ, সব ধরনের সম্পর্ক আপনাকে এখানেই রক্ষা করতে হয়। চলুন তবে এর ব্যবচ্ছেদ হয়ে যাক আজ।
সহকর্মী তো তাঁরাই, যাঁদের মুখ দর্শন করে অথবা না করেও আমাদের একই প্রতিষ্ঠানে দিনাতিপাত করতে হয়। তাঁরা ঠিক থাকলে আপনি তরতর করে ওপরে উঠে যাবেন, আর উল্টোটি হলে তো লঙ্কাকাণ্ড বেধে যাবে। আর এই কুরুক্ষেত্র শান্ত রাখা সবার জন্যই উত্তম। সহকর্মীদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক আপনার জীবনকে সুস্বাস্থ্যময় রাখে। অবাক করা বিষয়!

কর্মক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটি আমার সহকর্মী। সুখ-দুঃখ, বিপদ-আপদে সারাটা দিন এমনকি সর্বদা তাঁরাই সবচেয়ে কাছের সঙ্গী। সেই কাছের মানুষজনের সঙ্গে সুন্দর করে কথা না বললে, একসঙ্গে চা না খেলে, গল্প না করলে কাজের পরিবেশটা ঠিক জমে ওঠে না। সম্পর্কের শুরুটা অনেক অসমতল। সবারই পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয় থাকে। অনেকটা সময় এখানেই লেগে যায় সম্পর্ক তৈরিতে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

কারণ, এ ক্ষেত্রে প্রচুর ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। উভয় পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। একটা জিনিস খুবই পরিষ্কার যে আমরা সবাই একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরির উদ্দেশ্যে এসেছি এবং সবার উদ্দেশ্যই টাকার বিনিময়ে নিজের মেধা–শ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে কাজ করা। তবে এই শ্রমবাজারে কেউ চিরস্থায়ীভাবে এক জায়গায় থাকে না। সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। দিনের শুরুতে সবার সঙ্গে যতটুকু সম্ভব কুশল বিনিময় করে কাজ শুরু করলে সম্পর্ক সুন্দর হয়।

কাজের পাশাপাশি একসঙ্গে অনেক কিছুই করা যায়। যেমন চা খাওয়া, মধ্যাহ্নভোজ, হালকা নাশতা, বিশেষ দিবস বা কোনো অর্জনে শুভেচ্ছা জানানো, পরিবারের খোঁজ নেওয়া, সাহায্য আহ্বান করা ইত্যাদি। অযাচিত কথা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অহেতুক আলোচনা না করাই উত্তম। প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব, বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি। যদি মনে হয়ে থাকে আপনি এমন কিছু আপনার সহকর্মীদের থেকে পাচ্ছেন না, সে ক্ষেত্রে নিজে এগিয়ে যান। অনাকাঙ্ক্ষিত আবেগ পরিহার করুন।

দিন শেষে হালকা মেডিটেশন আপনার সারা দিনের ভুলগুলোকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। ফলে আপনি নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করতে পারেন। সব সময় নিজে ঠিক এই ধারণা থেকে সরে আসুন এবং নতুন কিছু শেখায় আগ্রহী হোন। অপরের প্রশংসা করুন। কর্মক্ষেত্রে বহুলালোচিত বিষয় হলো কর্মক্ষেত্রে রাজনীতি, যা মহাবিপজ্জনক। এর থেকে যতটুকু সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখুন। সম্পর্ক ভালো থাকলে কর্মী হিসেবে আপনারও সুনাম আর এর উল্টোটি হলে ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছাটাই উধাও হয়ে যায়।

ছবি: পেকজেলসডটকম

যাঁদের সঙ্গে নিত্য দেখা হয় না, বেশির ভাগ সময় কথা হয় তাঁদের সঙ্গেও ভালো ব্যবহার করুন ও সহযোগিতার মনোভাব রাখুন। অনেক সময় নতুন যোগদান করা সহকর্মীদের সঙ্গে আমরা ভিন্ন মনোভাব পোষণ করি। এতে আপনার সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব তৈরি হয় শুরুতেই। এই মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে।

মনে রাখতে হবে, আপনার প্রতিষ্ঠানে সহকর্মীদের সম্পর্ক যত উন্নত, আপনার প্রতিষ্ঠানের সুনাম তত বেশি। আর এই সুনামের সমান অংশীদার আপনি নিজেও। শুধু তা–ই নয়, সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আপনার অনেক কাজকে সহজ করে দেবে, আপনার অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এক তুড়িতেই। মনে রাখবেন, দিন শেষে সবাই উপার্জনের জন্যই কর্মক্ষেত্রে হাজির হই। আপনাদের সম্পর্কের জটিলতা প্রতিষ্ঠানে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।

ছবি: পেকজেলসডটকম

আপনি যাঁদের সহকর্মী মনে করেন, তাঁরাও আপনাকে সহকর্মীই মনে করেন। সুতরাং দুই পক্ষের মধ্যে পার্থক্য নেই। সহযোগিতার মনোভাব থাকলে সম্পর্কোন্নয়নে কোনো বাধা নেই। একজন ভালো সহকর্মী পরিবারের সদস্যের মতো, যেখানে প্রতিষ্ঠান একটি পরিবার। সবাই মিলে ভালো থাকলে পরিবার ভালো থাকবে। একটা সুন্দর প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে কে না চায়?