বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে স্ত্রী তালাকনামা পাঠিয়েছে, বিদেশে বসে আমি কী করব?

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

মিতি সানজানা

প্রশ্ন: একটি মেয়ের সঙ্গে আমার ছয় বছরের সম্পর্ক ছিল। প্রবাসে আসার আগে কাজির মাধ্যমে আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে তাঁকে বিয়ে করে আসি। এই কথা আমাদের দুজনের বন্ধুরা ছাড়া দুই পরিবারের কেউ জানতেন না। আমাদের সবকিছু ঠিক চলছিল। প্রায় দুই বছর চার মাস পর তাকে আমার ঘরে তোলা নিয়ে কথা চলছিল। কথার মধ্যে দুজনের ঝগড়া হয়। এরপর কথা বন্ধ থাকে কয়েক দিন। তার পর থেকে তাকে ফোন দিলে সে কথা বলতে চাইত না। কয়েক দিন পর হঠাৎ সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠায়। এখন আমি জানতে পেরেছি, আমার এক সাবেক বন্ধুর সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়েছে। আমি কী তার (আমার স্ত্রী) বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি?

রিপন, ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি যাঁর সঙ্গে সংসার করতে চাইছেন, তিনি যদি আপনার সঙ্গে থাকতে না চান, তাহলে জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা আপনাদের দুজনের জন্যই ক্ষতিকর। আপনি জানিয়েছেন, আপনার স্ত্রী আপনাকে ইতিমধ্যে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দিয়ে থাকেন, তাহলে তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে (স্ত্রী কর্তৃক তালাক) স্ত্রী স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারেন। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, কাজির মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনকে পাঠাতে হবে।

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১-এর ধারা ৭ অনুযায়ী, স্ত্রী তাঁর স্বামীকে তালাক দিতে চাইলে তালাক উচ্চারণ করার পর যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে ও স্বামীকেও এর কপি পাঠাতে হবে। আইনের বিধান অনুযায়ী, তালাক প্রত্যাহার না করা হলে চেয়ারম্যানের নিকট প্রেরিত নোটিশের তারিখ হতে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত তালাক কার্যকর হবে। নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান দুই পক্ষের মধ্যে পুনর্মিলনের লক্ষ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করবেন। এই সালিসি পরিষদ পুনর্মিলন ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে ৯০ দিন বা গর্ভকাল—এই দুইয়ের মধ্যে যেটা পরে হবে, তা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।

আপনি যদি মনে করেন, আপনাদের মধ্যে যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা সম্ভব, তাহলে আপনার স্ত্রী ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করতে পারেন। তা ছাড়া ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭(৬) ধারা অনুসারে, তালাকের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়া স্বামী-স্ত্রী পুনরায় একত্রে ঘরসংসার করতে চাইলে নতুন করে আইন ও ধর্মীয় রীতি মেনে বিয়ে করতে হবে। পুনর্বিবাহ করে ঘরসংসার করতে চাইলে আইনে কোনো বাধা নেই। আর আপনি যদি মনে করেন তা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে বাস্তবতা মেনে নেওয়াই শ্রেয়। আপনি আপনার চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানাননি আপনাদের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়েছে কি না। যদি দুই পক্ষের মধ্যে আইনগতভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তাহলে নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই।

পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।

ই–মেইল ঠিকানা: [email protected]

(সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা

প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন

২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA